somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু আমার চিরকালের

০২ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধু আমার চিরকালের

আমার অন্তরের গহীনে সযত্নে লালিত কিছু কথামালা প্রকাশ করার আগেই মনের আঙ্গিনায় একরাশ কষ্ট জমা হলো। সেই কষ্টটুকু নিংড়ে তার কথাই ভাবছিলাম। কোন এক বিষণ্ন সন্ধ্যায় আমাদের প্রথম পরিচয়। সাগরের তীরে বসে দুজনে সূর্যাস্ত দেখছিলাম। কারো মুখে কোন কথা ছিলনা। এক সময় দুজনের পা ছুঁয়ে ছঁয়ে সাগরের লোনা জলের অকৃত্রিম চপলতা। ভিজেছিলাম দুজনেই। তার পরণে ছিল নীল শাড়ী, আমার পরণে নেভী ব্লু জিন্স। সে ও আমি দুজনেই মুগ্ধ। ধীরে ধীরে আঁধার ঘনিয়ে এলো। অন্য সব রাতের মতই ছিল সেই রাত। তাতে কোন ভিন্নতা ছিলনা। সেই রাতে ছিলনা কোন থৈ থৈ জোছনার হাতছানি। ছিলনা উজ্জ্বল কোন নক্ষত্রের উপস্থিতি। স্বাভাবিক একটা রাতের মতই নেমে এসেছিল সেই রাত। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে শুধু ঢেউয়ের নিরবিচ্ছিন্ন গর্জন।

পরিচয়ের সূত্রটা ছিল গোধূলি লগ্নে তাই দেখতে না দেখতেই আঁধারের ঘোমটায় ঢাকা পরে গেল চারিধার। কণে দেখা আলোয় তার মুখটা ভাল করে দেখতে না দেখতেই আঁধার নেমে এসেছিল। আকাশে একফালি চাঁদ ছিল বটে তবে জোছনার বালাই ছিলনা। জোনাকির সাথে আমার সখ্যতা কোনকালেই ছিলনা। আর থাকলেও তার উজ্জ্বল মুখশ্রীর কাছে জোনাকির বিচ্ছুরিত আলো ম্লান হয়ে যেত, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারিনা। জোনাকিরা সসময় হিংসায় জ্বলে না উঠলেও পৃথিবীর কিছু সভ্য মানুষ অকারণেই জ্বলে উঠেছিল আলো ছাড়াই।

অতঃপর বিষ্ময়ভরা যৌবন আধফোটা কলির মতো আড়মোড়া ভাঙ্গতে না ভাঙ্গতেই কারও বন্ধুত্বের সান্নিধ্য পেতে মন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো। বিচলিত হয়ে উঠলো। মনকে তখন প্রবোধ দিই, বন্ধু সেতো আমারি-আছে, থাকবে। এ’ও জানি একসময় তার মনে আমার প্রতি বিশ্বাস দানা বাঁধবে, কৃত্তিম বিভেদের আবরণগুলো ধীরে ধীরে মুছে যাবে। বন্ধুত্বের হাত সে বাড়িয়ে দিয়েছিল এক সময়। তার প্রথম চিঠি পেয়েছিলাম আমি ঢাকায় ফিরে। অবাক বিষ্ময় নিয়ে পড়েছি তার চিঠি। নিটোল তার বর্ণনার ভাষা। সৌন্দর্যের ডালিতে সাজানো তার শাশ্বত সুন্দর এক একটি কথামালা। আমি মন পেতে শুনেছি তার মনের যত কথা, শুনেছি তার মন থেকে জেগে ওঠা অনুপম বন্ধুত্বের এক নিখাদ অনুরণন।

আমাদের বন্ধুত্বের প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল ফাগুনের কোন এক আগুনঝরা রাতে। শুক্লা পক্ষের আকাশে সেদিন ছিলনা পূর্ণ বিকশিত চাঁদ। লগ্ন কী ছিল জানিনা, তিথি কী ছিল তা’ও মনে নেই। তবে এটুকু জানি মুক্ত প্রকৃতির কোলে ওয়ার্ডস ওর্য়াথের ‘লুসি’ যেমন ফুল হয়ে ফুটেছিল- তেমনি তার মুক্ত মনের অবাক সব কথামালা আমার হৃদয় বাগানে মাধবীলতা হয়ে বিকশিত হয়েছিল। পরতে পরতে ছিল অনুভূতির হাজারো রঙ। ঝলমলে, উজ্জ্বল।

দুটি মন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে একদিন একই আকাঙ্ক্ষায় এমন এক হয়ে যাবে- আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। একই স্বপ্নকে ঘিরে বেড়ে ওঠা দুটো জীবন একদিন একই মোহনায় মিলিত হবে- এমনটা প্রত্যাশা করিনি। বরং ঘুণে ধরা এই সমাজের দুই মেরুতে বসবাস করেও দুটো আত্মা মানবিক কোন টানে কখনোই একবিন্দুতে মিলিত হবেনা এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত। অথচ দুটো আবেগতাড়িত হৃদয় বন্ধুত্বের প্রত্যাশা নিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে হেঁটেছিল, উচ্চারণ করেছিল শাশ্বত সুন্দরের হাজারো শব্দাবলী। মনের ভাবনা ও ইচ্ছেগুলো প্রজাপতির মত ডানা মেলে উড়বে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেই আমাদের কথা শুরু হয়েছিল। সেই শুরু হওয়া কথা আজ হয়তো শুকিয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীর মত গতিহীন, পথহারা। সময়ের ভারে কান্ত, দূরত্ব অতিক্রমে পরিশ্রান্ত। সেই নির্মল বন্ধুত্বের সম্পর্ক আজ হয়তো রূপে কিংবা মাধুর্যে আগের মত তেমন বহমান নয়। বন্ধুত্বের দাবী আর ভালবাসা কী কখনও হৃদয় নামের জলাশয়ে অবিশ্বাসের কচুরীপানায় ভরে যেতে পারে? পারে হয়তো। মন কলুষিত হলেই তা পারে।

মানুষের মাঝে মানবীয় ও মহৎ গুনের পাশাপাশি পাষবিক ও দানবীয় গুনও বর্তমান। স্বার্থের কারণে মানুষ নোংরা হতে পারে, হীন ও জঘন্য কাজ করতে পারে। বাহ্যিক ভদ্রতার খোলসে কদাকার রূপ ধারণ করতে পারে। কারো সরলতাকে পুঁজি করে মানুষ তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। মানুষের এই পরিবর্তন নতুন কিছু নয়, অবিশ্বাস্য কিছু নয়। বন্ধুত্বের নানা চড়াই উৎড়াই পথ পাড়ি দিয়ে নিজে যেমন ঠোকর খেয়েছি, অন্যকেও ঠোকর খেতে দেখেছি। তাই একদিন বন্ধুত্বের সব পথ গুটিয়ে ফেলেছিলাম। হয়তো এভাবেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম। ঠিক তেমনি এক মহেন্দ্র ক্ষণে আমার রুদ্ধ দ্বারে তার সচকিত কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। যে মনে আর বন্ধুতা নয় এমন প্রতীজ্ঞার খিল আঁটা ছিল, সেই মনের রুদ্ধদ্বার খুলতে বাধ্য হলাম। দেখলাম সে আমার সমুখে দাঁড়িয়ে। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমারি দ্বারে। আমার চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছায়া। পারলাম না, তার বন্ধুত্বে সাড়া না দিয়ে পারলাম না। আমার অবসন্ন চেতনার গহীন অন্ধকারে হঠাৎ সূর্যালোকের মতোই তাকে পেয়ে গেলাম। ঠিক তাকে নয়, তার বন্ধুত্বপূর্ণ হৃদয়ের উষ্ণ ছোঁয়াটুকু একান্ত আপন করে পেলাম। সে আমার চিরকালের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু হয়েই রয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:২৯
২৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×