somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাল্কা জ্বরে রান্না ঘরে

০৭ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাল্কা জ্বরে রান্না ঘরে

শুক্রবার। ছুটির দিন। কদিন থেকে জ্বরে ভুগলাম। কদিন মুখটা কেমন বিস্বাদ হয়ে ছিল। কিছুই খেতে ভাল লাগছিলনা। সকাল থেকেই একটু ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম। কারণ গায়ে জ্বর জ্বর ভাবটা তেমন নেই, খুশখুশে কাশিটাও প্রায় বন্ধ। তাই মনে মনে ভাবলাম আজকে নিজের হাতে কিছু রান্না করা যাক। দুই ছেলে বেড়াতে গেছে রাজশাহী। বাসায় বলতে গেলে মানুষ মাত্র দুজন। আমি আর একটা কাজের ছেলে। গিন্নী সারাদিন তার কলেজ নিয়ে ব্যস্ত। সকাল সকাল বের হয়ে যায়, ফিরতে ফিরতে সেই বিকেল। তাই দুপুরে কিছু স্পেশাল খাবার জন্য গিন্নীর উপর নির্ভর করা বোকামি। অবশ্যি আমার বাড়ীর কাছেই “স্টার কাবাব”। কিন্তু আজ আর হোটেলের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না। ছেলেটাকে বললাম আমি একটু বাজারে যাচ্ছি। এসে কিছু রান্না করবো। বাজারে যাবার সময় ছেলেটাকে বলে গেলাম কিছু পেঁয়াজ ও রসুন ছিলে রাখতে।

বাজার বলতে বনানী থেকে গুলশানের “আগোরা”। রিক্সায় যাবার পথে বনানী এগার নম্বর ব্রীজের কাছাকাছি এসে দেখলাম “মীনা বাজার” চেইন শপের ইতিমধ্যে ওপেনিং হয়ে গেছে। রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে মীনা বাজারে ঢুকে পড়লাম। মাথায় তখন চাইনীজ নুডলস্ আর ভেজিটেবল ঘুরপাক খাচ্ছে। শবজি কর্ণারে যেয়ে ইচ্ছেমতো শবজি কিনলাম। শীতের শাক-শবজি এই মৌসুমে অনেক বেশী দাম দিয়ে কিনতে হলো। শখ বলে কথা! যে সব শবজি কিনলাম তার একটা লিস্ট এবং রান্নায় কি পরিমাণ ব্যবহার করলাম মোটামুটি তার কিছুটা ধারণা আপনাদের দিচ্ছি-

১। বাধা কপি - ১ টা’র ৪ ভাগের ১ ভাগ। চিকন স্লাইস ১ কাপ
২। ফুল কপি - সাইজ ছোট ছিল, ১ টা’র ৮ পিস।
৩। গাঁজর - ২ টা চিকন স্লাইস প্রায় ১ কাপ।
৪। বরবটি - ২ ইঞ্চি সাইজ করা ১ কাপ।
৫। কাঁচা পেঁপে - চিকন স্লাইস, ১ কাপ।
৬। মাশরুম - স্লাইস ১ কাপ
৭। বেবী কর্ণ - ৪ টা স্লাইস করা।
৮। বিন স্প্রাউট - ১ কাপ
৯। ক্যাপসিকাম - ১ টা
১০। কলমী শাক - ১ কাপ
১১। পেঁয়াজ কলি - ২ ইঞ্চি করে কাটা, ১ কাপ।

এছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে বাসায় ফিরলাম। এবার নুজলস্ ও ভেজিটেবল রান্নার পালা। বাসায় মেরিডিয়ান নুডলস ও আনুসাঙ্গিক সবকিছু আগে থেকেই কেনা ছিল।

একটা বড় হাঁড়িতে পানি ফুটাতে দিলাম। পানিতে ১ চা চামচ লবণ দিলাম। কাজের ছেলেকে বললাম পেঁয়াজ ছিলতে ও রসুনের কোয়া ছাড়াতে। ৮/১০ টা কাঁচা মরিচ দুই ফালি করে কেটে নিলাম। একটা বাটিতে নীচের আইটেমগুলোর একটা মিশ্রণ তৈরী করে নিলাম।

১। সয়া সস - ২ টেবিল চামচ।
২। ডার্ক সয়া সস - ২ টেবিল চামচ।
৩। হোয়াইট ভিনেগার - ১ টেবিল চামচ
৪। ওইস্টার সস - ১ টেবিল চামচ
৫। সীসমি অয়েল (তিলের তেল) - ২ চা চামচ
৬। চিনি - ১ টেবিল চামচ
৭। ফিশ সস - ২ চা চামচ
৮। কর্ণ ফ্লাওয়ার - ১ চা চামচ আধা কাপ পানিতে গুলানো।

রান্না করার চাইতে রান্নার প্রিপারেশন সবচাইতে বিরক্তিকর কাজ। উপরে বর্ণিত সবগুলো শবজি সাইজ মতো কেটে বা কুচিয়ে নিলাম। শবজিগুলো হাঁড়িতে ফুটানো পানিতে ঢেলে দিলাম হাল্কা সেদ্ধ হবার জন্য। সেদ্ধ হয়ে এলে একটা বড় চালনিতে ছেঁকে নিলাম। সেই ফুটানো পানিতেই ২ চা চামচ সয়াবিন তেল দিয়ে ১ প্যাকেট নুডলস্-এর পুরোটাই বেশ কিছুক্ষণ কড়া আঁচে ফুটিয়ে নিলাম। এরপর নুডলস্ সেদ্ধ হলে চালনিতে ঢেলে ছেঁকে নিলাম। এরপর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে আঠালো ভাবটা কাটিয়ে ঝরঝরে করে নিলাম। ৫/৬টা মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ ৪ টুকরা করে কেটে খোসাগুলো ছাড়িয়ে নিলাম। এরপর ১ টা রসুনের প্রায় সবগুলো কোয়া ছাড়িয়ে কুচিকুচি করে কেটে নিলাম। প্রিপারেশন মোটামুটি শেষ।

প্রথমে শবজি রান্না শুরু করলাম। অল্প আঁচে ননস্টিক প্যানে ২ টেবল্ চামচ বাটার ও ১ টেবল্ চামচ সয়াবিন গরম হলে কাটা পেয়াঁজ ছেড়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে তাতে ফালি করা কাঁচমরিচ দিয়ে দিলাম। এরপর সসের মিশ্রণ অর্ধেক পরিমাণ ঢেলে দিলাম। অল্প কিছুক্ষণ পর তাতে হাফ সেদ্ধ করা শবজির সবটুকুই ঢেলে দিলাম সাথে দিলাম স্লাইস করা ক্যাপসিকাম। ৪/৫ মিনিট কষিয়ে ১ চা চামচ গোল মরিচের গুঁড়া উপর দিয়ে ছিটিয়ে দিলাম। শবজি রান্না প্রায় শেষ। নামানোর আগে প্রায় অর্ধেকটা শবজি নুডলস্-এর জন্য উঠিয়ে রাখলাম। বাকি শবজিতে পানিতে গুলানো কর্ণ ফ্লাওয়ার ঢেলে নাড়তে থাকলাম কিছুক্ষণ। শবজিটা একটু ঘন হয়ে এলে উপরে সামান্য টেস্টিং সল্ট ছিটিয়ে নামিয়ে নিলাম। শবজি রান্না শেষ। আর হ্যাঁ সয়া সস ব্যবহারের কারণে সাধারণ খাবার লবণ না দিলেও চলে তবে যারা লবণ বেশী খান তাদের জন্য অল্প মাত্রায় দিতে পারেন। তবে সয়া সয় ও ডার্ক সয়াসস এমনিতেই নোনতা স্বাদের।


এবার নুডলস্ পর্ব। অপেক্ষাকৃত একটু বেশী আঁচে ননস্টিক প্যানে ২ টেবল্ চামচ বাটার ও ১ টেবল্ চামচ সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে দিলাম। হাল্কা লাল হবার আগেই বাকি সসের মিশ্রণটুকু ঢেলে দিলাম। এরপর নুডলস-এর জন্য রাখা শবজি প্যানে ঢেলে দিলাম। সেই সাথে সেদ্ধ করে রাখা নুডলস ঢেলে ভাল মতো নাড়তে থাকলাম। ৪/৫ মিনিট নাড়ার পর এক চা চামচ পরিমাণ কালো গোলমরিচের গুড়া, এক চা চামচ চিনি ও আধা চা চামচ টেস্টিং সল্ট দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিলাম। অন্য একটা প্যানে এক চা চামচ সয়াবিন তেল ভাল গরম করে তাতে দুটো ডিম ফেটে অমলেটের ভুনা বানিয়ে সেটা নুডলস-এর উপর দিয়ে দিলাম। হাল্কা কষিয়ে নামিয়ে নিলাম। ব্যস্ হয়ে গেল ডিম-মিক্সড্ ভেজিটেবল নুডলস।


এবার আপনারাও ট্রাই করে দেখুন খেতে কেমন লাগে। আমারটাতো দারুন হয়েছিল। তবে আরো কিছু আইটেম নুডলস-এর সাথে আ্যড করতে পারলে আরো বেশী মজাদার হতো। তা হলো মুরগীর গিলা-কলিজা সেদ্ধ করার পর ছোট ছোট টুকরো করে তেলে ভেজে ও সাথে অল্প কিছু চিংড়ি ফ্রাই নুডলস্-এর সাধে মিশিয়ে দিতে পারলে অনেক বেশী মজার হতো। নেক্সট টাইম মাথায় রইলো। আজ এ পর্যন্তই। জ্বর মুখে খাবার স্বাদটা বিস্বাদ মনে হয়নি। আর রান্নায় ব্যস্ত থাকায় জ্বর পুরোপুরি গায়েব।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:২৬
৩০টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×