somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বালক রাজা তুতেনখামেন

১০ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তুতেনখামেন (Tutankhamun), সম্ভবত মিশরের সবচেয়ে আলোচিত ফারাওদের একজন। তুতেনখামেন জন্মেছিলেন প্রায় ৩৩০০ বছর আগে, ১৩৪১ খ্রীষ্ট-পূর্বে। তুতেনখামেনের বাবা ছিলেন আখেনাতেন (Akhenaten)। কিন্তু মা কে ছিলেন, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। আখেনাতেন এর প্রধান স্ত্রী ছিলেন নেফারতিতি (Nefertiti), কিন্তু তিনি সম্ভবত তুতেনখামেন এর মা ছিলেন না। ধারণা করা হয়ে থাকে আখেনাতেন এর অন্য আরেক স্ত্রী কিয়া'র (Kiya) গর্ভে তুতেনখামেনের জন্ম হয়। আখেনাতেন এর রাজত্ব কালে মিশরের রাজধানী থিবেসের (বর্তমান লুক্সর) উত্তর প্রান্তে সরিয়ে নেয়া হয়। থিবেসের রাজ প্রাসাদেই তুতেনখামেন বেড়ে উঠেন। সে সময় তাকে যুদ্ধবিদ্যা- অস্ত্রচালনা-লেখপড়া সহ নানান দীক্ষায় দীক্ষিত করা হয়।

তার আসল নাম ছিলো তুতেনখাতেন (Tutankhaten), যার অর্থ হলো "আতেন এর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি"। মিশরীয়রা দেবতা "আমেন"(Amun) এর উপাসক ছিলো, সেই সময় রীতি অনুযায়ী রাজ বংশের সদস্যদের নামের সাথে দেবতাদের নাম যুক্ত করার প্রচলন ছিলো। আখেনাতেন সিংহাসনে বসার পর "আমেন" এর পরিবর্তে "আতেন" (Aten) এর উপাসনা শুরু করেন। সে জন্য তার নাম রাখা হয় তুতেনখাতেন। কিন্তু তুতেনখামেন ক্ষমতায় বসে আবারও আমেন এর উপাসনা চালু করেন এবং তার নাম পাল্টে তুতেনখামেন বা "আমেন এর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি" রাখেন।


নেফারতিতির কোন ছেলে না থাকায়, আখেনাতেনের মৃত্যুর পর ১৩৩৩ খ্রীষ্ট-পূর্বে মাত্র ৯ বছর ব্য়সে সিংহাসনে বসেন তুতেনখামেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তার বোন, নেফারতিতি ও আখেনাতেনের মেয়ে আঁখসেনামুনকে (Ankhesenamun) বিয়ে করেন।এই বালক বয়সে তার পক্ষে রাজত্ব সামলানো সম্ভব ছিলো না। ধারণা করা হয় আই (Ay, সম্ভবত নেফারতিতির বাবা) এবং সেনা প্রধান হোমারহেব (Horemheb) তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন। সম্ভবত এই দু'জনের সিদ্ধান্তেই তুতেনখামেন আবারও আমেনের উপাসনা চালু করেন।

তিনি 18th Dynasty'র দ্বাদশ ফারাও ছিলেন, সেই সময়টা মিশরীয় ইতিহাসে নতুন রাজত্ব বা New Kingdom নামে পরিচিত। তার রাজত্বকাল ছিলো মাত্র নয় বছরের। সিংহাসনে আরোহনের নবম বছর, ১৩২৫ খ্রীষ্ট-পূর্বে (কারও কারও মতে ১৩২৩) আকস্মিকভাবে এই বালক ফারাও মৃত্যু বরণ করেন।



যথারীতি তার মৃত্যুর কারণ নিয়েও প্রচুর বিতর্ক আছে। অনেকেরই ধারনা তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। এক্ষেত্রে সন্দেহের আঙ্গুলটা তার দুই উপদেষ্টার দিকেই যায়। কারণ, তার কোন জীবিত উত্তরাধিকারী না থাকায় নতুন ফারাও নির্বাচনে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং এই সুযোগে আই, আঁখসেনামুনকে বিয়ে করে ক্ষমতা দখল করেন। এর কিছুদিন পর হোমারহেব আইকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেই ফারাও হয়ে সিংহাসনে আরোহন করেন। তুতেনখামেনের রাজত্বকালের তেমন কোন নিদর্শন না পাওয়ার কারন হিসেবে ইতিহাসবিদরা হোমারহেবকে দায়ী করেন। তাদের ধারনা, হোমারহেব ক্ষমতায় এসে তুতেনখামেনে বানানো সব স্থাপনা নষ্ট করে ফেলেন।


তার মমির সিটি স্ক্যানে দেখা যায় যে মৃত্যুর আগে তার পা ভেঙ্গে গিয়েছিলো আর ২০১০ সালে DNA অ্যানালাইসিসে শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া যায়। এখন ধারনা করা হচ্ছে, এই দুইয়ের সম্মিলিত আক্রমণেই তিনি মারা যান। আবার অনেকের মতে, ঘোড়ায় টানা রথের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।


২০০৫ এর জানুযারীতে, Egyptian Supreme Council of Antiquities তুতেনখামেনের মমি CAT স্ক্যান করার জন্য অল্প সময়ের জন্য সমাধি থেকে বাইরে নিয়ে আসে। স্ক্যানে তার মাথায় আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি। স্ক্যানের ফলাফল অনুযায়ী তার গড়ন ছিলো মাঝারী এবং উচ্চতা ছিলো ১৬৮ সেন্টি মিটার বা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।



তুতেনখামেনের সমাধি



১৯২২ এর নভেম্বরে হাওয়ার্ড কার্টার, ভ্যালি অফ দ্যা কিংস এ তুতেনখামেনের সমাধি খুঁজে পান। তবে তুতেনখামেনের সমাধি একজন ফারাও এর সমাধির তুলনায় অনেক সাদামাটা ছিলো। ধারনা করা হয়, তার আকস্মিক মৃত্যুর পর তাড়াহুড়া করে অন্য কারও জন্য বানানো কবরে তাকে সমাহিত করা হয়।



আর সব প্রাচীন সমাধির মতো এখানেও, সমাধির শান্তি বিনষ্টকারীদের জন্য বেশ কিছু অভিশাপ বার্তা পাওয়া যায়।যার মধ্যে একটি ছিলো অনেকটা এরকম:
"যারা এই পবিত্র সমাধিতে প্রবেশ করবে, মৃত্যু খুব দ্রুত তাদের গ্রাস করবে।"
হ্য়তো এই অভিশাপেই সমাধি আবিষ্কারের সাত সপ্তাহ পরে এই অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, লর্ড কারনাভন কায়রোতে মারা যান। অবাক হবার মতো ব্যপার হলো, একই সময়ে ইংল্যান্ডে, তার পোষা কুকুরটিও মারা যায়!!!



সমাধিতে পাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ধন-সম্পদ:



স্বর্ণ খচিত বিছানা।




কফিন।



অলংকার।



মুখোশ।


চেয়ার।


সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা তুতেনখামেনের চেহারা পূনর্নিমানের চেষ্টা করেছেন, তার কিছু নমুনা:



ফ্রান্স।



ইংল্যান্ড।


মিশর।


সমাধিতে পাওয়া কাঠের আবক্ষ মূর্তি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×