somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্ডিস আক্রান্ত সাংবাদিকতা-১

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহমুদা ডলি নাম্নী এই সাংবাদিক বেশ রগরগে করেই শিরোনামটি লিখেছেন, “ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণের প্রতিকৃতি ব্লগার রাজীব : হত্যাকাণ্ডের রাতে তানজিলা ছিল রাজীবের বাসায়”__ এমন করে লিখলেই বোধহয় মানুষের ধর্মানুভূতিতে একটু বেশী করে সুড়সুড়ি দেয়া যায়। রাজীবদেরকে দুশ্চরিত্র খলনায়ক বানানো যায়। আসুন আমরা শিরোনামের এই প্রত্যয়গুলো থেকে আলোচনা শুরু করি। প্রথম প্রত্যয় ‘ধর্মদ্রোহী’, যার অর্থ দাড়ায় ধর্মের বিরুদ্ধে দ্রোহ করেছে এমন। আমরা যদি ইসলাম ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখা যাবে ইব্রাহীম-মুসা-ঈসা থেকে মোহাম্মদ প্রায় সকল পয়গম্বরই কিন্তু ধর্মদ্রোহী ছিলেন। তারা সমকালে স্বধর্ম ত্যাগ করে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে ‘কাইজ্জা-ফ্যাসাদ’ করেই কিন্তু নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন! স্বধর্ম ত্যাগ করে নতুন কোন মতবাদ প্রচার-প্রসার করতে হলে তাঁকে বিদ্রোহী হতেই হবে, ধর্মের ইতিহাস তাই বলে। এখন তো আর ঢাল-তলোয়ার নেই, আজকের ধর্মদ্রোহীদের হাতিয়ার হচ্ছে কি-বোর্ড। এটা মানুষ কাটার বর্বরতার মত ধারালো না হলেও, এটা দিয়ে সমাজ-সভ্যতার মজ্জাগত অন্ধকারকে আঘাত করা যায় তীব্র-তীক্ষ্ণভাবে। যেটা এযুগের ধর্মদ্রোহীরা, ধর্ম-ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল এবং করছে। এখন কথা হচ্ছে মান্ধাতার আমলের ধর্মপ্রচারকদের রক্তমাখা ঢাল-তলোয়ার যদি শান্তির প্রতিক হয়, তবে রাজীবদের রক্তপাতহীন কি-বোর্ডের ক্ষেত্রে কেন তা ব্যতিক্রম হবে? পয়গম্বরা, যারা পিতৃধর্মদ্রোহী ছিল, তারা যদি কালান্তরে লোকান্তরে গিয়েও ইতিহাসের পূজিত মহানায়ক হতে পারে, তবে একালের ভিন্নমতের প্রচারকরা ঘৃণিত খলনায়ক কেন হবে? মাহমুদুর রহমানের ফ্যাসিবাদের ‘প্যানপ্যানানি’ এখানে কেন বিমূর্ত সেটাও জানা দরকার! এবার আসা যাক ‘নষ্ট তরুণ’ প্রত্যয়ে, বিষয়টি আরও একটু পরিস্কার হতে আমরা শিরোনামের বাকি অংশে আলোকপাত করতে পারি। ‘হত্যাকাণ্ডের রাতে তানজিলা ছিল রাজীবের বাসায়’ এমন বাক্য থেকে সহজেই অনুমেয় ‘তানজিলা’ নাম্নী নারীটির সাথে রাজীবের একটা বিশেষ ‘সম্পর্ক’ ছিল! কি সেই সম্পর্ক? সেটা ভাই-বোনের সম্পর্ক হতে পারে, বন্ধুত্বের সম্পর্কও হতে পারে। লেখক এসবের তোয়াক্কা না করে লেখাটির মূল অংশে এটাকে ‘পরকীয়া’ হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। রাতে কিংবা দিনে মেয়েদের ছেলে বন্ধুদের বাড়িতে যাওয়া-আসা হারাম, লেখক সম্ভবত এমন সনাতনী পাড়াগাঁয়ের চিন্তা-চেতনার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আধুনিক হতে পারেননি এখনও। অথবা তার সময়ে পরিবেশ-প্রতিবেশে একটা ছেলে কিংবা একটা মেয়ে একত্রে নির্জনে কোথাও__ মানে সেখানে একটা ‘কিন্তু’! আধুনিক বুদ্ধিভিত্তিক শহুরে সমাজে মানুষ ব্যক্তিমর্যাদার প্রতি অনেক বেশী সচেতন ও সম্পর্কগুলোর প্রতি অনেক বেশী শ্রদ্ধাশীল। এখানে ছেলে-মেয়ে একসাথে থাকা মানেই সবক্ষেত্রে কুসংস্কার আবৃত সেই ‘কিন্তু’ নয়। তারপরও লেখকের উপর শ্রদ্ধা রেখে ধরেই নিলাম রাজীব-তানজিলা সম্পর্কটি ছিল পরকীয়া! এই পরকীয়া ব্যাপারটি আমাদের ভুগলে ‘ধর্মদ্রোহী’রা ভূমিষ্ঠ করেছেন বলে আমার জানা নেই। লেখকের জানা থাকলে রেফারেন্স দিতে পারেন। রাধা-কৃষ্ণের প্রাগৈতিহাসিক পুরাণ কিন্তু আমাদের সমাজের মজ্জাগত; যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি সাধনে মোবাইল-ইন্টারনেটের কল্যাণে যা প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে এখন। আজকাল তো পাড়ায় মহল্লায় পি-মাসে একটি করে পরকীয়ার কাহিনী ‘ফয়দা’ না হলে চায়ের দোকানগুলোর আলোচনায় কড়া লিকার পাওয়া যায় না। পত্রিকা-অলারাও পরকীয়া প্রেমোপাখ্যানগুলো ফ্রন্ট পেজে দিয়ে বিশেষ সুবিধে পায়, কাটতি বাড়ে! নিন্দুকেরা সেই জাহেলিয়া জামানায়ও ধর্মপুরুষদের বিরদ্ধে পরকীয়া প্রেমের ধুঁয়া তুলেছিল, আমরা সেসব আমলে না নিয়ে একালের এক প্রখ্যাত আলেমের কথা বিবেচনায় আনতে পারি। আগে-পিছে বহুলখেতাব-অলা এই আলেম যুদ্ধাপরাদের অভিযোগে বর্তমানে বিচারাধীন আছেন। সম্প্রতি নাতনী সম্পর্কের এক মেয়ের সাথে এই বৃদ্ধ আলেমের ‘রস’ আলাপের অনেক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে বেশকিছু অডিও ক্লিপ ছেড়েছে ‘বাংলালিক’ নামের একটি সংগঠন। আগ্রহীরা এখান (Click This Link ) থেকে শুনতে পারেন। ইতিমধ্যে অডিও ক্লিপগুলো অভ্রান্ততা প্রমাণে ১ কোটি ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন পর্যন্ত এই অডিওগুলো ভ্রান্ত প্রমাণ করা যায়নি এবং উক্ত আলেমের পক্ষ থেকেও কোন মানহানির মামলাও করা হয়নি। তাই স্বভাবতই ধরে নেয়া যায়, ঐ অডিও ক্লিপগুলো অভ্রান্ত। অডিও ক্লিপগুলো প্রকাশ হয়েছে বেশ কিছু দিন হয়ে গেল, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার দেশ পত্রিকাটি ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। ব্যাপারটি সত্যি বিস্ময়কর! ইসলামের একনিষ্ঠ খাদেম জনাব মাহমুদুর রহমান, ইসলামের এই বিশিষ্ট আলেমের এমন সর্বনাশে এখনও চুপ কেন বোঝা যাচ্ছে না। তিনি সম্ভবত বিস্ময়ে বলার ভাষা হারিয়ে পেলেছেন! এখন কথা হচ্ছে, ধর্মভীরু একজন ফরহেজগার আলেম যখন পরকীয়ার মত্ত হয়ে কোমলমতি ময়নাপাখী-টিয়াপাখীদের চেয়ার কিংবা টেবিলে ‘ভোগে’ দেন, তখন কেন এইসব বুড়োবাড়দের উপর ‘নষ্ট আলেম’ অথবা ‘নষ্ট বুড়ো’ প্রত্যয় আরোপ করা হয়না? অথচ যখন দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারী কোন মানবিক সম্পর্কের সূত্রে নির্জনে কোথাও, তখনি বুঝি একটা ‘কিন্তু’, পরকীয়া আর ‘নষ্ট তরুণ’এর শিলমোহর সেটে দেয়া হয়। লেখক বিস্তারিত অংশে কোন অডিও বা ভিডিও ক্লিপের চাক্ষুষ প্রমাণ ছাড়াই পাড়া-প্রতিবেশী ও কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনের জবানবন্দীর ভিত্তিতে ইতোমধ্যে রাজীব-তানজিলার সম্পর্কটিকে পরকীয়া সাব্যস্ত করেই পেলেছেন। যাক ভালো কথা, এখন প্রশ্ন হল__ ‘পরকীয়া’ দোষেদুষ্ট রাজীবকে যদি ‘নষ্ট’ ট্যাগ দেয়া হয়, তবে ঐ বিশিষ্ট আলেমকে কেন ‘নষ্ট’দের তালিকাভুক্ত করা হবে না? পরকীয়ার দায়ে যদি রাজীবকে ‘নষ্ট তরুণের প্রতিকৃতি’ বিবেচনা করা হয়, তবে আলেমের ক্ষেত্রে কেন নয়? রাজীবের মত এই সামান্য ধর্মহীনের জন্য যদি ফিচার হতে পারে, তবে বাংলাদেশের এই বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদের এত বড় ইজ্জতহানীতে (স্ক্যান্ডেল) আমার দেশ পত্রিকায় কেন ফিচার হবে না?
লেখকের প্রতি আমার ছোট্ট একটা অনুরোধ, আপনি যদি আপনার আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তবে বাংলাদেশের এই ‘নষ্ট আলেম’দের নিয়েও লিখুন। শুনেছি, সাংবাদিকরাই জাতির বিবেকের দর্পণ। সেই দর্পণে যদি এক অংশই কেবল আলোকিত করা হয়, তবে অন্য অংশ তো অন্ধকারই থেকে যাবে আজন্ম। তাই বিবেকের তাড়না থেকেই লিখুন, নষ্টদের হাত থেকে জাতীয় ময়না-টিয়াদের রক্ষা করার দায়িত্ব তো আপনাদের, তাই না। তাছাড়া সৎসাহসের একটা ব্যাপার আছে! দেখি আপনার হিম্মৎ...

(চলবে)

ফিচারটির লিঙ্কঃ Click This Link

১৯/০২/২০১৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×