somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সমীক্ষা (আল কুরআনুল কারীমের এক অনুবাদের উপর আলোচনা করা হচ্ছে।)

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রকাশিত অনুবাদের শিরনাম: আল কুরআনুল কারীম
সংক্ষিপ্ত তাফসীর সহ বাংলা অনুবাদ
দু খন্ডে সমাপ্ত। প্রথম খন্ডে সূরা ফাতিহা থেকে সূরা কাহ্ফ পর্যন্ত। দ্বিতীয় খন্ডে সূরা মারইয়াম থেকে নাস পর্যন্ত।

মূল: মাওলানা ফরমান আলী সাহেব কর্তৃক উর্দু অনুবাদ

বাংলা অনুবাদ: মাওলানা শেখ ছাবের রেজা

সম্পাদনা ও পুনর্লিখন: মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর

প্রকাশক: ঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে
নুরুস সাকালায়েন জনকল্যাণ সংস্থা
৫/১, গোলাম মোস্তফা লেইন, বেগম বাজার, ঢাকা

প্রকাশকাল: জমাদিউস সানী ১৪৩২
জুন ২০১১, আষাঢ় ১৪১৮

প্রাপ্তি স্থান: প্রযত্নে হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ রাশেদ হোসেন যায়দী
হোসেনী দালান, ঢাকা, বাংলাদেশ
মোবাইল নং ০০৮৮০২৭৩০০০২৬

মুদ্রণ: মাল্টি লিংক প্রিন্টার্স
৬৮, ফকিরাপুল, ইসলাম ভবন (২য় তলা)
ঢাকা-১০০০, ফোন: ৯৩৪৮০৪৭


আলোচনা:

১) উর্দু অনুবাদক মাওলানা ফরমান আলী সাহেব, বাংলা অনুবাদক মাওলানা শেখ ছাবের রেজা সাহেব এবং সম্পাদক ও পুনর্লিখক জনাব মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীরকে যথার্থভাবে পরিচিত না করানো:

সম্পাদক মহোদয় একটা ভূমিকা লিখেছেন। সেখানে তিনি উর্দু অনুবাদক মাওলানা ফরমান আলী ও বাংলা অনুবাদক মাওলানা শেখ ছাবের রেজা সাহেবের একটা সংক্ষিত কিন্তু সঠিক পরিচিতি তুলে ধরতে পারতেন। সম্পাদক মহোদয় এ বিষয়ে কার্পন্য করে উর্দু অনুবাদ সম্পর্কে মাত্র একটা বাক্য বলেছেন, ‘‘এ কাজে মাওলানা ফরমান আলী সাহেবের বিখ্যাত উর্দু অনুবাদকে অনুসরন করা হয়েছে।’’ পাকিস্তান বা পশ্চিম বঙ্গে মাওলানা ফরমান আলী সাহেব বিশেষ প্রসিদ্ধ হতে পারেন কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি ততটা পরিচিত নন। তার অনেক কারণ থাকতে পারে। সেগুলোকে মাথায় রেখেই মাওলানা ফরমান আলী সাহেবকে একটু পরিচিত করানোর দরকার ছিল বলে আমি মনে করি। যেখানে বাংলার মানুষ মাওলানাকে চিনেন না সেখানে অবহিত করণ ব্যতিত প্রসিদ্ধ উর্দু অনুবাদ এর প্রভাব পাঠকের উপর পড়বে না বা পড়লেও কম পড়বে।
বাংলা অনুবাদক সম্পর্কে সম্পাদক মহোদয় একটি শব্দও লেখেন নাই। এমন কি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন নাই। এটা আমার কাছে বড়ই অবিচার মনে হয়েছে। উর্দু অনুবাদক মাওলানা ফরমান আলী সাহেবের মতই বাংলা অনুবাদক মাওলানা শেখ ছাবের রেজা সাহেব বাংলাদেশের মানুষের কাছে অপরিচিত। পাঠকবর্গ তার পরিচয় জানার হকদার। সম্পাদক মহোদয় এ কাজে যথার্থ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

প্রকাশনা কর্তৃপক্ষও এ কাজটি করতে পারতেন। প্রকাশনা কর্তৃপক্ষ আরও একটা কাজ করতে পারতেন যা সচারাচার সকল প্রকাশক করে থাকেন। আর তা হলো একটা ভূমিকা দিয়ে সম্পাদক জনাব মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর এর একটা পরিচয় তুলে ধরতে পারতেন। বাংলাদেশ হতে ইরানের কোম নগরীতে যত ছাত্র অধ্যয়ন করেছেন বা করছেন তাদের মধ্যে জনাব মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতের দু জনের একজন। অন্য জন হলেন জনাব মুনীর হোসেন খান যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফার্মাসীতে স্নাতক সম্মান সহ মাস্টার্স করে ধর্মীয় পড়াশোনার জন্যে ইরান গিয়েছেন। আর জনাব মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি এজি অনার্সসহ মাস্টারস করে ধর্মীয় পড়াশোনার জন্যে ইরান গিয়েছেন। জনাব মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর সম্পাদনায় এতই পারদর্শী হয়েছেন যে ইরান থেকে বাংলায় যে সব বই প্রকাশিত হচ্ছে তার অধিকাংশই তার সম্পাদনায় বের হচ্ছে। বলা যায় তিনি ইরানী বইয়ের বাংলা অনুবাদের সম্পাদনা গেট ওয়ে।

সম্পাদক বা প্রকাশক একাজটি ভালোভাবে করতে পারেন নি। এ কাজগুলো করা কোন অবৈধ বিজ্ঞাপন জারী করা নয় বরং প্রকাশনার মান সম্পর্কে এ একটা জোরালো দলিল হিসাবে কাজ করে। সম্পাদকের ভূমিকায় দেখা যায় এ অনুবাদ কাজের জন্য একটা প্রকল্প করা হয়েছে। এ প্রকল্পের বিনিয়োগকৃত অর্থ পুন:উদ্ধারের কোন পরিকল্পনা ছিল কি না জানি না। প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা বা দায়বদ্ধতা না থাকলে অনেক সময় কাজ দায়সারা গোছের হয়ে থাকে। ব্যক্তিকর্তৃক বিনিয়োগ হলে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা থাকলে প্রকাশক ও সম্পাদক উভয়ে বেশী সতর্ক থাকেন। এখানে এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

২) টিকায় প্রকাশিত মতামত কার তা স্পষ্ট নয়।

বাংলা অনুবাদের নীচে পাতায় পাতায় টিকা দেওয় হয়েছে। সম্পাদক মহোদত্তার ভূমিকায় বলেছেন, ‘‘এ অনুবাদের সাথে আহলে বাইতের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক আয়াতের ক্ষেত্রে টিকা সংযোজন করা হয়েছে।’’ কিন্তু সম্পাদক মহোদয় উল্লেখ করেন নি যে ঐ টিকাগুলি কি মূল উর্দু অনুবাদক মাওলানা ফরমান আলী সাহেবের না বাংলা অনুবাদক মাওলানা শেখ ছাবের রেজা সাহেবের না সম্পাদক মহোদয়ের নিজের। এখন ধরে নেয়া যেতে পারে সব টিকাই মূল উর্দু অনুবাদক মাওলানা ফরমান আলী সাহেবের এবং বাংলা অনুবাদক মাওলানা শেখ ছাবের রেজা সাহেব বা সম্পাদক মহোদয় নিজে কোন টিকা সংযোজন করেন নি। যা হোক টিকা দানকারীর ভিন্নতা থাকলে ভূমিকায় বা স্ব স্ব টিকার স্থানে তা উল্লেখ করলে ভালো হতো। মাঝে মাঝে টিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে অনুবাদকগণ প্রচলিত নীতি অনুসরণ করায় অনুবাদকর্মটি ভুল হয়ে থাকে। সেখানে এ সম্পাদক মহোদয় কর্তৃক সম্পাদিত এ অনুবাদটিই সঠিক বলা হয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে কোন রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়নি। তাতে মনে হচ্ছে এতদিন পরে মাওলানা ফরমান আলী বা মাওলানা শেখ ছাবের রেজা বা জনাব মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর মহোদয় বিষয়টি নতুনভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন (এভাবে বলা হলো কারণ টিকাটি কে দিয়েছেন তার উল্লেখ নেই)।
উদাহরণ-১: সূরা ফাতিহার ৬ নং আয়াতে দেয় টিকা নং ৪ (প্রথম খন্ডের ১ নং পৃষ্ঠা)। টিকায় বলা হচ্ছে, ‘‘হেদায়াতের অর্থ দু’টি: (ক) পথ প্রদর্শন (খ) গন্তব্যস্থল অবধি পৌছানো। অনুবাদকগণ সাধারনত এক্ষেত্রে প্রথম অর্থই গ্রহণ করেন। কিন্তু সত্য এটাই যে, এ স্থলে উক্ত দু’টি অর্থের কোনটিই সঠিক নয়। কারণ, যদি প্রথম অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং এরূপে বলা হয় যে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে সরল পথ দেখাও’, তাহলে বোধগম্য হয় যে, এর পাঠক এখনও সরল পথ থেকে বহু দূরে আছে, পৌছানো তো দূরের ব্যাপার। এখনও সে সরল পথের সন্ধান পায়নি। আর যদি দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং বলা হয় যে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে সরল পথ অবধি পৌছে দাও’, তবুও একই ত্রুটি দেখা দিবে। তাছাড়া সরল পথের উদ্দেশ্য অবশ্যই ঈমান ও ইসলাম। সুতরাং পাঠক যখন মু’মিন, তখন ঈমান লাভের পর তা প্রার্থনা করা নিরর্থক- যা অসম্ভব। এ কারণে উভয় অর্থ পরিহার করে এ অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।’’ এ মতটির সমর্থনে কোরআন, হাদিস বা কোনো তাফসীরকারকের বর্ণনা সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটা কার মত তা বুঝা যাচ্ছে না।
উদাহরণ-২: সূরা বাকার’র ২৬ নং আয়াতে দেয় টিকা নং ২ (প্রথম খন্ডের ৭ নং পৃষ্ঠা)। ২ নং টিকায় বলা হচ্ছে, ‘‘সাধারনত অনুবাদকগণ ‘ইউযিল্লু’ শব্দের তরজমা (অনুবাদ) করেছেন ‘পথভ্রষ্ট করেন’। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এমন অনুবাদ ভুল ও অসম্ভব। কেননা, যদি তিনিই স্বয়ং পথভ্রষ্ট করেন, তাহলে কেমন করে শাস্তি দিবেন? আসলে ঐ অনুবাদকগণ শুধু বাহ্যিক শব্দ দেখে অনুবাদ করেছেন। আর যেহেতু তারা আল্লাহর অতি উচ্চ মর্যাদাবান (ন্যায়পরায়ণ) হওয়ার বৈশিষ্ট্যের দিকে দৃষ্টিপাত করেননি, তাই এ ভুলের শিকার হযেছেন। এখানে এর অর্থ ছেড়ে দেওয়া অর্থাৎ তাদের নিজ (ভ্রষ্টতার) অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন। আর একারণে সাধারণ তরজমা থেকে সরে এসে এ তরজমা করা হয়েছে।’’ এখানেও সূত্রের উল্লেখ নেই। যেসব ক্ষেত্রে একাধিক রকম মত ব্যক্ত হয় সেব ক্ষেত্রে নিজমতের সমর্থনে রেফারেন্স থাকা আবশ্যক।

এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে।
(ক্রমশ)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×