আজ প্রায় ৫ বছর পর তুবাকে দেখলাম।আগের থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে ওর মাঝে।আগের থেকে অবশ্য এখন অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।কে যেনো বলেছিলো বিয়ের পর কিছু মেয়ে নাকি পূর্বের তুলনায় সুন্দর হয়ে যায়।মনে মনে হাসলাম।
"আব্বু"
চমকে উঠলাম ডাকটা শুনে।ডান হাতের আঙুল ধরে কেউ টানছে।তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাশে।বেশ মায়াবী একটা চেহারা।মুচকি হেসে মেয়েটার সামনে বসলাম।
"আম্মু,আমি তো তোমার আব্বু নই।"
"নাহ,তুমিই আমার আব্বু।"
"আম্মু,তোমার ভুল হচ্ছে।আমি তোমার আব্বু নই।"
"কিন্তু মাম্মি বলেছে তুমিই আমার আব্বু।"
ভালোই বিপদে পড়া গেলো।এই মেয়েকে কেমনে বুঝাই আমি তো এখনই বিয়ে করি নি,বাচ্চা আসবে কোথা থেকে!
"তোমার নাম কি আম্মু?"
"ফারিয়া।"
নামটা বুকের মধ্যে গিয়ে যেনো হাতুড়ির বাড়ি দিলো।ধূর!কিসব ভাবছি।দুনিয়াতে কি ফারিয়া নাম একজনেরই হয় নাকি!
"তোমার আম্মু কোথায়?"
ফারিয়া আঙুল তুলে ঈশারা করলো।সেই বরাবর তাকিয়ে থমকে গেলাম।ফারিয়া তুবার দিকে ঈশারা করেছে।তুবার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেলাম।তুবাও তাকিয়ে আছে আমারর দিকে।
"আম্মু চলো,তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও।আম্মু ডাকছে।"
"আম্মু বলেছে, আব্বুকে সাথে নিয়ে যেতে।"
তুবা কেনো তার মেয়েকে আমাকে বাবা ডাকার জন্যে বলে দিয়েছে কিছুই বুঝলাম না।
"আচ্ছা চলো।"
"আমাকে কোলে নাও।"
অগ্যতা কি আর করার!ফারিয়াকে কোলে নিয়ে তুবার সামনে গেলাম।ফারিয়াকে একটা চেয়ারে বসিয়ে আমি তুবার সামনে বসলাম।তুবাই প্রথম কথা শুরু করলো।
"কেমন আছো সাঈদ?"
"আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?"
"হুম ভালো।"
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে তুবাই আবার শুরু করলো।
"শুনলাম,বিয়ে করো নি এখনো।"
একটু অবাক হলাম।তুবার সাথে ব্রেক আপের পর আমি আমার সব নাম্বার,ফেসবুক আইডি চেঞ্জ করে ফেলেছিলাম।তুবার পরিচিত যারা আমার আগের আইডিতে ছিলো তাদের কারো সাথেই যোগাযোগ রাখি নি।সম্পূর্ণ আড়ালে চলে গিয়েছিলাম।তুবা জানলো কি করে যে আমি এখনো বিয়ে করি নি!
"পাত্রী দেখা হচ্ছে।পছন্দ হলেই বিয়ে করে ফেলবো।"
"পছন্দ করতে পারবে?"
কোন উত্তর দিতে পারলাম না একথার।বাসায় আমার জন্যে মেয়ে দেখা হচ্ছে ঠিকই।কিন্তু আমিই কোন মেয়ে পছন্দ করছি না ইচ্ছে করেই।যার ছবিই দেখতে যাই না কেনো তুবার ছবি ভেসে ওঠে।এতো বছর পরেও আমি তুবার সেই চেহারা ভুলতে পারি নি।
"পারবো না কেনো?একটা মেয়ে মোটামোটি পছন্দ হয়েছে।"
"কেনো মিথ্যে বলছো?"
"কই মিথ্যে বললাম!"
"সাঈদ,তুমি হয়তো ভুলে গেছো তুমি যখন মিথ্যে বলো তখন তোমার ঠোট কাপতো।"
আবারো চুপ করে গেলাম।তুবা তাহলে কিছুই ভুলে নি!
"যাই হোক।আমার মেয়েকে কেমন লাগলো তোমার?"
"হুম,অনেক কিউট আর লক্ষ্মী।"
"জানতে চাইলে না ও তোমাকে কেনো বাবা বলে ডেকেছে?"
"তুমি শিখিয়ে দিয়েছো হয়তো মজা করার জন্যে।তোমার পুরোনো অভ্যেস।তুমি তোমার বান্ধবীদেরকে আমাকে ফোন দিয়ে মজা নিতে ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই।"
"তোমার কি তাই মনে হয়?"
"নয়তো আর কি?"
"কিন্তু আমি যদি বলি ফারিয়া জন্মের পর থেকে তার বাবা হিসেবে তোমাকেই মেনে এসেছে,তুমি অবাক হবে তাই না?"
অবাক আমি হয়েছিও।তুবার কথার মানে আমার মাথায় ধরছে না।
"বুঝলাম না।"
"আমার বিয়ে হয়েছে কবে তা তো জানোই।সংসার ভালো চললেও আমার মনে শান্তি ছিলো না।তোমার সাথে যখন আমি ব্রেক আপ করি তারপর থেকেই আমার মনে আমি কখনই শান্তি পাই নি।নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হতো।অনেক চেষ্টা করেছি তোমার সাথে যোগাযোগ করে ক্ষমা চাবো বলে।কিন্তু তুমি যোগাযোগের কোন সুযোগই রাখো নি।"
"আমি তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি।"
"হয়তো।যাই হোক,ফারিয়ার তখন ৪ মাস চলছে গর্ভে।একদিন দুপুরে হটাৎ রাতুলের ব্রেইন স্ট্রোক হয়।হসপিটালে নিতে দেরি হয়ে যায় অনেক।ততক্ষণে..."
রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নিলো তুবা।আমার নিজেরও খারাপ লাগছে।
"মূহুর্তের মাঝে আমার পুরো পৃথিবী আধার হয়ে গেলো।বারবার মনে হচ্ছিলো এসব তোমাকে কষ্ট দেয়ার কারণেই হয়েছে।তখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি আমার মেয়েকে তার বাবা বলে পরিচয় দেবো তোমাকে।যদি কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত হয়।তোমার সাথে কখনো দেখা হবে না ধরেই নিয়েছিলাম।জানোই তো পৃথিবী গোল।আবার দেখা হয়ে গেলো আমাদের।"
"আমাকে এসব বলছো কেনো?আমি তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি।মনের মধ্যে কোন ধরনের ঘৃণা রাখি নি তোমার প্রতি।"
"সাঈদ,আজ একটা রিকুয়েস্ট করবো তোমার কাছে।রাখবে?"
"কি রিকুয়েস্ট?"
"তুমি ফারিয়ার সত্যিকার বাবা হবে?"
চমকে উঠলাম তুবার কথায়।ফারিয়ার দিকে তাকালাম।মেয়েটা দুহাত গালে ঠেকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তুবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ ছলছল করছে।হটাৎ ফারিয়া চেয়ার থেকে উঠে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
"আব্বু,আমি তোমার কোলে উঠবো।"
মন দোটানায় পড়ে গেছে।যে ভালোবাসা একবার দূরে সরে গিয়েছিলো সেই ভালোবাসাই দড়জায় করা নাড়ছে।
ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওকে কোলে তুলে নিলাম।ছোট্ট করে একটা চুমু খেলাম ওর গালে।ফারিয়া আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
তুবার দিকে তাকালাম।খুশির আলোকচ্ছটা দেখতে পাচ্ছি ওর ছলছল করা চেহারায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৩