সংস্কৃতি আর ক্রেজ এক জিনিস না, পহেলা বৈশাখ ক্রেজ হতে পারে, কিন্তু কখনই বাঙালী সংস্কৃতি না
অনেকেই দাবি করে, পহেলা বৈশাখ নাকি বাঙালী সংস্কৃতি। যারা এ ধরণের দাবি করে আসলে তারা সংষ্কৃতি আর ক্রেজের মধ্যে তফাত বুঝে না। পহেলা বৈশাখ একটি `ক্রেজ‘ কিন্তু কখনই সংস্কৃতি নয়। আসলে এতদিন `পহেলা বৈশাখ‘ নামক ক্রেজকে বাঙালী সংস্কৃতি হিসেবেই খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে । পুরো বিষয়টি বুঝতে প্রয়োজন হচ্ছে সংস্কৃতি কাকে বলে, আর ক্রেজ কাকে বলে তা বোঝা।
সংস্কৃতি কাকে বলে-
কোন স্থানের মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবিকার উপায়, সামাজিক সম্পর্ক, ধর্মীয় রীতি-নীতি, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়, তাই সংস্কৃতি।
অর্থাত বাংলাদেশের সকল মানুষের আচার-প্রথা, সামাজিক রীতি নীতি ইত্যাদির মধ্যে দীর্ঘদিন আবহমান কাল ধরে যা প্রকাশ পাবে তাই সংস্কৃতি। যেমন- ধরুন- ভাত খাওয়া। ভাত খাওয়া বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি। এটা কোন বাঙালীকে বলে দিতে হয় না, বা কোন নির্দ্দিষ্ট স্থানের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়। এবং বহুকাল ধরে বাংলাদেশের মানুষ ভাত খেয়ে যাচ্ছে। ভাত খাওয়ার বিষয়টিকে প্রচার করতে কোন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে মাঠে নামতে হয় নাই, কিংবা মিডিয়ায়ও প্রচার করতে হয় নাই `আসুন ভাত খাই‘। বরং অটোমেটিক বহু আগে থেকেই বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতির মধ্যে এই রীতি প্রবাহমান ছিলো। তাই ভাত খাওয়াকে বলা যায়- বাঙালী সংস্কৃতি।
এবার আসুন, ক্রেজ কাকে বলে-
ক্রেজ হচ্ছে এক ধরনের কোন নির্দ্দিষ্ট বিষয়ের উপর উদ্দিপনা, যা হঠাত করেই আগমন করে এবং দ্রুত বিস্তারলাভ করে আবার দ্রুতই মিলিয়ে যায়।
আরো সোজা ভাষায় বলতে- ক্রেজের কোন আদর্শিক ভিত্তি থাকে না, ফলে মতবাদটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ নামক যে অনুষ্ঠান আপনারা যে দেখছেন সেটা একটা ক্রেজ। এটা আবহমান সংস্কৃতি থেকে নেয়া হয় নাই, বরং ছায়ানট নামক একটি সংগঠন চালু করেছে। এবং মিডিয়ার মাধ্যমে সেটা দ্রুত প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ঐ পহেলা বৈশাখের আদর্শিক কোন ভিত্তি নাই। কারণ-
১) এটা আবহমান কোন সংস্কৃতি না, মাত্র ৫০বছর আগে ১৯৬৭ সালে এটা রমনায় চালু করে ছায়নট নামক একটি সংগঠন।
২) মিডিয়ার মাধ্যমে পহেলা বৈশাখকে দ্রুত বিস্তার করার চেষ্টা করে একটি বিশেষ মহল। এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন রমনার আবহ সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য ২০০১ সালের বটমূলের বোমা হামলা সময় থেকে মিডিয়া বিষয়টি বেশি প্রচার করে।
৩) অমঙ্গল শোভাযাত্রা চালু করে চারুকলা, মাত্র ২৮ বছর আগে ১৯৮৯ সালে।
৪) ১লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়া শুরু হয় মাত্র ৩৩ বছর আগে, ১৯৮৪ সালে।
অর্থাত প্রত্যেকটি কালচার একটি নিদ্দির্ষ্ট গোষ্ঠী শুরু করে এবং তা মিডিয়ায় `হাজার বছরের ঐতিহ্য‘ এই মিথ্যা উক্তি দিয়ে মানুষকে খাওয়ানো হয়। ফলে আদর্শিক ভিত্তিশূণ্য হয়ে পড়ে কথিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন। মানুষ ক্রেজ হিসেবে হঠাত পালন করে, ব্যাপক প্রচার পায়, কিন্তু আবার হঠাত ফুস করে বেলুন ফুটো হতে থাকে। ফলে অনুষ্ঠান বাচাতে বাধ্য হয়ে সরকার কোনমতে ইউনেস্কো থেকে একটা স্বীকৃতি নিয়ে স্কুল কলেজে তা আবশ্যক করতে উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু গায়ের জোরে ক্রেজকে তো আর জাতীয় সংস্কৃতি বানানো যায় না। জাতীয় সংস্কৃতি হওয়ার জন্য চাই আদর্শিক ভিত্তি থাকা ও বাস্তব সম্মত হওয়া। কিন্তু ক্রেজ পহেলা বৈশাখের আসলে কোনটাই নেই।