somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

০১ লা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ইসলামের একটি প্রধান শিক্ষা হলো ইনসাফ। অন্যের প্রতি অন্যায় করে, অন্যকে ঠকিয়ে কেউ ভালো মুসলমান হতে পারে না। কোরআনে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে বলেন,


اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَনিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সুরা নাহল: ৯০)

জুলুমের বিরুদ্ধে শোষিত ও মজলুম মানুষের পক্ষে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত বলিষ্ঠ। কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে মজুরি পরিশোধ না করা জুলুম। কেউ এ ধরনের জুলুম করলে মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, তাকে মজুরি পরিশোধ করতে বাধ্য করা।

যদি দুনিয়াতে কোনো কারণে সে পার পেয়েও যায়, পরকালীন কঠিন শাস্তি থেকে সে রেহাই পাবে না। হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন কেয়ামতের দিন এ ধরনের জালিমদের বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা স্বয়ং বাদী হবেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন,



ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطَى بِـيْ ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُকেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব; প্রথম হল ওই ব্যক্তি যে আমার নামে কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করল অতঃপর তা ভঙ্গ করল। দ্বিতীয় হল ওই ব্যক্তি যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে তার মূল্য ভক্ষণ করল। আর তৃতীয় হল ওই ব্যক্তি যে কোনো মজুর খাটিয়ে তার কাছ থেকে পুরোপুরি কাজ নিল অথচ সে তার মজুরী পূর্ণরূপে আদায় করল না। (সহিহ বুখারি: ২২২৭)

এ ছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি যথাযথভাবে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। শ্রমিকের কাজ শেষ হওয়ার পরপরই কোনো রকম গড়িমসি না করে মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

أَعْطُوا الأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُশ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকাবার পূর্বে তার মজুরি দিয়ে দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৪৪৩)

আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,



منِ اسْتَأجر أجيراً فَلْيُسَلِّمْ لَهُ أَجرَتَهُযে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে লাগাবে, সে যেন তাঁর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কাজে লাগায়। (বুলুগুল মারাম: ৯১৪)

শ্রমিকের মজুরি বান্দার হক। তাই শ্রমিককে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করলে পরবর্তীতে সেজন্য শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে হবে না। শুধু তওবার মাধ্যমে এ সব অন্যায় মাফ হয় না। বরং ভুল বুঝতে পারলে ওই শ্রমিককে বা তার উত্তরাধিকারীদের খুঁজে বের করে পাওনা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় কেয়ামতের দিন নিজের সওয়াব দিয়ে বা অন্যের পাপের বোঝা নিয়ে এ রকম পাওনা পরিশোধ করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন,

مَن كانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لأخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْها، فإنَّه ليسَ ثَمَّ دِينارٌ ولا دِرْهَمٌ، مِن قَبْلِ أنْ يُؤْخَذَ لأخِيهِ مِن حَسَناتِهِ، فإنْ لَمْ يَكُنْ له حَسَناتٌ أُخِذَ مِن سَيِّئاتِ أخِيهِ فَطُرِحَتْ عليه

কারো উপর তার ভাইয়ের কোনো দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি ৬৫৩৪)

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×