somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“মুমিন ও ঈমানদার”

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাহমাদুহু ওয়া নুছল্লি আলা রসুলিহিল কারিম। আম্মাবাদ! আজকের আলোচনার বিষয়— “ঈমান এবং মুমিন...”

‘মুমিন’ আরবি শব্দ, যা ঈমান শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ বিশ্বাসী। কুরআনে ‘মুমিন’ এবং ‘মুমিনুন’ নামে দুটি সূরাও আছে। অর্থাৎ একবচন‌ও আছে, বহুবচন‌ও আছে।
যেহেতু মুমিন নামটা আল্লাহ‌ই দিয়েছেন। সেহেতু আমরা তাকেই প্রশ্ন করি—‘হে আল্লাহ, মুমিন কারা?’

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মুমিনদের সংজ্ঞা দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ বললেন, মুমিন কারা শুনো—
“মান আরাদাল আখেরাতা ওয়া সা'য়ালাহা সা'ইয়াহা ওয়া হুয়া মু'মিন।”
যে আখেরাত চায়, আখেরাতের জন্য চেষ্টা করে সেই হলো মুমিন।

যারা দুনিয়া চায় না, আখিরাত চায়। দুনিয়া তাদের জন্য এমনেই আসবে। তবে দুনিয়ার জন্য যেটা চাওয়া, তা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন, “রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়া-ক্বিনা আজাবান্নার।”
শুধু নিজের জন্য চাইবেন কেন? আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানা...। এ আল্লাহ, দুনিয়াতে যত মানুষ আছে, সবাইকে সুন্দর জীবন দিয়ে দেন। আখেরাতের জীবন সুন্দর করে দেন। আর সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাইয়া নেন। কারণ, জাহান্নামের আগুন কেউ সহ্য করতে পারবো না।

আশপাশে কারো বাড়িতে যদি আগুন লাগে, আমরা আগুন নেভানোর জন্য দৌড়াই। পানি দেই। কিন্তু সব মানুষ জাহান্নামের দিকে ছুটছে, এদেরকে কেউ ফেরানোর চেষ্টা করি না। যদি এদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা না করি, তাহলে এদের সাথে সাথে আমরাও জাহান্নামে পুড়ে মরবো।
নামাজ পড়লেন না এক ওয়াক্ত, জাহান্নামের দিকে চলে গেলেন। শিরিক করলেন জাহান্নামের, দিকে চলে গেলেন। বিদাআত করলেন, আমলগুলো নষ্ট হয়ে গেলো। টাকন‌‌ুর নিচে কাপড় পড়লেন, জাহান্নামের কাছে চলে গেলেন। কারণ, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘টাকনুর নিচে যে কাপড়টা চলে যায়, ওটা জাহান্নামের অংশ হয়ে গেলো।’
ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করেছেন, জাহান্নামের আগুন খাইছেন। বোনের সম্পদ মেরে খালেন, জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হলেন। এখন এই শরীর নিয়ে যত ইবাদাত করেন, একটা ইবাদাত‌ও কবুল হবে না। কারণ, পেটে তো জাহান্নাম। তাহলে অপবিত্র শরীর নিয়ে ইবাদাত কবুল হয় কী করে?
এছাড়াও অন্যের জমির আইল ঠেলে, খাদ্যে ভেজাল দেয়, দুধে পানি দেয়— আছে না এরকম লোক? এরা কখনোই মুমিন হতে পারে না। আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দিক। সকলেই বলি— আমিন।

(২)
আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপনের নাম ঈমান। যে ঈমান আনে সে মুমিন। একজন মুসলিম যেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনে তা মূলত ৭টি। তন্মধ্যে তিনটি হচ্ছে প্রধাণ,—

১। তাওহিদঃ তাওহিদ মানে আল্লাহর একক সত্তা। যার অর্থ তিনি একাই সবকিছুর স্রষ্টা। মালিক, নিয়ন্ত্রক ও সংহারক। তাঁর কোনো শরিক নেই। মানুষকে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করতে হবে।

(২) রিসালাতঃ রিসালাত বলতে বুঝায় আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের ওপর অর্পিত নির্দেশ ও বিধান। এ বিধান মানতে মানুষ বাধ্য।

৩। আখিরাতঃ আখেরাত হলো দুনিয়ার পরের অনন্তজীবন। মানুষের ভালো ও মন্দের বিচার হবে সেখানে। এ বিচার করবেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা। আর তার ভিত্তিতেই মানুষ লাভ করবে জান্নাত ও জাহান্নাম।

মানুষের ঈমান এমন এক শক্তিশালী জিনিস, যার প্রভাবে মানুষ দুনিয়ার সব অন্যায়-অপরাধ তথা সব ধরনের গোনাহের কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানদারের ঈমানি শক্তি বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন যে-
‘পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় ব্যাভিচারি (কোনো ব্যক্তি) ব্যাভিচারে লিপ্ত হতে পারে না। চোর পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় চুরি করতে পারে না। আর মদখোর পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় মদপান করতে সক্ষম হয় না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অর্থাৎ মানুষ যখন ঈমানে শক্তিতে দুর্বল হয়ে যায়, তখনই কেবল গোনাহের দিকে ধাবিত হয়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা আসরে বলেছেন,

وَ الۡعَصۡرِ ۙ﴿۱﴾
শপথ মহাকালের!
اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ ۙ﴿۲﴾
মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।

اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ ٪﴿۳﴾

কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে পরস্পরকে উদ্ধুদ্ধ করে। (সূরা আসর, ১-৩)

অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে হলে—
১। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে।
২। সৎ কাজ করতে হবে।
৩। সত্যের উপদেশ দিতে হবে।
৪। ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

আর যারা এগুলো করবে, তারাই প্রকৃত মুমিন। তারাই ঈমানদার। এরাই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, ঈমানের স্বাদ আবার কি? ঈমানের স্বাদ হলো প্রশান্তি। এই প্রশান্তির স্থান জান্নাতুল ফেরদৌস ছাড়া আর কী হতে পারে?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা কাহফের ১০৭নং আয়াতে বলেছেন—
'ইন্নাল্লা যিনা আমানু ওয়া'মিলুস ছলিহাতি কানাত লাহুম জান্নাতুল ফিরদাউসি নুজুলা।'
অর্থঃ 'যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।' সুবাহানাল্লাহ।

“বারাকাল্লাহু লানা ওয়া লাকুম ফিল কুর-আনিল আজিম ...”

—"কাওছার হাবীব"

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিজের জ্ঞান থেকে ব্যাখ্যা করুন।

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


ইরান কি এটম বোমা বানাতে পেরেছে আদৌ? ...বাকিটুকু পড়ুন

শুভ সকাল

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৯ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:২৭



চকচকে মানুষের আড়ালে ক্রমশ বাড়ছে দগদগে মানুষ-
পোড়া মানুষ- মৃত মানুষ!
বাজছে যুদ্ধের দামামা জলেস্থলেঅন্তরীক্ষে-
মানুষ মানুষকে শিকার করছে বন্য হিংস্রতায়।
মৃত্যুপূর্ব ছটফটানি-
আকুতি মুগ্ধতা বাড়াচ্ছে স্বগোত্রীয়দের!
আহা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরাইল ইতিমধ্যেই আত্নসমর্পন করেছে!

লিখেছেন দেশ প্রেমিক বাঙালী, ১৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:০৯


অনেকেই হয়তো আমার কথায় বিস্ময় প্রকাশ করবেন যে, কীভাবে কখন ইসরাইল আত্নসমর্পন করলো? হ্যাঁ অলরেডী ইসরাইল আত্নসমর্পন করেছে! কীভাবে আসুন সেটাই এখন আলোচনা করি।

ইসরাইলের আয়রন ডোম হলো স্বল্প দূরত্বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

সদ্য প্রকাশিত (year 2026) কিউএস র্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 584 তম স্থান অর্জন করে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। । দ্বীতিয় স্থানে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খামেনিকে হত্যা করা হলে ইরানে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭


খামেনেইকে হত্যা করা ইজরায়েলের অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য : স্পষ্ট করলেন নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির মৃত্যু দেশটির জন্য কেবলমাত্র একটি নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রশ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×