somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ – একটি সুস্পষ্ট বিদাআত।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বহুদিন পর পাশের এলাকার এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা। তার সাথে সালাম-কুশলাদি বিনিময়ের পর একথা-সেকথা বলতে বলতে সামনের এক টঙ-দোকানের সামনে গিয়ে বসলাম। বড় ভাই চায়ের ওর্ডার দিলেন। চা গিলছি আর হালকা খোশগল্পে মেতে ওঠেছি দু'জনে। পাশে আর‌ও কিছু মানুষজন বসে আছেন। বড়ভাই অকস্মাৎ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলতে লাগলেন, ‘কীরে? শুনলাম, তুই নাকি ওহাবী হয়ে গেছিস? আসলে তোর সমস্যাটা কি, বলতো আমাকে! তুই নাকি একে-ওকে বলে বেড়াচ্ছিস যে, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বিদাআত। তোর কি মাথা ঠিক আছে?’
– ‘কেন? মাথা তো ঠিক‌ই আছে। যেটা বিদাআত, সেটাকে তো বিদাআত বলতেই হবে। কারণ, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী বা পথভ্রষ্ট’। [আবু দাউদ, হা-৪৬০৭]
আর ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ পালন করাও সুস্পষ্ট বিদাআত। এটার কোনো ভিত্তি নাই। রাসূলুল্লাহ (স) তার জীবদ্দশায় স্বীয় জন্মদিন পালন করেছেন, এরকম কোনো য‌ঈফ হাদিস‌ও নাই। তিন শ্রেষ্ঠ যুগ অর্থাৎ সাহাবা, তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনের যুগে কি এসব কাজের প্রচলন ছিল না। তাহলে এরকম একটা সুস্পষ্ট বিদাআত আপনারা কেন পালন করেন?’
আমার কথাবার্তা শুনে বড় ভাই রাগান্বিত স্বরে বলতে লাগলেন, ‘তুই ওহাবী! তুই নবীর দুশমন!’
আমি বুঝলাম না, বড় ভাই এত রেগে গেলেন কেন? আমি মন্দ কিছু বললাম নাকি! আমি তো হাদিস থেকেই কথা বলার চেষ্টা করলাম। যাইহোক, এই মুহূর্তে আমি রেগে গেলে চলবে না। চাই ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিলাম,– ‘ও আচ্ছা, তা আমরা যদি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন না করে নবীর দুশমন হয়ে যাই। তাহলে এক‌ই দলে তো সাহাবা, তাবিঈন, তাবে তাবিঈনরাও পড়ে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ) কারণ, তারা কেউই তো ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেননি। উপরন্তু, মুসলমানদের উৎসবের ঈদ কেবল দুটি। এর বাইরে কোনো ঈদ নাই।’
– ‘নবির আগমনে শয়তান ছাড়া সবাই খুশি। খুশি মানেই তো ঈদ। এটা শাব্দিক ঈদ। পারিভাষিক ঈদ না।’
– ‘প্রসিদ্ধ মতানুসারে, এই ১২ই রবিউল আউয়ালে তো নবী (স) ইন্তেকাল‌ও (ওফাত) করেছেন। তাহলে আপনি শোক পালন করেন না কেন? আপনার তো উচিত এক‌ই সাথে আনন্দ-শোক পালন করা।’
– ‘আমি এত কথা শুনতে চাই না। আপনি আমাকে বলুন, নবীর আগমনে আপনারা খুশি নন কেন?’
– ‘কে বলেছে খুশি ন‌ই আমরা?’
– ‘তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করছেন না? এতেই তো প্রমাণিত হয়, আপনারা (ওহাবীরা) খুশি নন।’
– ‘আমরা খুশি কিনা, সেটা এই দিনে জশনে-জুলুস, আনন্দ-উল্লাস, মিছিল-সমাবেশ, মিলাদ-মাহফিল ইত্যাদি আয়োজন করে প্রমাণ করতে হবে? ক‌ই? সাহাবিরা তো এভাবে নবী (স)-এর জন্মদিনকে ঘিরে এরকম আনন্দ উল্লাস করেননি। তাহলে আমরা কেন করবো? তাঁদের চেয়েও আমরা বড় ঈমানদার হয়ে গেছি নাকি?’
– ‘তাহলে রাসূলুল্লাহ (স) তার জন্মদিনে রোযা রেখেছিলেন কেন? এটা তো সহিহ মুসলিম শরীফের হাদিসে আছে। সুতরাং আমরা এই দিনে কোনো আমল করলে সমস্যা কোথায়? সবকিছুতে শুধু বিদাআত খুঁজো কেন? যত্তোসব ওহাবীর দল!’
– ‘আপনি আমাকে ওহাবী বলেন আর যা-ই কিছু বলেন; যেটা সত্য সেটা বলতেই হবে। আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি,–
সহিহ মুসলিমে (হা-২৬৩৭) আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: “এটি এমন দিন যে দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমার ওপর ওহি নাযিল হয়”।
ইমাম তিরমিযি (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “প্রতি সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে আমলনামা পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি আমি রোযা রেখেছি এমতাবস্থায় যেন আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হয়”[তিরমিযি হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন। আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]
এই দুটো হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ (স) প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার ৩টি কারণে রোযা রেখেছিলেন,–
১। তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন;
২। এই দিনে তার উপর ওহি নাযিল হয়;
৩। প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে আমলনামা পেশ করা হয়;
খেয়াল করুন, প্রতি সপ্তাহে তিনি রোজা রেখেছিলেন; শুধুমাত্র নির্দিষ্ট করে প্রতি বছরে রবিউল আউয়াল মাসের ৮, ১০ ও ১২ তারিখের কোনো সোমবারে নয়। সুতরাং এই হাদিসের দলিল দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল গ্রহণযোগ্য নয়।
আর মিলাদুন্নবী পালনের উদ্দেশ্যে বছরের বিশেষ একটি দিনে এ আমলটি করা— এটি বিদআত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর খেলাফ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে রোযা রেখেছেন। অথচ মিলাদুন্নবী পালনের নির্দিষ্ট এ দিনটি সোমবারেও পড়তে পারে; আবার সপ্তাহের অন্য কোন দিনও হতে পারে।
এ দিনে নাবী (স) এর জন্মের ঘটনা, কিছু ও'য়াজ ও নাবী (স) এর রূহের আগমন কল্পনা করে তার সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে ‘ইয়া নাবী সালামু আলায়কা’ বলা ও সবশেষে জিলাপি বিতরণ করা - এই সব মিলিয়ে ‘মীলাদ মাহফিল’ ইসলাম প্রবর্তিত ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আযহা’ নামক দু’টি বার্ষিক ঈদ উৎসবের বাইরে ‘ঈদে মীলাদুন্নাবী’ নামে তৃতীয় আরেকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যার অস্তিত্ব ইসলাম পূর্ব সময়ে ছিলো না, রাসূলুল্লাহ [ﷺ] এর সময়েও ছিলো না, সাহাবায়ে কেরাম এর সময়েও ছিলো না, এমনকি সালাফ আস সালেহীন এর সময়েও ছিলো না। চার ইমামের কেউই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেননি।
রাসূলুল্লাহ (স) এর মৃত্যুর প্রায় ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে, এই দিনে তারা মীলাদুন্নাবী উদযাপনের নামে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হ’তেন।
ক্রুসেড বিজেতা মিসরের সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী (রহঃ) কর্তৃক নিযুক্ত ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্ণর আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী (যার- জন্ম ৫৮৬ - মৃত্যু ৬৩০ হিঃ)। এই ব্যক্তিই সর্বপ্রথম, ৬০৪ হিঃ অথবা ৬২৫ হিজরীতে মীলাদের প্রচলন ঘটান। বাদশাহ মুজাফ্ফরুদ্দীন, রবিউল আউয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ [ﷺ] এর মিলাদ পালন করতেন এবং এ উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অরে মাহফিলের ব্যবস্থা করতেন। [আল-বিদায়া ওয়ান- নিহায়াঃ ১৩/১২৭]
বাদশাহ মুজাফ্ফরুদ্দীন কুকুবুরী কোন প্রকৃতির ছিলেন! তার সম্পর্কে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ইমাম আহমদ ইবেন মুহাম্মদ মালেকী (রাহ্.)এর মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়। তিনি লিখেন “সে ছিল এক অপব্যয়ী বাদশা। সে নিজস্ব ইজতিহাদ ও অভিরুচি মতে আমল করার জন্য সমকালীন আলেমদের আদেশ দিত এবং অন্য ইমামের অনুসরণ না করার জন্য উৎসাহ যোগাত। ফলে (স্বার্থপর) আলেমদের একটি দলকে সে বাগিয়ে নিয়েছিল। সে প্রতি রবীউল আউয়াল মাসে মীলাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। সেই প্রথম বাদশা যে এই নবতর প্রথার ভিত্তি স্থাপন করে।” [আল কাউলুল মু'তামাদ ফী আমালিল মাওলীদ, মিহাযুল ওয়াযিহ্-২৪৯]
কথিত নামধারী সুন্নি ভাইটি এতক্ষণে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। সে হয়তো কোনো কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু বলছে না। আমি বললাম– ‘ভাই, আজকে তো আপনাদের এলাকায় বাদ আছর খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে ’ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করবেন। তা আমার জন্য কি শিন্নি-জিলাপির একটু হিস্যা রাখা যায় না?’
– ‘আপনি বিদাআতীদের শিন্নি-জিলাপি খেলে বিদাআতী হয়ে যাবেন। আপনার জন্য এসব নয়।’
এই বলে মুখটা ভেংচি কেটে স্থুলপায়ে সামনে এগুতে লাগলো।
আমি পিছন থেকে তাহেরী আঙ্কেলের গানের সুরে বলতে লাগলাম,–
‘পাগলা তিতা মিঠা বোঝে না,
পাগলারে কেউ জিলাপি দিও না...’
.
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ – একটি সুস্পষ্ট বিদাআত।
– কাওছার হাবীব।
বহুদিন পর পাশের এলাকার এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা। তার সাথে সালাম-কুশলাদি বিনিময়ের পর একথা-সেকথা বলতে বলতে সামনের এক টঙ-দোকানের সামনে গিয়ে বসলাম। বড় ভাই চায়ের ওর্ডার দিলেন। চা গিলছি আর হালকা খোশগল্পে মেতে ওঠেছি দু'জনে। পাশে আর‌ও কিছু মানুষজন বসে আছেন। বড়ভাই অকস্মাৎ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলতে লাগলেন, ‘কীরে? শুনলাম, তুই নাকি ওহাবী হয়ে গেছিস? আসলে তোর সমস্যাটা কি, বলতো আমাকে! তুই নাকি একে-ওকে বলে বেড়াচ্ছিস যে, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বিদাআত। তোর কি মাথা ঠিক আছে?’
– ‘কেন? মাথা তো ঠিক‌ই আছে। যেটা বিদাআত, সেটাকে তো বিদাআত বলতেই হবে। কারণ, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী বা পথভ্রষ্ট’। [আবু দাউদ, হা-৪৬০৭]
আর ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ পালন করাও সুস্পষ্ট বিদাআত। এটার কোনো ভিত্তি নাই। রাসূলুল্লাহ (স) তার জীবদ্দশায় স্বীয় জন্মদিন পালন করেছেন, এরকম কোনো য‌ঈফ হাদিস‌ও নাই। তিন শ্রেষ্ঠ যুগ অর্থাৎ সাহাবা, তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনের যুগে কি এসব কাজের প্রচলন ছিল না। তাহলে এরকম একটা সুস্পষ্ট বিদাআত আপনারা কেন পালন করেন?’
আমার কথাবার্তা শুনে বড় ভাই রাগান্বিত স্বরে বলতে লাগলেন, ‘তুই ওহাবী! তুই নবীর দুশমন!’
আমি বুঝলাম না, বড় ভাই এত রেগে গেলেন কেন? আমি মন্দ কিছু বললাম নাকি! আমি তো হাদিস থেকেই কথা বলার চেষ্টা করলাম। যাইহোক, এই মুহূর্তে আমি রেগে গেলে চলবে না। চাই ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিলাম,– ‘ও আচ্ছা, তা আমরা যদি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন না করে নবীর দুশমন হয়ে যাই। তাহলে এক‌ই দলে তো সাহাবা, তাবিঈন, তাবে তাবিঈনরাও পড়ে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ) কারণ, তারা কেউই তো ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেননি। উপরন্তু, মুসলমানদের উৎসবের ঈদ কেবল দুটি। এর বাইরে কোনো ঈদ নাই।’
– ‘নবির আগমনে শয়তান ছাড়া সবাই খুশি। খুশি মানেই তো ঈদ। এটা শাব্দিক ঈদ। পারিভাষিক ঈদ না।’
– ‘প্রসিদ্ধ মতানুসারে, এই ১২ই রবিউল আউয়ালে তো নবী (স) ইন্তেকাল‌ও (ওফাত) করেছেন। তাহলে আপনি শোক পালন করেন না কেন? আপনার তো উচিত এক‌ই সাথে আনন্দ-শোক পালন করা।’
– ‘আমি এত কথা শুনতে চাই না। আপনি আমাকে বলুন, নবীর আগমনে আপনারা খুশি নন কেন?’
– ‘কে বলেছে খুশি ন‌ই আমরা?’
– ‘তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করছেন না? এতেই তো প্রমাণিত হয়, আপনারা (ওহাবীরা) খুশি নন।’
– ‘আমরা খুশি কিনা, সেটা এই দিনে জশনে-জুলুস, আনন্দ-উল্লাস, মিছিল-সমাবেশ, মিলাদ-মাহফিল ইত্যাদি আয়োজন করে প্রমাণ করতে হবে? ক‌ই? সাহাবিরা তো এভাবে নবী (স)-এর জন্মদিনকে ঘিরে এরকম আনন্দ উল্লাস করেননি। তাহলে আমরা কেন করবো? তাঁদের চেয়েও আমরা বড় ঈমানদার হয়ে গেছি নাকি?’
– ‘তাহলে রাসূলুল্লাহ (স) তার জন্মদিনে রোযা রেখেছিলেন কেন? এটা তো সহিহ মুসলিম শরীফের হাদিসে আছে। সুতরাং আমরা এই দিনে কোনো আমল করলে সমস্যা কোথায়? সবকিছুতে শুধু বিদাআত খুঁজো কেন? যত্তোসব ওহাবীর দল!’
– ‘আপনি আমাকে ওহাবী বলেন আর যা-ই কিছু বলেন; যেটা সত্য সেটা বলতেই হবে। আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি,–
সহিহ মুসলিমে (হা-২৬৩৭) আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: “এটি এমন দিন যে দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমার ওপর ওহি নাযিল হয়”।
ইমাম তিরমিযি (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “প্রতি সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে আমলনামা পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি আমি রোযা রেখেছি এমতাবস্থায় যেন আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হয়”[তিরমিযি হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন। আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]
এই দুটো হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ (স) প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার ৩টি কারণে রোযা রেখেছিলেন,–
১। তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন;
২। এই দিনে তার উপর ওহি নাযিল হয়;
৩। প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে আমলনামা পেশ করা হয়;
খেয়াল করুন, প্রতি সপ্তাহে তিনি রোজা রেখেছিলেন; শুধুমাত্র নির্দিষ্ট করে প্রতি বছরে রবিউল আউয়াল মাসের ৮, ১০ ও ১২ তারিখের কোনো সোমবারে নয়। সুতরাং এই হাদিসের দলিল দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল গ্রহণযোগ্য নয়।
আর মিলাদুন্নবী পালনের উদ্দেশ্যে বছরের বিশেষ একটি দিনে এ আমলটি করা— এটি বিদআত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর খেলাফ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে রোযা রেখেছেন। অথচ মিলাদুন্নবী পালনের নির্দিষ্ট এ দিনটি সোমবারেও পড়তে পারে; আবার সপ্তাহের অন্য কোন দিনও হতে পারে।
এ দিনে নাবী (স) এর জন্মের ঘটনা, কিছু ও'য়াজ ও নাবী (স) এর রূহের আগমন কল্পনা করে তার সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে ‘ইয়া নাবী সালামু আলায়কা’ বলা ও সবশেষে জিলাপি বিতরণ করা - এই সব মিলিয়ে ‘মীলাদ মাহফিল’ ইসলাম প্রবর্তিত ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আযহা’ নামক দু’টি বার্ষিক ঈদ উৎসবের বাইরে ‘ঈদে মীলাদুন্নাবী’ নামে তৃতীয় আরেকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যার অস্তিত্ব ইসলাম পূর্ব সময়ে ছিলো না, রাসূলুল্লাহ [ﷺ] এর সময়েও ছিলো না, সাহাবায়ে কেরাম এর সময়েও ছিলো না, এমনকি সালাফ আস সালেহীন এর সময়েও ছিলো না। চার ইমামের কেউই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেননি।
রাসূলুল্লাহ (স) এর মৃত্যুর প্রায় ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে, এই দিনে তারা মীলাদুন্নাবী উদযাপনের নামে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হ’তেন।
ক্রুসেড বিজেতা মিসরের সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী (রহঃ) কর্তৃক নিযুক্ত ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্ণর আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী (যার- জন্ম ৫৮৬ - মৃত্যু ৬৩০ হিঃ)। এই ব্যক্তিই সর্বপ্রথম, ৬০৪ হিঃ অথবা ৬২৫ হিজরীতে মীলাদের প্রচলন ঘটান। বাদশাহ মুজাফ্ফরুদ্দীন, রবিউল আউয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ [ﷺ] এর মিলাদ পালন করতেন এবং এ উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অরে মাহফিলের ব্যবস্থা করতেন। [আল-বিদায়া ওয়ান- নিহায়াঃ ১৩/১২৭]
বাদশাহ মুজাফ্ফরুদ্দীন কুকুবুরী কোন প্রকৃতির ছিলেন! তার সম্পর্কে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ইমাম আহমদ ইবেন মুহাম্মদ মালেকী (রাহ্.)এর মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়। তিনি লিখেন “সে ছিল এক অপব্যয়ী বাদশা। সে নিজস্ব ইজতিহাদ ও অভিরুচি মতে আমল করার জন্য সমকালীন আলেমদের আদেশ দিত এবং অন্য ইমামের অনুসরণ না করার জন্য উৎসাহ যোগাত। ফলে (স্বার্থপর) আলেমদের একটি দলকে সে বাগিয়ে নিয়েছিল। সে প্রতি রবীউল আউয়াল মাসে মীলাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। সেই প্রথম বাদশা যে এই নবতর প্রথার ভিত্তি স্থাপন করে।” [আল কাউলুল মু'তামাদ ফী আমালিল মাওলীদ, মিহাযুল ওয়াযিহ্-২৪৯]
কথিত নামধারী সুন্নি ভাইটি এতক্ষণে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। সে হয়তো কোনো কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু বলছে না। আমি বললাম– ‘ভাই, আজকে তো আপনাদের এলাকায় বাদ আছর খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে ’ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করবেন। তা আমার জন্য কি শিন্নি-জিলাপির একটু হিস্যা রাখা যায় না?’
– ‘আপনি বিদাআতীদের শিন্নি-জিলাপি খেলে বিদাআতী হয়ে যাবেন। আপনার জন্য এসব নয়।’
এই বলে মুখটা ভেংচি কেটে স্থুলপায়ে সামনে এগুতে লাগলো।
আমি পিছন থেকে তাহেরী আঙ্কেলের গানের সুরে বলতে লাগলাম,–
‘পাগলা তিতা মিঠা বোঝে না,
পাগলারে কেউ জিলাপি দিও না...’
.
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ – একটি সুস্পষ্ট বিদাআত।
– কাওছার হাবীব।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×