হাফিজুর মোল্লা এক মাস আগে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাবা অটোরিক্সা চালক, বাসা বা মেসে ভাড়া থাকার সমর্থ তার ছিলনা, তাই রাজনৈতিক ‘বড় ভাইদের’ বদান্যতায় জায়গা হয়েছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলের বারান্দায়…. আজন্ম লব্ধ দৈনতা তার ছিল, কিন্তু রাষ্টীয় দৈনতা যে তার অটোরিক্সা চালক বাবার দৈনতাকেও হার মানায় এমন ধারনাটি তার ছিলনা নিশ্চই, অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন, পারিবারিক দৈনতাকে দুরে ঠেলে সুনিশ্চিত আগামী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এসেছিলেন নিশ্চই, দেশের সবথেকে খ্যাতনামা শিক্ষালয়ে ভালো বিষয়ে অধ্যায়নের সুযোগটি পেয়ে আনন্দে অনাগত আগামীর কথা ভেবে না জানি কত রাত ঘুমাতেই পারেনি,
ভর্তি হয়ে বদান্যতায় সুযোগ পাওয়া মাঘের শীতের বারান্দায় সে কতটা ঘুমিয়েছিল জানি না, তবে নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড তাকে যে অখন্ড ঘুমের জগতে নিয়ে গেছে মাঘ, ফাল্গুন, রুম, বারান্দা সে জগত থেকে অনেক অনেক দূরে, ধন্যবাদ হে বদান্যতা…..
খবরটি গতকালের প্রথমআলো পত্রিকায় প্রকাশিত, হাফিজুর মোল্লার এ মৃত্যু তার মতই কোনো এক প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে আসা আমার চোখে জল এনে দেয়, কিন্তু হল প্রসাশন এর পক্ষ থেকে প্রাধ্যক্ষ মহোদয়ের হু বদারস টাইপ অমানবিক বক্তব্য ‘নিউমোনিয়া বারান্দায় থাকলেও হতে পারে, রুমে থাকলেও হতে পারে। আর বারান্দায় তো অনেকেই থাকে। তাদের তো কিছু হয়নি। হতে পারে সে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি চলে গেছে এবং সেখানে মারা গেছে।’ মানবিকতার গুন সম্পন্ন যে কাউকেই শোকাহত করবে বলে মনে করি….
অবস্য প্রাধ্যক্ষ মহোদয় হাফিজুর বা অন্য কোনো প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে আসা কারো খবর কি করেই রাখবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাত্সরিক বাজেটের অলমোস্ট ৮০% যে তাদের বেতন, পেনশন ইত্যাদিতেই যায়…
হাফিজুর তুই ঘুমা… “শিক্ষা সুযোগ নয় অধিকার” এমন অসাড় স্লোগানের সত্যতা তো এতোক্ষণে বুঝেগেছিস নিশ্চই….. তুই বড় বোকা, কেন আগে জানলি না তোর্ মত প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে আসা হাফিজুরদের শিক্ষাটা অনেক দামী….
আমরা এগিয়ে যাই, নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের স্টেটাস পাই, রাষ্ট্র মূল বাজেটের মাত্র ১২.৩% শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ দিয়ে ইঙ্গিত করে তোদের মত হাফিজুর দের শিক্ষাটা দাম দিয়ে কিনতে হয়....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৩১