একজন মানুষের সাথে যখন আর একজন মানুষের স্বাভাবিক আলাপচারিতার শুরুর শব্দটি “হ্যালো”
যাকে বিভিন্ন ভাষায় একটু ভিন্নরূপে বলা হলেও মূল শব্দ এক (চাইনিজ ইনিহা, স্প্যানিশ ওলা, ফ্রেঞ্চ বোজো, আরবি মার্হাবান)
বাংলা ভাষায় হ্যালো শব্দের শাব্দিক কোনো বাংলা অর্থ নাই, টেলিফোন, মোবাইল বা অন্য কোনো দূরালাপনি মাধ্যমে আমরা হ্যালো শব্দের ব্যবহার করলেও সরাসরি কথোপকথনে আমরা মুসলিম হলে আসসালামুয়ালিকুম বা হিন্দু হলে নমস্কার দিয়ে শুরু করি, যে শিক্ষা বাল্যকালেই পরিবার আমাদেরকে দেয়.
সুতারং আমাদের কথোপকথনের শুরুই হয় সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে, প্রণাম বা নমস্কার কোনো মুসলমান বললে তার মুসলমানিত্ব ঝুঁকিতে পরে যায়, আর আসসালামুয়ালিকুম কোনো হিন্দুর মুখে, (রাম, রাম, রাম)
জাত গেলো জাত গেলো বলে, জাত যাতে না যায় তা নিশ্চিত করার সুমহান দায়িত্ব পালনে ছোট বেলা থেকেই সচেষ্ট থাকে পরিবার, স্কুল, সমাজ, (সাম্প্রকদিকতার শুরুটা অবশ্য হয় জন্মের পর স্ব, স্ব ধর্ম নির্দেশিত পরিবার প্রদত্ত নাম দিয়ে)
আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি ধর্ম ক্লাশে আমাকে শিখানো হলো একজায়গায় হিন্দু, মুসলিম একসাথে থাকলে কেবল আসসালামুয়ালিকুম যথেষ্ট নয় সাথে যোগ করতে হবে মানিকতাবাদ হুদা, মানে শান্তি কেবল সুপথ গ্রহণ কারীদের জন্য
সাম্প্রদায়িকতার কতবড় বীজ আমার ভিতরে বপন করে দেয়া হলো সেই ১২ বছর বয়সেই, বিষয়টা যে কেবল মুসলিমদের ক্ষেত্রেই ঘটে এমন নয়, সাম্প্রদায়িকতার একই শিক্ষা সকল ধর্মই দেয়, প্রত্যেক ধর্মই বলে সে বাদে বাকি সব মিথ্যা, বাকি সবাই পথ ভ্রষ্টতায় পরিণত হয়েছে এবং যা শাস্তি ভয়ঙ্কর, আমি, আমার ধর্ম বাদে বাকি সবাই অভিশপ্ত
সাম্প্রদায়িকতার, ঘৃণার ঘিন্য বীজ অতি গোপনে এখানে বুনে দেয়া হয়, আর তাইতো হিন্দু বা খ্রিস্টান মিথ গুলোকে আজগুবি, গাঁজাখুরি মনে হয়, বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক মুসলিম মিথগুলো নির্ধিধায় মেনে নিতে পারি, আবার মুসলমানদের মহানবীর একাধিক বিবাহ কটূক্তির উপকরণ হয় কিন্তু রাম সে তো ভগবান
আর তাইতো সাম্প্রদায়িকতা বিবেককে গ্রাস করে নেয়, মনুষ্যত্ব সবসময়ই সাম্প্রদায়িকতার কাছে মার্ খেয়ে যায়, কেউবা নাসিরনগরে "মালাউনের" গজব হয়েছে, কেউ আবার মিয়ানমারে মোসলমান হালাগো (শালাদের) উচিত বিচার হয়েছে ভেবে স্ব, স্ব সুপথ গামিতার আনন্দে বাক বাকুম হই
আর সাঁওতাল মারা গেলে সবাইমিলে ভাব লেশ হীন থাকি স্রেফ ভিন্ন সম্প্রদায় বলে
নাসিরনগরের মালাউন, মিয়ানমারের মোসোলমান আর গাইবান্ধার সাঁওতাল সব রক্তের একই রং, আমাদের সাম্প্রদায়িকতা কেবল পেট্রল, ডিজেলের মতো ভিন্ন রং দিয়ে রক্তকে ভাগ করে দেয়..
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩১