somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখস্মৃতিতে দক্ষিণ সুদান

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খ্যাতনামা একটি আন্তর্জাতিক চাইল্ড রিলিফ অর্গানিজশনে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দক্ষিণ সুদানে যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যেই মাঠ পর্যায়ের সবগুলো অফিস পরিদর্শনের ও বেশ কিছু বিশেষ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা পাই, নতুন সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভূ রাজনীতি সম্পর্কে জানা ও ছবি তোলার বিষেস আগ্রহের কারণে এমন সুযোগে কিছুটা রোমাঞ্চিতই ছিলাম, কিন্তু দক্ষিণ সুদানকে যতটুকু জানি তাতে কর্মী অসন্তোষ দূর করা, নির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ও বিচার, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের মতো কাজ গুলোকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়
অধিকন্তু দক্ষিণ সুদানের বেশ কিছু অঞ্চল সম্পর্কে ধারণা থাকলেও গন্তব্স্থল ইথিওপিয়ার বর্ডার ঘেঁষা এলাকা বোমা সম্পর্কে আদৌই কোনো ধারণা নাই, আর সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমাকে সত্যিই ভয় পাইয়ে দেয়, কিন্তু একই দেশে পূর্ব অভিজ্ঞতা, স্থানীয় আরবি ভাষায় মৌলিক যোগাযোগের সক্ষমতা ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে আন্তরিক ভাবে মিলতে পাড়ার যোগ্যতা কিছুটা হলেও সাহস যোগায়
সহকর্মীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সবগুলোকে পাত্তা না দিলেও খাদ্য সংকটকে কিছুটা আমলে নিয়ে ছোট সাইজের ৪ কৌটা টুনা মাছ, ২ প্যাকেট বিস্কুট, ১ প্যাকেট বাদাম, ১ কৌটা নিউট্রেলা ও মধু, এবং ম্যালেরিয়ার ওষুধ সাথে নিয়ে নেই
জুবা থেকে মাত্র দেড় ঘন্টার ফ্লাইট, জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা আমাদের মতো হিউম্যানিটেরিয়ান এইড ওয়ার্কারদের জন্য সপ্তাহে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে, আর যোগাযোগের এটাই একমাত্র মাধ্যম.
লক্ষস্থল বোমা পৌঁছে সহকর্মীদের থেকে প্রাপ্ত পূর্ব ধারণার দ্রুতই সত্যতা পেতে থাকি, তবে দুটো বিষয় খুব ভালো লাগে, পাহাড়ে ঘেড়া এখানকার ল্যান্ডস্কেপ, ও আধিবাসীদের আন্তরিকতা যা দক্ষিণ সুদানের অন্য কোথাও খুব বেশি চোখে পরে না
প্রথম দিনেই কাজের শেষে প্রিয় সহকর্মী ইয়ং কিসকে সাথে নিয়ে পুরো শহর/ বাজার (??) ঘুড়ে দেখতে খুব বেশি সময় লাগেনি, বাজার বলতে মূলত আম বা বড় কোনো গাছের নিচে তিন, চারটা চায়ের দোকান, টেবিলের মতো কিছু একটার উপরে রাখা দৈনিক ব্যবহার্য কিছু সামগ্রী নিয়ে মুদি টাইপের দুটো অস্থায়ী দোকান
দীর্ঘ আট বছর হিউম্যানিটেরিয়ান কাজে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন, ভিন্ন, পরিবেশে, সমাজে, এমন কি রিফ্যুজি ক্যাম্পে ও থাকার অভিজ্ঞতা আমার আছে, কিন্তু এখানকার অভিজ্ঞতা তার কোনোটার সাথেই মিলানো যায় না
একবিংশ শতাব্দীর এ যুগেও পৃথিবীতে এত দুর্গম, প্রযুক্তি, উন্নয়ন বঞ্চিত মানুষ থাকতে পারে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল,
এখানে মূলত মুড়লে, জীয়ে, ও কাশিপ সম্প্রদায়ের বাস, এর মধ্যে জিয়ে সম্প্রদায় আফ্রিকার অন্যতম প্রাচীন আদিবাসী হিসেবে গণ্য, একসময় হীরার বাণিজ্যে জড়িত ছিল এ সম্প্রদায়, আর এ এলাকা ছিল আফ্রিকার অন্যতম হীরা চোরাচালানের পথ, একসময়ের হীরার কারবারি এ মানুষগুলো আজীবন বাবহৃতই থেকেছে, ভূ রাজনৈতিক খেলা, বাণিজ্য বা অন্য কোনো অশুভ স্বার্থে অতি আদিম এ মানুষগুলোকে ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, উন্নয়ন বঞ্চিত রেখেছে যুগের পর যুগ, হীরার বিনিময় ও এদের কে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা গুলোকে নিশ্চিত করতে পারেনি, দিয়েছে স্বার্থ হাসিলের অস্র
এখানকার সবাই সৈনিক, প্রযুক্তির অন্যকোনো আশীর্বাদ বা অভিশাপের সাথে পরিচয় না থাকলেও মোটামুটি সবাই জনাব কেলাসনিকফের ৪৭ নম্বর অভিশাপে অভিশপ্ত, আমাদের দেশে গ্রামে যেমন টর্চ লাইট একটি অতি আবশ্যক বিষয় এখানেও নম্বর ৪৭ সবার হাতে, হাতে, নিত্য ব্যবহার্য কোনো ডিভাইস, অথচ এ যুগের এত পরিচিত মোবাইল ফোনটি পর্যন্ত এখানকার অধিকাংশের কাছে অপিরিচিত কোনো বস্তু
আমার সাথে থাকা অতি আধুনিক স্মার্ট ফোনটি দিয়ে কারো কারো ছবি তুলে দেখালে হয়তো জীবনে প্রথম নিজের চেহারা বা ছবি দেখে তাদের মুখে আনন্দের যে হাসিটি আমি দেখেছি, এতো সহজে আনন্দের এতো সহজ, সরল কিন্তু প্রগাঢ় রূপ আমি খুব বেশি দেখিনি
খাদ্যাভাবে পুষ্টিহীন কঙ্কালসার মানুষগুলোর খাদ্য সংকট ভেবে ভেবে অবলীলায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি, স্থানীয় সিম ও ভাতের পাশাপাশি দু, এক দিন স্থানীয় ভাবে রান্না করা ডালকেও অমৃত মনে হয়েছে
খাবারের এমন সংকটে আমি নিজেও কখনো পড়িনি, স্থানীয় খাবারের বাদে সাথে আছে মাত্র ৪ কৌটা টুনা যা সর্বশ্চ ৮ বার খাওয়া যেতে পারে অথচ ১৪ দিনে কম কম করে হলেও ২৮ বার খেতে হবে, ভরসা কেবল স্থানীয় রুটি, চা আর কন্টিনজেন্সি হিসেবে ব্যাগে রেখে দেয়া এক কৌটা মধু, তবে ভাগ্য ভালো যে নিউট্রেলা নামক এমন অবস্থায় জীবন রক্ষাকারী অন্য কিছুও সাথে আছে,
হাসির হলেও ছোট বেলায় করা দুর্গে সৈন্যের অংকের কথা মাথায় রেখে আমার সাথে থাকা খাবার আর অবশিষ্ট দিনের হিসেবে করে দৈনন্দিন ব্যবহার্য খাবারের একটা চার্ট তৈরী করেছি (এমন কি কয় পিচ্ বিস্কুট তার ডিটেলস ও আছে)
দায়িত্ব প্রাপ্ত কাজগুলো যতটা চ্যালেন্জিং মনে করেছিলাম বাস্তবে তার থেকেও চ্যালেন্জিং হয়ে ধরা দেয়, কনটেক্সট বিবেচনায় সমাধান করাগেলেও এখানকার অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আলোর পথ দেখানোর জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের পরিচালনাগত সমস্যার সমাধান অনেকটা অসম্ভব মনে হয়, কোনো অশুভ মহল হয়তো চায়না এখানে শিক্ষার আলো আসুক, সুনির্দিষ্ট সৈনিক গন্তব্যের বাহিরে কেউ মুক্ত পৃথিবীর, সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখুক, কিন্তু ১২ দিনের নিরলস চেষ্টা, স্থানীয় প্রশাষন, আর্মড গ্রুপ, সবার সাথে প্রায় প্রতিদিন মিটিং করে পরিচালনার পুনঃঅনুমোদনের সম্মতি পেয়ে তৃপ্তির যে হাসি আমি হেসেছি তা একজীবনের সুখস্মৃতিতে জমা হওয়া অনেক বড় সঞ্চয়….
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×