somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিঙ্কর আহ্সানের বই

১৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বই আলোচনা:

স্বর্ণভূমি (গল্পগ্রন্থ)

গল্পগ্রন্থ স্বর্ণভূমি-তে কিঙ্কর আহ্সান আরো পরিণত, শাণিত। গল্পে স্বর্ণভূমির জায়গাজমি নির্মিত। সমতল থেকে পাহাড় লালমাই অবধি বিস্তৃত তার গল্পের ভূখন্ড।
অচরিতার্থ প্রেমের এক অনন্য গল্প বয়ন হয়েছে ‘অসুখের গান’-এ ; এই তো গল্প যা পড়ে পাঠক বোধ করে জীবন ঠিক এমন নয় তবে এমন হতেও পারে। এই বোধের বলে কিঙ্করের প্রায় সব গল্পই আমাদের সম্মোহন জাগায়। কোলাহলের কারাগার-বাস্তবে আর সোনার হরিণের স্বপ্নে স্বর্ণভূমি আরো স্বর্ণাভ হয় যেন। নিসর্গসবুজ উদ্ভাসনে গল্পের মাঠ-ঘাট-দিগন্ত আরো নিবিড় একান্ত হয়ে উঠে। ‘পত্রকথন’-এর অবয়বে বকুল ফুল অজানিতে যেন আমাদের কাছেও মন খারাপ করা রঙবাহার নিয়ে উপস্থিত হয়। আর ‘কচুরিপানা জীবন’ এর মতো গল্প যে গল্পকার লিখতে পারেন সে নিশ্চয়ই অনেক দূর যাবে। একটা এলেবেলে মানুষ তোজাম্মেল ভালোবাসার সোনার রেখায় যেভাবে দশের ভিড়ে একাদশ হয়ে ওঠে তাকে কিঙ্কর অনন্য শিল্পদক্ষতায় চরিত্র হিসেবে নির্মাণ করে তোলেন। তোজাম্মেলের মতো আমরাও তখন বলে ওঠি- কচুরিপানা জীবনের চেয়ে মরে যাওয়া ভাল। নামগল্প ‘স্বর্ণভূমি’তে কিঙ্কর তার স্বর্ণস্বাক্ষর রাখলেন যেন। এক দিনের নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে সমকালীন কেঁচোবাস্তবে বেঁচে থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাওয়া লেখককে প্রতিতুল্য করে সময়ের সামগ্রিক মৃত্যুলক্ষণকেই ইঙ্গিত করেন গল্পকার যেখানে একদিন বয়সী শিশুর মৃত্যু নিরুপায় লেখককে নতুন একটা গল্পের প্লট দেয় মাত্র। এভাবেই কিঙ্কর আহ্সান তার নিজস্ব কথকতা ও ভাষার রক্তে-সংবেদের বলে অনায়াসে আমাদের কণ্ঠ থেকে ধ্বনি তোলেন বাংলা ছোটগল্প মরে যায়নি, এই তো কিঙ্কর আহ্সান নামের একজন সুগাল্পিকের সন্ধান পাচ্ছি।

-পিয়াস মজিদ

রঙিলা কিতাব (উপন্যাস)

এই উপন্যাসের কোথাও 'বর্ণচোর' নন কিঙ্কর আহ্সান। দিকে দিকে যখন শুধুই নস্টালজিয়া, পিছুটানের পরম্পরা আর ইতিহাসজীবি পলায়নপর সাহিত্যিকের সাহিত্য-পসরা, সে সময় কিঙ্করের 'রঙিলা কিতাব' সমসায়িক বাংলাদেশের নগদ-চিত্র। এ উপন্যাসে পাঠকের সম্মুখে ঘটবে খুন-খারাবি, সোবহান মেয়ার পোলের পাশে লাশের বদলে লাশ ভেসে উঠবে পাঠকের চোখে, ক্ষমতালিপ্সু মানুষেরা পথের কাঁটা সরাতে দেরি করবে না সেখানে। আজকের বাংলাদেশের অদ্ভুত আঁধারের 'জোনাকি' রঙিলা কিতাব। প্রদীপরা নওরোজ শাহের নির্দেশে শত্রুকে খুন করে পালিয়ে আজীবন হবে অনিকেত। বাংলা থেকে ভারত, ভারত থেকে নেপাল--দেশান্তরি হয়ে খুনের পাপে ফুল হয়ে ফুটে থাকবে পথে-প্রান্তরে। মৃত্যুযাত্রীর মনে পড়তে থাকবে পরিজনের কথা। দাবার গুটির চালের মতো ক্ষমতালোভীর রাজনীতির চালে মীমাংসিত হবে জীবন-খেলা। জিতবে বণিক-ব্যবসায়ী। পুঁজিবাদী গ্রহে যার টাকায় রাজনীতিক চরিত্রটি নির্মিত হয়, কখনোবা ব্যবসায়ী খোদ বনে যাচ্ছে রাতারাতি নেতা--জীবনের বিরুদ্ধে টাকার খেলা। জাহাঙ্গীররা কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই করে ফেলবে বিশ্বাসঘাতকতা। এই দুষ্টচক্র আবর্তিত হতে থাকে স্বাধীন বাংলাজুড়ে। ব্যক্তিস্বার্থ কায়েমে জনগন আজন্ম বোকাসোকা। ভালো কেউ, যেমনটি এই উপন্যাসে এমপি, খুনে মরে মিথ হয়ে যান। উপনির্বাচনে কেন্দ্র চাইবে এমপির বিধবা স্ত্রীকে--ইমোশন, মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে এমপির ভাই জয়নালরা--সুযোগের সৎব্যবহারে এমপি-মন্ত্রী। কিন্তু 'ইঁদুরে কপাল'এ আচমকা একটা ধেঁড়ে ইঁদুর এসে পড়ে। সেই ইঁদুরই নওরোজ শাহের কাছের একজন যে মাত্র পাঁচদিনে পুরো শহরের রাজনীতির গল্প বদলে দেয়। প্রদীপের স্ত্রী সুপ্তির নতুন শিশু আর কাছের একজনের রাজনীতির বয়স একসাথে বাড়বে, বাড়ছে। ভারাক্রান্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ। গন্তব্য কোথায়?
কিঙ্কর সাবলীল গদ্যে এসবই লিপিবদ্ধ করেছেন 'রঙিলা কিতাব'এ। উপন্যাসটি এভাবেই সত্যিকারের কিতাবের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়।

-মেহেদী উল্লাহ্



লেখক পরিচিতি:

প্রথম আলোর ‘বন্ধুসভা’ পাতায় লেখালেখি শুরু। তারপর টানা পাঁচ বছর লিখেছেন প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’ ‘স্বপ্ন নিয়ে’ ‘খোলা কলাম’ সহ আরও নানান পাতায়। বাংলানিউজ ২৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন, পরিবর্তন সহ দেশের প্রায় সব শীর্ষ দৈনিক পত্রিকায় লিখেছেন ছোট গল্প। কালের কন্ঠের ‘বাতিঘর’ পাতায় সাব এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন।
লেখালেখির পাশে এসময় হাত পাকিয়েছেন ফিল্মেও। কাজ করেছেন জ টিভির জন্যে। ‘পাতার নৈাকা’ ‘ক্রিং ক্রিং’ এবং ‘জলপরানি’ টেলিফিল্মের কাজ করে হয়েছেন প্রশংসিত। ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ টিভি শো এর সহকারী স্ক্রিপ্ট রাইটার এর কাজ করেছেন। ‘মার্কস অলরাউন্ডার’ ‘হাসতে মানা’ ‘হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ নেভী’ এর প্রধান স্ক্রিপ্ট রাইটার ছিলেন।
কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সংঘ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, কন্ঠশীলন, মুক্তআসর, বিল্ড বেটার বাংলাদেশ সহ আরও অনেকগুলো সংগঠনের সাথে। ব্লাইন্ড স্পট ডট এন্টারটেইনমেন্ট, ব্লু বিজ সহ আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী এর জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করেছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন চ্যানেল আইয়ের ‘আই পজিটিভ কমিউনিকেশন’ -এ অ্যাসোসিয়েট ক্রিয়েটিভ গ্রুপ হেড হিসেবে।
বিজ্ঞাপনের জগতে পুরোপুরিভাবে জড়িয়ে নিয়েছেন নিজেকে। সবকিছুর পরেও লেখালেখিই কিঙ্কর আহ্সানের আসল জায়গা। তার সর্ম্পকে এক কথায় বলতে গেলে তার বুবুর কাছ থেকে শোনা কথাটা বলতে হবে। ‘মাটির মানুষ ছেলেটা তবুও আকাশে ডানা মেলে ওড়ার আজন্ম সাধ তার।’ কিঙ্করকে নিয়ে তার বুবুর ভাবনাটা মিথ্যে নয়।
এ পর্যন্ত চারটি বই লিখেছেন তিনি। বইমেলায় প্রকাশিত তার বই আঙ্গারধানি (উপন্যাস), রঙিলা কিতাব(উপন্যাস), স্বর্ণভূমি(গল্পগ্রন্থ) এবং কাঠের শরীর(গল্পগ্রন্থ) দারুণ সাড়া পেয়েছে। । শুভকামনা রইল। ডানা মেলে উড়ুক আকাশে এ লেখক এই প্রার্থনাই করি আজ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×