ইমাম মাহদী (আ.) কে?
ইমাম মাহদী (আ.)-এর পূর্ণ নাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আল-আসকারি (আ.)। তিনি দ্বাদশ ইমাম এবং একমাত্র ইমাম যিনি এখনো জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়। তার পিতা ছিলেন একাদশ ইমাম হাসান আল-আসকারি (আ.) এবং মাতা ছিলেন নারজিস (বা নرجিস) নামক এক মহিয়সী নারী।
জন্ম:
তারিখ: ১৫ শাবান, ২৫৫ হিজরি (৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ)
স্থান: সামারা, ইরাক
অন্তর্ধান (Occultation / গায়ব) কী?
দুই ধরণের অন্তর্ধান:
১. ছোট অন্তর্ধান (Ghaybat al-Sughra):
৮৭৪–৯৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, প্রায় ৬৭ বছর। এই সময়ে ইমাম মাহদী (আ.) সরাসরি প্রকাশ্যে আসেননি, তবে তিনি তাঁর চারজন নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে (যাদের বলা হয় "সুফরা" বা "নাইব") তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
চারজন প্রতিনিধি:
1. উসমান ইবনে সাঈদ
2. মুহাম্মাদ ইবনে উসমান
3. হুসেইন ইবনে রুহ
4. আলী ইবনে মুহাম্মাদ আল-সমরী
শেষ প্রতিনিধি আলী ইবনে মুহাম্মাদ আল-সমরী ইন্তেকালের আগে ঘোষণা করেন যে এরপর আর কোনো প্রতিনিধি থাকবে না—এবং শুরু হবে বড় অন্তর্ধান।
২. বড় অন্তর্ধান (Ghaybat al-Kubra):
৯৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয়ে এখনো পর্যন্ত চলমান। এই সময়ে ইমাম মাহদী (আ.) কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না এবং প্রকাশ্যে আসেননি।
অন্তর্ধানের কারণ ও তাৎপর্য
ঐতিহাসিক কারণ:
আব্বাসীয় খিলাফত তখন ইমামদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করত এবং ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী “একজন মাহদী” যিনি অন্যায় ও জুলুম শেষ করে পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন—তাঁকে তারা হুমকি মনে করত।
হাসান আল-আসকারি (আ.)-কে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছিল এবং তাঁর সন্তানের অস্তিত্ব গোপন রাখা হয় ইমাম মাহদী (আ.)-কে রক্ষা করার জন্য।
আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা:
আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি অন্তর্ধানে আছেন, যেন নির্দিষ্ট এক সময়ে তাঁর আবির্ভাব হয়, যখন মানবজাতি সর্বোচ্চ দুরবস্থায় পৌঁছবে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত হবে।
এটি শিয়া ধর্মীয় দৃষ্টিতে এক প্রকার পরীক্ষা—যেখানে মুমিনদের ধৈর্য, আনুগত্য ও ঈমান যাচাই হয়।
দার্শনিক অর্থ:
ইমাম গায়েব থাকলেও তিনি অদৃশ্য নেতৃত্ব বা spiritual guidance দিয়ে থাকেন।
এই ধারণা মুসলিম চিন্তায় এক বিশেষ ধরনের অপেক্ষার সংস্কৃতি (culture of anticipation) তৈরি করেছে, যেখানে ন্যায়, মুক্তি ও বিশ্বশান্তির আশায় মানুষ অপেক্ষা করছে।
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের প্রতিশ্রুতি
বিশ্বাস:
শিয়া বিশ্বাস অনুসারে, একদিন ইমাম মাহদী (আ.) আল্লাহর আদেশে আবির্ভূত হবেন এবং দুনিয়া থেকে সমস্ত জুলুম-অন্যায় দূর করে ইনসাফ ও শান্তি কায়েম করবেন।
লক্ষণ:
আবির্ভাবের আগে পৃথিবী থাকবে অরাজকতা, দুর্নীতি, যুদ্ধ, এবং বিভ্রান্তিতে পূর্ণ।
তিনি রাসূল (সা.)-এর উত্তরসূরি এবং আহলে বাইতের একজন সদস্য হিসেবে ন্যায়ের আলোকবর্তিকা হবেন।
সুন্নি মতবাদে মাহদী সম্পর্কে ধারণা
সুন্নি ইসলামেও মাহদী বিশ্বাস বিদ্যমান, তবে সেখানে তাঁর জন্ম, গায়েব থাকা বা বারো ইমাম তত্ত্ব নেই। তাদের মতে, মাহদী হবেন ভবিষ্যতে আগত এক ন্যায়পরায়ণ নেতা যিনি ইসলামের পতাকা উঁচু করবেন এবং যীশু (আ.)-এর সঙ্গে একত্রে দাজ্জালকে পরাজিত করবেন।
আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ
কিছু আধুনিক পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক এই মতবাদকে রাজনৈতিক সংকটকালে শিয়া সমাজে আশার উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
আবার অনেকে এটিকে আধ্যাত্মিক প্রতীক হিসেবে দেখেন—যেখানে "মাহদী" মানে এক আদর্শ নেতার চেতনা, যিনি সব যুগেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অনুপ্রেরণা জোগান।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




