বাবা,তোমরা কতই না ভাগ্যবান ছিলে!
মান্না দে,নজরুল,রবিন্দ্রকে পেয়েছ,শের-ই-বাংলা,বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছে, পেলে,ম্যারাডোনা, ক্রুইফকে পেয়েছ, তেমনি তোমরা নাৎসি,পাকদের বিভিষিকা দেখেছ।
তোমরা জীবনকে কত কাছ থেকেই না পরখ করে দেখতে পেরেছ।
মান্নাদে,জগজিৎ,শংকরের গান তো আমরাও শুনি,বাবা।শুধু তোমাদের মতো কফি হাউজের আড্ডায় চোখের কোণে জল ছলছল করে না।তোমাদের ওই জলের হেতু আমরা কখনও বুঝতে পারিনি।
এই বর্ষায় তোমাদের নির্লোভ তাস খেলা,বারান্দায় আড্ডা পাতা, কতই না সুমধুর ছিলো সে বর্ষা।বারান্দা তেমনই আছে,শুধু তোমরা নেই বলে আড্ডা হয় না।
তোমরা তোমাদের মতো বেচেঁছ,আমরা আমাদের মতো।দুই প্রজন্মের মধ্যে হয়ে গেছে শতাব্দির তফাৎ।চিঠি আছে আজও বাবা,ও তোমরা বুঝবেও না,ই-চিঠি।চোখের কোণ বেয়ে জল কপোলে আছড়ায় না,এমনি চিঠি বাবা,ভাবতে পেরেছ কি কখনও?
তোমাদের ফাল্গুনির 'শাপ' মোচিত হয়েছে, এখন আর কেউ ওটা পড়ে কালক্ষেপন করে না।ভালবাসার নির্লোভ যে ছবি তোমরা এঁকেছ,ভালবাসা তেমনি আছে,শুধু সেভাবে বাসা হয় না।ক্যানভাসগুলো আজ ভরে গেছে চাওয়া-পাওয়ার অসংখ্য অবয়বে।
আমাদের বাঙালীয়ানার স্বাদ দিবে বলে তোমরা যুদ্ধ করেছিলে না? আমরা বাবা বাঙলী হয়েছি, হাফপ্যান্ট পরে পথ চলতে শিখেছি আরও কত কি?
আমরা এখন বাস চলতে চলতে মেয়েদের গায়ে হাত মেরে দেই,কত সুন্দর না আমাদের সমাজ! তোমরা আইয়ুবের বিরুদ্ধে সমাবেশ করতে আসতে,আমাদেরকে বুকে ধরে আদর করে আসতে,তোমাদের চোখে থাকতো মৃত্যুর নেশা।আমরাও সম্মেলন করি এই হাত মারার বিরুদ্ধে।তোমরা কিন্তু টাকা পেতে না,আমরা লাভবান,টাকা পাই!
বাবা,হাফপ্যান্ট পরে আমরা বাঙালীয়ানার ঝান্ডা উড়াই,ভেবেছ কি কখনও? রাস্তায় চলতে চলতে তোমরা রেডিও ছাড়া কি কিছু শুনেছ? আমরা কত না আজব গান শুনি,ও তোমরা বুঝবে না।আমরাও বুঝি না বাবা।ভেবেছ অজানা কোন টানে হয়ত শুনছি,ভুল বুঝেছ বাবা।অন্যকে দেখাই আমরা কতই না শিক্ষিত।
তোমরা পৌষে নতুন চালের ভাত খেতে কি যেন একটা উৎসব করতে? আমরা সেটা করি না।আমরা পহেলা বৈশাখে বর্ষ বরণ করি।পান্তা ইলিশ খাই।লোভ করো না,অনেক দাম।তোমরা কিনতে পারতে না।জানো,বর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে আমরা কত যে মজা করি! গান শুনি,ছবি আঁকি,ছেলেরা পাঞ্জাবী আর মেয়েরা শাড়ি পরি,বেড়াতে যাই, বেড়াতে গিয়ে ভীড়ের মধ্যে মেয়েদের কাপড় টেনে খুলে ফেলি আরও কত কি?
লজ্জা পাচ্ছো বাবা? এ আর এমন কি, আমাদের যুগে কত খারাপ খারাপ ভিডিও আমাদের কাছে থাকে,তার কি হিসাব আছে? জানো, বাঙলী মেয়েদেরও ভিডিও পাওয়া যায় এখানে।ভাবছ,আমরা বেহায়া।তাহলে শোন,আমরা কিন্তু একশটা ধর্ষণ করে তা সেলিব্রেট করি।
বাবা,বিরক্ত হচ্ছো?
তবে থাক,অন্যদিন সময় হলে বাকিটা শুনবে,কেমন?
বাবা,তোমরা ভালো করেছ মরে গিয়ে,হয়ত এসব সইতে পারতে না।তোমাদের আত্মসম্মানবোধ ছিলো,আমরা ওটা বটতলার হাটে বেচেঁ দিয়েছি। তোমরা আর আসতে পারবে না,এখানে আসতে হলে ওটা বেচেঁ দিতে হয়।তোমরা কি কখনও তা পেরেছ?
তোমরা,ওখানে ভালো থেকো,তোমাদের স্যালুট।