ঢাকায় যখন ছিলাম তখনকার ঘটনা, ২০০৯ সাল, একমাত্র টার্গেট ইনস্টিটিউট আই বি এ থেকে ছ্যাঁকা খেয়ে তখন ইউ বি সি আসার প্রিপারেশন নিচ্ছি, ওই সময় টায় বাসার কাছে সংসদ ভবন হওয়ায় খুব হাঁটাহাঁটি করতাম, টাইম বেঁধে না ঠিক, কোনদিন ভোরে তো কোনদিন সন্ধ্যায়, হাঁটার সুবাদে চন্দ্রিমা/ সংসদ ভবনের সামনে ঘুরতে আসা লোকজন খুব মন দিয়ে দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়েছিল,
কয়েক দলে বলি,
প্রেমিক গ্রুপঃ ক্যাফে বা ফাস্ট ফুডে কয়দিন আর যাওয়া যায়, হাত টান পড়লে নেচার এক্সপ্লোর করতে চলে আসে, সব গ্রুপের লোকজন আছে এই দলে, পাকা দাঁড়ি ওলা হুজুর থেকে শুরু করে ১৫ বছরের কিশোর, এক আধ গজ ফাঁকা দিয়ে বসে থাকে সংসদ ভবনের পেছন দিকটায় আর চন্দ্রিমার ওইদিকে, টহল পুলিশ আসলে নড়ে চড়ে বসে আর চলে গেলে আকণ্ঠ প্রণয়ে ডুব দেয়।
কামি গ্রুপঃ সন্ধ্যার দিকে গেলে এদের দেখা মেলে, মধ্যবিত্ত বেশে ওড়না টেনে পাশ কাটিয়ে আসতে গেলেও গলা নামিয়ে বলার চেষ্টা করবে " রেট কত?"
ভ্যাগাবন্ড ছাত্র দলঃ এরা আসে মেয়ে দেখতে আর বিড়ি ফুঁকতে, চোখে মুখে আসীম ভাব নিয়ে চোখ কোনা করে মেয়ে দেখে, এঁকে ওকে খোঁচা মারে।মাঝে মাঝে কমেন্ট, ২ বার এই পাল্লায় পড়সিও তখন এদের চোখের দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসি দিয়ে চলে আসছি
ফিটনেস সীকারঃ অনেকে ২ বেলা গাড়ি করে গুলশান থেকে ড্রাইভ করে আসে হাওয়া খেতে, হাজার হোক ফ্রেস হাওয়া!
টোকাই গ্রুপঃএদের প্রতি আমার আগ্রহটা বেশী, কাজ কারবার দেখতাম, এর ওর সাথে ঝগড়া একটা লজেন্স বা কুড়িয়ে পাওয়া চকমকা টইপ কোন জিনিষ নিয়ে, " আপা ২ টা টাকা দিবেন?" এইভাবেই কথা শুরু হয়ে গেল গল্প টা ওদের নিয়েই, কি নাম- কই বাড়ি, স্কুলে যায় কিনা এইভাবে কথা চলতে থাকলো, কিছুদিন বাদে চিনেও গেল মনে হয় একটু আমাকে, কিংবা হয়ত আমার বুঝার ভুল কত মানুষই তো এইরকম সহানুভূতি দেখিয়ে নিজেকে মহানুভব জাহির করে ফেলে ঠিক আমার মত করেই। একদিন চন্দ্রিমার সিগনালে গাড়ি থামল, ১টা ১০-১২ বছরের ছেলে এসে বেলী ফুলের মালা সাধল, আমার কাছে টাকা নাই অপরাধি মুখ করে বলালম "ভাইয়া টাকা নাই যে, আজকে থাক", এর মাঝে সিগন্যাল ছেডে দিল আর আমি দেখলাম টুপ করে মালা ২টা এসে পড়ল আমার কোলে সাথে একটা চিৎকার "টাকা লাগবো না আপা, খুশি হইয়া দিসি", তার কিছুদিন বাদে সংসদ ভবনের সামনে থেকে ওই বান্দা আর তার ভাই কে পারকড়াও করলাম, বললাম, বাড়ি চল আজকে রান্না করে খাওয়াবো, কিছুতেই যাবে না বলে "আপনে ছেলেধরা!!" আমি তো পড়লাম ফাঁপড়ে আমার জোরাজুরি তে বালকদ্বয়ের মা এসে হাজির, আমি বুঝায়ে বললাম যে আমার বাসা কাছেই আমার খুবি ইচ্ছা ওদের একটু রান্না করে খাওয়াবো, আর চাইলে উনি ও আসতে পারেন সাথে সমস্যা নাই, তার একটু বাদে ৪ জনের দল বাসার সিকিউরিটির ট্যারা লুক পাত্তা না দিয়ে ধরে ঢুকলাম, আম্মুকে গিয়ে ঘোষণা দিলাম যে রান্না আজকে আমি করব, গেস্ট আছে, জিজ্ঞেস করলাম "কি খাবে? মাছ না মাংস?" বলল " পুলাউ, মাংস, মাছ, ডিম", তখনো রন্ধন পটু ছিলাম না পোলাউ বাদ দিয়ে বাকি মেন্যু রান্না হল, কার্টুন আর হেভি খাওয়া দাওয়া হইল, আমার মাতা চামে কিছু রাজনীতির নলেজ দিল ভোটার তালিকাভুক্ত মাতা কে, তার মাস খানেক পরের কথা, ক্যানাডা চলে আসার ঠিক আগে আগে, তখন আর বেকার নাই, ভিসা আর ইউনি অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে ঝামেলায় আছি, একদিন বাসায় ফিরার পথে দেখি ২ই পিচ্চি, উচ্ছাসিত আমি বিশাল হাসি দিয়ে বললাম, "চিনতে পারস??" ব্ল্যাঙ্ক একটা লুক দিয়ে এক জন হাত বাড়ায়ে দিয়ে বলল, " আপা ২টা টাকা দিবেন?" আফসোস সেদিনও টাকা ছিলো না, আমি কিছু বলতেও পারি নাই, যাদের ২ মাস কাটে অনাহারে তাদের কাছে একদিনের খাবার ম্যাটার করে না, এইটা মনে রাখার কিছু না, এটা ওরা বুঝে যে এইসব বড়লোকের বিলাসী খেয়াল ছাড়া কিছু না, পরের বেলার খাবার জুটাতে সেই হাত পাতাই যে সম্বল,
আমিও তো পারতাম ওদের একজন হতে, স্রস্টার শুকুর করতে শিখেছি ছোটবেলা থেকে বাট এ স্রস্টার কেমন বিচার কাউকে পাঠায় সোনার/ রুপোর চামচ দিয়ে আর কাউকে ধুলোমাটিতে? কে কার ঔরষে জন্মাবে তা কিসে নির্ধারণ করে? এ তার কেমন বিচার? এই পৃথিবীর বুকে অনাচার মানব জাতিরই সৃষ্টি কিন্তু স্রস্টা তো সকল শক্তির আঁধার? তিনি কেন তার সৃষ্টির বৈষম্য সহ্য করেন? সব কিছু ধ্বংস আর এলোমেলো হয়ে যায় না কেন?