
১. দরিদ্র এক মহিলা, কোন এক ভাবে আম্মুর সাথে পরিচিত। সে যাইহোক, মহিলা কিছুটা কষ্ট করে ছেলেকে দুবাই পাঠায় ২০০৭-০৮ সালের দিকে। ছেলে কয়েক বছর দুবাই কাজ করে মনে হয় দালাল কে টাকা দেয় ইউরোপ যাবার। একদিন সকালে ঘুম ভাংগে এই মহিলার মরা কান্নার শব্দে। পড়ে শুনি তার ছেলেকে দালাল কোন এক দেশে আটকায়ে আরো টাকার দাবি করতেছে। টাকা না দিলে মেরে ফেলবে, ছেলে ও ফোনে সেই কান্নাকাটি, মারধোর, ক্ষুদার কষ্ট ইত্যাদি! মহিলা দালালের নিকট অনেক কাকুতিমিনতি করে বলে; বাবা আমি যেমনে পারি টাকা দিমু, আমার পোলারে আর মারিছ না ; দালালের ভাষ্য-
"মাগি!!! বাবা বাবা চোঁদাইস না"!
জ্বলদি টাকা না পাঠাইলে তোর পোলারে মাইরা লামু!
সেই মহিলা যার কাছে যা সম্ভব কিছু সাহায্য নিয়ে আর একখন্ড জমি বিক্রি করে দালালকে টাকা পাঠিয়েছে। ছেলে মনে হয় পরবর্তীতে টার্কি, গ্রীস কয়েক দেশ হয়ে ইতালি আশ্রয় নিয়েছে। দেশে এসে বিয়ে করে বউ নিয়ে গেছে বাচ্চা আছে; সেই মহিলা কে ও নাকি ইতালি নিয়ে ঘুরায়া আনছে।
২. আমার মেজো ভাইয়া গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে যুক্ত; ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান তাঁদের কাছে আসে এক্সসারিজের কাজ নিতে। জ্ঞাতার্থে একটু বলে রাখি, একটি শার্ট, টিশার্ট, প্যান্ট এর সবকাজ গার্মেন্টসে একার পক্ষে সম্ভব না! প্রাইসট্যাগ, হ্যান্ডট্যাগ, লগো, স্টিকার, বাটন ইত্যাদি খুচরা কাজগুলো বিভিন্ন সাপ্লাইয়ার কে দিয়ে দেওয়া হয়। আবার প্রাইজ কম বা কোয়ালিটি ভালো হলেই যে সেম্পল এ্যাপুভ করে এমনটি নয় বরং দীর্ঘদিনের জানাশোনা, পরিচিতি, রেফারেন্স, ট্রেক রেকর্ড, অন টাইম সাপ্লাই দেওয়ার মতো বিষয়গুলো দেখে গার্মেন্টস কাজ করতে পছন্দ করে।
এমন এক যুবক এক্সসারিজের মাল ডেলিভারি দিতে প্রায় গার্মেন্টসে আসতো; সে ছিল কোন এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দীর্ঘদিন গার্মেন্টসে যাতায়াতে ছেলেটির একটি ভালো লিংক আপ বা পরিচিতি হয়ে যায়। বয়সে তরুন, উদ্যোমী এক যুবক ; এরপর কিভাবে কিছু টাকা যোগার বা ধার-দেনা করে; সে কিছু পুরাতন চায়না এ্যানালগ মেশিন কিনে নিজেই ছোট একটি বাসায় কারখানা দিয়ে হ্যান্ডট্যাগ উৎপাদন শুরু করে। যেহেতু ছেলেটি গার্মেন্ট লাইনে দীর্ঘদিনের পরিচিত এবং ছোট একটি ওয়ার্ডার পেতে তার তেমন কষ্ট করতে হয়নি; আর বড় প্রডাকশনের একটি ছোট ওয়ার্ডারের প্রফিট ৬-৭ ডিজিটের পর্যন্ত হয়ে থাকে। অথচ এই যুবক গ্রাম থেকে উঠে আসা তেমন শিক্ষিত বা পড়াশোনা জানা কেউ না; ঢাকায় অল্প বেতনে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করেছে।
দারিদ্র, কষ্ট, সংগ্রাম পুরুষ মানুষের অলংকার স্বরুপ। একজন পুরুষ যত বেশি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবে সে ততই দৃঢ় আর শক্তি সঞ্চয় করে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে সাহস পাবে । আর্থিক দৈন্যদশা বেঁচে থাকার সংগ্রাম মানুষকে ঝুঁকি নিতে শিখায়। আর লক্ষ্যে স্থির করে কোন কিছুর পিছনে লেগে থাকলে কোন না কোনভাবে সফলতা আসবেই। এই কথাগুলো বাপ-চাচাদের মুখে শৈশবে অনেক শুনতাম কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এখন একদম অন্তর থেকে অনুভব করি।
একটু ক্যাঁচাল দিয়ে শেষ করি! ব্যাবসায়ীক ঝুকির মতো রাজনৈতিক ঝুঁকিতে ও সফলতা আছে। কিন্তু শত বাধা চওড়া পেরিয়ে দৃঢ় চিত্তে লেগে থাকতে হবে। যার ঝুঁকি যত বেশি তার লাভের গুড় তত মিষ্টি। এনসিপির নেতৃবৃন্দের ৫ তারিখের ঝুঁকি আর দীর্ঘদিনের ক্ষুদা দারিদ্র্য সংগ্রামের সফলতা এখন নিয়োগ, চাঁদাবাজি, ট্রান্সফার বানিজ্যর মাধ্যমে সুফল ভোগ করছে, ওয়েস্টিনে হাঁস খাচ্ছে; অপরদিকে নুরু ও যুবলীগের নয়ন দীর্ঘদিন সরকার-ছাত্রলীগ দ্বারা নির্যাতন নিপীড়িত হয়ে এখন চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী করে বিপুল পরিমাণ টাকা কামাচ্ছে। ছাত্রলীগের যেই ছেলেটা নিউইয়র্কে ডিম মেরে কারাগারে থেকে জামিনে বের হয়েছে ; সে হয়তো লেগে থাকলে এর সুফল একদিন ভোগ করবে। কারন "every dog has its own day".....
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


