
ব্লগে দেখছি ইদানিং সমকামীতা নিয়ে কিছুটা মিস কনসেপ্টশন দেখা দিয়েছে। বিবাহিত "এক কন্যার পিতা" এক ব্লগার কে "গে" বলে দিচ্ছে। আবার আরকেজন ব্লগার ছেলে-ছেলে, মেয়ে-মেয়ে কাজকর্ম নাকি শারীরিক চর্চা বলে মনে হচ্ছে।
প্রথমে আমার অনুরোধ থাকবে, নিজের অজ্ঞতা ও সঠিক ধারনা ব্যাতিত পাবলিক প্লেসে বা কোন প্লাটফর্মে এইসব বিষয় নিয়ে হাশি-তামাশা, সমালোচনা করা ঠিক নয়। ধর্মের মতো ইহা ও অনেক সংবেদনশীল একটি বিষয়। অসাবধানতাবশত অযাচিত কর্মকাণ্ড আগুনে ঘি ঢালার মতো ইহা কখন বিস্ফোরণ হয় তা কে জানে?
সমকামিতা কে LGBTQ+ দিয়ে প্রকাশ করে থাকে, এবং প্রতীক হিসেবে রংধনুর সাতটি রং কে ব্যবহার করা হয়। LGBTQ+ এর মানে হচ্ছে যথাক্রমে
L - লেসবিয়ান (নারী সমকামী)
G - গে(পুরুষ সমকামী)
B - বাইসেক্সুয়াল(উভয় লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ)
T - ট্রান্সজেন্ডার(যাদের লিঙ্গ পরিচয় জন্ম নির্ধারিত লিঙ্গের সাথে মেলে না)
Q - কুইয়ার(প্রথাবিরোধী লিঙ্গ ও যৌনতা সম্পর্কিত পরিচয়)
+- অন্যান্য বহু যৌন Orientations ও লিঙ্গ পরিচয় (যেমন: ইন্টারসেক্স, অ্যাসেক্সুয়াল, নন-বাইনারি ইত্যাদি)
কয়েক দশক পুর্বে ও সমকামীতা কে সামাজিক ট্যাবু হিসেবে ধরা হতো। এই গোষ্ঠীর মানুষেরা গোপনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ক্লাবে মিলিত হতো। ওবামা প্রশাসন আমেরিকাতে সমাকামী ম্যারেজ বৈধতা দেওয়ার পর ইহা সারাবিশ্বে আলোড়ন তোলে এবং বিভিন্ন দেশে তাদের প্রভাব ও সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকাশ্যে মিলিত হতে থাকে।
এখন প্রশ্ন আসে একজন মানুষ কেন সমকামী হয়?
বিষয়টি যতটা না জেনেটিক তার থেকে ও বেশি সামাজিক। ভালোবাসায় প্রতারিত হয়ে, ডিভোর্সের পর অনেকেই মেয়েদের উপর আগ্রহ ও বিশ্বাস হারায়ে সমকামীতায় লিপ্ত হয়। অনেক ইয়াং জেনারেশনের মিডিয়া, ছবি, গান, ফ্যাশন এসব থেকে প্রভাবিত হয়ে কৌতুহলী বশত সমকামিতা এক্সপ্লোর করে। আবার পশ্চিমা সংস্কৃতিতে যেহেতু ধর্মের উপস্থিতি কম এবং প্রাপ্ত বয়সে একা থাকা বা পারিবারিক বন্ধন খুবই দুর্বল; এই বিশাল স্বাধীনতা তখন নিজ সত্ত্বাকে ঈশ্বর ভাবতে শুরু করে।
সমকামীরা সাধারণত খুবই ইমোশনাল এবং কোমল হৃদয়ের হয়ে থাকে। এরা নিজেকে খুবই মেইনটেইন করে। কোন "গে" দেখি নাই গায়ে দুর্গন্ধ কিংবা নোংরা জামাকাপড় পড়ে। প্রতারণার প্রবনতা খুবই কম, নিজের পাটনার কে খুবই যত্ন ও মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়ে থাকে। এই ফলে ও অনেকে সমকামীতায় প্রভাবিত হয়।
এবার আসি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে:
আব্রাহামিক রিলিজিয়নে সমকামীতা একটি গর্হিত অপরাধ। ইহা সরাসরি প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ এবং মানব প্রজনন ঐশ্বরিক উপায়ের স্বাভাবিক গতির সাথে সাংঘর্ষিক। সমকামিতা বা প্রাকৃতিক বিরুদ্ধে যেয়ে যৌনাচারের কারনেই হযরত লুতের কাওমকে জমিন থেকে আকাশে উঠায়ে উল্টায়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।
যাইহোক, সমকামীরা আমার-আপনার মতো মানুষ, আমাদের বন্ধু-বান্ধব সহপাঠী। ইহা বাংলাদেশে হয়তো নতুন বিষয় তাই বুঝতে বা মানাতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের কে ব্যাঙ-বিদ্রুপ, হটকারী তা সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়াবে তরুণদের প্রভাবিত করবে। একজন সমকামী কখনো অনুমতি ব্যাতিত (গে নাকি স্টেইট) পছন্দের মানুষের গায়ে ও হাত দেয় না। তাঁদের কে তাদের মতো থাকতে দিন।

আমার জীবনের একটা অংশ মালয়েশিয়াতে কাটায় প্রচুর 'গে' বন্ধু আছে। তাঁদের কাছে শিখেছি ও বিস্তারিত অনেক জেনেছি। "এরাবিক" প্রচুর মানুষ আছে সমকামী, ধর্মীয় বাধা নিষেধ থাকায় অন্য দেশে যেয়ে ক্লাবিং করে।
একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় বলে শেষ করি- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় "এনিগমা" নামে একটি জার্মান কোডিং মেশিন ব্রেক করে এক ইংলিশ ম্যাথমেটিশিয়ান। ধারনা করা হয় এর ফলে যুদ্ধের সময়কাল ৪ বছর কমে যায়। এই মেধাবী মেথমেটিশিয়ান অ্যালান টুরিং ছিলেন একজন "সমকামী"। তখন ইংল্যান্ডে সমকামিতা নিসিদ্ধ থাকায় ১৯৫৪ সালে তিনি সুইসাইড করেন। অফিসিয়ালি ২০০৯ সালে বৃটিশ গভর্নমেন্ট এবং রানী ২০১৩ তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


