somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই আন্দোলন

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

 হঠাৎ দেখি এলোমেলো ভাবে চলা সব গাড়িগুলো এক লাইনে চলছে, ডানদিকে একটা লেন খালি রেখে। ইউনিফর্ম পরা একটা ছেলে আমার গাড়ির সামনে আসলো, ড‍্যাসবোর্ডে রাখা লাইসেন্স দেখে ড্রাইভারকে বললো, "আঙ্কেল ডানদিকের লেনটা ইমারজেন্সি লেন, ওটা খালি রাখেন।" আজ সকাল সাড়ে দশটায় মানিক মিয়া এভিনিউ মুখী আড়ং এর সামনে আমার গাড়ি সিগনালে আটকা থাকলেও সেই ইমার্জেন্সি লেন দিয়ে তিন-চারটা অ্যাম্বুলেন্স সাঁ সাঁ করে ছুটে গেল, ছেলেগুলো হাত দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স গুলোকে সিগন্যাল দিচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে আমার কয়েক মাস আগের কথা মনে পড়ল। সেদিনও এভাবে রাস্তায়, এক গলির ভেতর আটকে ছিলাম। কারণ রাজপথ দিয়ে ভিভিআইপি যাবেন বলে গাড়ি তো দূরের কথা, মানুষকে রাজপথে হাটতেও দিচ্ছিল না। তখন দেখেছিলাম কয়েকটা এম্বুলেন্স থেমে আছে, থেমেই থাকল- প্রায় আধঘণ্টা পর  ভিভিআইপি চলে যাওয়া পর্যন্ত! যেইনা ভিভিআইপি চলে গেলেন, অমনি সমস্ত গলির ভিতর আটকে রাখা গাড়িগুলো একযোগে রাজপথে এল আর প্রচন্ড জ্যাম বাঁধিয়ে দিল, আটকা পড়লো অ্যাম্বুলেন্স। 

জানিনা ঢাকা শহরে, গাড়িকে লাইন করে, এভাবে ইমার্জেন্সি লেন তৈরি করে অ্যাম্বুলেন্স পার করাটা এই ছেলেগুলোকে কে শিখিয়েছে। এরা কাজটা এত নিপুণভাবে করল যে মনে হল দীর্ঘদিন ধরে ওরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে অভ্যস্ত!!এই ছেলে মেয়ে গুলোর বয়স কত? গড়ে সতের বা আঠারো, কিন্তু আমি স্কুল ইউনিফর্ম পরা ১২/১৩ বছরের শিশুকে পর্যন্ত দেখেছি গাড়িগুলোকে লেন ঠিক রাখার নির্দেশ দিতে ! বৃষ্টি শুরু হল, এই শিশু কিশোররা বৃষ্টির মধ্যেই তাদের কাজ করে যেতে লাগলো। আমার খুব আফসোস হলো। যদি সাথে কিছু চকলেট বিস্কুট রাখতাম! শাহবাগের আন্দোলনকারীদের তুলনায়  এরা নিতান্তই শিশু-সেই আন্দোলনকারীরা বিরানী, পিঠা, রকমারি খাবার পেতেন। অথচ এই বাচ্চাগুলোর না খেয়ে কাজ করছে- আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য।

সাড়ে ১১ টায় ফার্মগেটে দেখি একটা গাড়ি কে অনেক শিক্ষার্থী ঘিরে ধরে আছে, একসময় গাড়ির ড্রাইভার নেমে এসে এক শিক্ষার্থীর কলার ধরে তাকে মারতে যেতেই কয়েকজন এসে ড্রাইভার এর হাত ছাড়িয়ে নিল, কিন্তু কোন মারামারি করলো না, বরং তারা সমস্বরে হাততালি দিয়ে বলতে লাগলো "ভুয়া, ভুয়া।" ড্রাইভারকে তারা বাধ্য করলো গাড়ি ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে নিয়ে যেতে। সাধারণত যা হয়, মজা দেখতে সবাই সেখানে ভিড় করে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখলাম কয়েকজন ওই গাড়ির দায়িত্ব থাকলো, বাকিরা রাস্তায় গাড়িকে নির্দেশনা দিতে থাকলো। একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম ওই গাড়ি কেন আটকাল। "লাইসেন্স কাগজ কিছুই নাই গাড়িতে"। গাড়ি তে দেখলাম জাতীয় পতাকার দণ্ড লাগানো !! ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি পড়?" "তেজগা বিজ্ঞান কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ।"

এই ছেলেটা প্রশ্ন ফাঁস জেনারেশনের, যাদের সম্পর্কে আমার ধারণা ভালো কিছু ছিল না। কিন্তু আজ আমার ধারণা পুরোপুরি বদলে গেছে। এই ছেলেগুলোর নির্লোভ, পরিশ্রমী, প্রত্যয়ী মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করবে না, করতেই পারে না। এরা পারবে- আমার প্রাণ ভরা শুভকামনা রইল এদের প্রতি। যদি কোন অশুভ শক্তি এদের আঘাত হানে- প্রতিজ্ঞা করলাম আমিও চলে যাব তাদের পাশে। জানি দেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সকল মানুষ এই বাচ্চাগুলো পাশে এসে দাঁড়াবে।

অশ্লীল কথা লিখেছে বলে যারা হায় হায় করছেন, তারা কেবলই ছিদ্রান্বেষী।

যারা বলছেন ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত, তারা ভয় পেয়েছেন। আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবহন ব্যবস্থা যদি এই শিক্ষার্থীরা এভাবে ঠিক করে ফেলে, তবে বিভিন্ন ব‍্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান  এখন যেভাবে হাজার কোটি টাকা থেকে তুলছিল এই পরিবহন ব্যবস্থা থেকে, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।

রাস্তায় শৃঙ্খলা আনার জন্য কত কিছুই না করা দেখলাম!! একবার কয়েক শ কোটি টাকার cctv কেনা হল, উদ্দেশ্য যে গাড়ি lane ভাঙবে তাকে ফুটেজ দেখে ধরা হবে। আরেকবার দড়ি দিয়ে দিয়ে লেন ভাগ করা হলো- বাস, কার, ও সি এন জি- টেম্পুর জন‍্য আলাদা তিন লেন। কিন্তু সবকিছুই ব্যর্থ। মাঝখান থেকে কয়েকশো কোটি টাকা গেল। আমাদেরই করের টাকা। এই ছেলেগুলো কিন্তু রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনছে- একেবারে বিনা খরচে!

এই কদিনে গণপরিবহন না থাকায় চলাচলে খুবই কষ্ট হচ্ছে। খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এটুকু আমাদের মেনে নিতেই হবে কারণ ভালো কিছু পেতে গেলে কিছু ত‍্যাগ তো করতেই হবে। এর আগে কি পরিবহন মালিকেরা কথায় কথায় পরিবহন বন্ধ করেননি? আমরা কি মেনে নেই নি? এই তো কিছুদিন আগে, এক খুনি ড্রাইভারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় পরিবহন মালিকরা পরিবহন বন্ধ করে রাখলেন কয়দিন। তারপর সেই চালকের মৃত্যুদণ্ড তুলে নিতে বাধ‍্য করার পর তারা আবার রাস্তায় গাড়ি নামালেন!!! এভাবেই চিরকাল তারা আমাদের চাপে ফেলে রেখেছেন, এখন আমাদের সময় এসেছে তাদের ঋণ শোধ করার।





 
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×