somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এইসব শিশুরা: ২. অসহায়, অসুস্থ শিশু।

১২ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এইসব শিশু কঠিন রোগে আক্রান্ত। শুধু কঠিন রোগ বললে পুরোটা বলা হয় না, এমন রোগে আক্রান্ত যার নিরাময় সম্ভব, কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় সাধ‍্যের বাইরে। চিরকাল যে রোগাক্রান্ত ছিল তা কিন্তু না, অন্য শিশুদের মত এরাও হেসে খেলে বেড়াতো, তারপর হঠাৎ একদিন জ্বর বা অন্য কোন উপসর্গ থেকে ধরা পড়ে যে, তারা শরীরে কোন রোগ বয়ে বেড়াচ্ছে। এমন অবস্থায় ডাক্তার মা- বাবাকে বলেন, সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হবে যদি এই এই চিকিৎসা করা যায়!  চিকিৎসা ব্যয় সাধারণত অনেক বেশি হয়, (আমি উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানদের কথা বলছি না) তবু ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে, তেমনি এমন শিশুদের মা বাবা সন্তানকে বাঁচাবার জন্য প্রবলভাবে চেষ্টা করতে থাকেন। প্রথমে নিজস্ব সঞ্চয় (যদি থাকে) শেষ করেন, তারপর ঘটি বাটি বিক্রি করতে থাকেন, তারপর ঋণ করে সন্তানকে বাঁচাবার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন... অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হন। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান হয়না!

খেয়া (কাল্পনিক নাম) আমার পরিচিত ফুটফুটে প্রাণবন্ত একটা মেয়ে! ওর বয়স যখন ছয় বছর, তখন ধরা পড়ল এক কঠিন রক্ত-রোগ। দেশের নানা হাসপাতালে ঘুরে রোগের কোন সুরাহা না হওয়ায় খেয়ার বাবা-মা ধারদেনা করে পাঁচ/ছয় লক্ষ টাকা নিয়ে চেন্নাই গেলেন, সে টাকা শেষ হয়ে গেল কিন্তু চিকিৎসা শেষ হল না; আরো বারো লক্ষ টাকা দরকার, দুই মাসের মধ্যে অস্ত্রোপচার (বোন ম‍্যারো ট্র‍্যান্সপ্লান্ট) করতে হবে। নিরুপায় বাবা-মা অর্থ সংগ্রহের জন্য খেয়াকে নিয়ে দেশে ফিরলেন। এবার পত্রিকা, টিভি, ফেসবুকে খেয়ার জন‍্য সাহায্যের আবেদন জানান হল। ব‍্যাপক প্রচারণা আর সকলের আন্তরিক চেষ্টায় সাহায্য এলোও, পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে সত্তর হাজার টাকা পর্যন্ত; দেড় মাসে জমা হল আট লক্ষ টাকা। সেই টাকাসহ খেয়াকে নিয়ে বাবা-মা চেন্নাই গেলেন। একটাই ভাবনা তাদের, পুরো টাকা জোগাড় হলে মেয়ের অস্ত্রোপচার হবে, না হলে তাদের আদরের কন্যা টি মারা যাবে।

পুরো টাকা জোগাড় হয়নি, কিছুদিন পর খেয়া মারা গেল।

অহনের (সত্যিকারের নাম) ক‍্যানসার। ওর বয়স বোধহয় ১০/১১ বছর হবে, ফেসবুকে নিজেই কথা বলছিল যে, সে বাঁচতে চায়, সকলে যেন তাকে সাহায্য করেন। ওর দেয়া নাম্বারে ফোন করলাম। ওর মা জানালেন ছয় লক্ষ টাকা জমা হয়েছে, দরকার পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা। আমার সাধ‍্য অতি সামান্য; আমি বুঝতে পারলাম না কি বলবো... ফোন রেখে দিলাম।

এমন আরও কত খেয়া, অহন আছে... নিরুপায় বাবা-মায়ের চোখের সামনে এরা দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।

"শুয়ে শুয়ে অশোক পাতায়
 মুমূর্ষু শিশির ভাবে হায়,
 কোন সুখ ফুরালো না যার
 তার কেন জীবন ফুরায়?"

 অনেক কাল আগে, বিটিভিতে প্রচারিত হত হুমায়ূন আহমেদের লেখা তুমুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক, এইসব দিনরাত্রি। নাটকে একটা ছোট মেয়ে ছিল, নাম ছিল টুনি। সেই মেয়েটার ক্যান্সার ধরা পড়ায় মধ্যবিত্ত মা বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, বিদেশে কি করে চিকিৎসা করাবেন তাই ভেবে! তাদের এক উচ্চবিত্ত আত্মীয় টুনিকে চিকিৎসা করাতে জার্মানিতে নিয়ে যান। টুনিকে নিয়ে দর্শকদের প্রবল উৎকণ্ঠা শুরু হয়। এই পর্যায়ে কি করে জানিনা, জানা যায় যে টুনি মারা যাবে- অমনি সবাই (তাদের মধ্যে ছিল হুমায়ূন আহমেদের নিজের মেয়েরা) লেখককে অনুরোধ জানাতে থাকে, টুনিকে কে যেন বাঁচিয়ে রাখা হয়। হুমায়ূন আহমেদ অনুরোধ রক্ষা করেননি। টুনির মৃত্যু কাল্পনিক হলেও, সেসময় আমাদের দুঃখটা ছিল আসল। 

আজ নানারকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থাকায় এমন অনেক টুনির অসুস্থতার খবর পাই,  টাকার অভাবে এরা ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়।

 দুঃখ হয় খুব... কেন যে এরা এদেশে শিল্পী হয়ে জন্মালো না!!





সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৭
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×