somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প: হিটলার

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- এটা কী হলো সালাউদ্দিন ভাই! অফিস ট্রেনিংয়ে আমাদের গ্রুপের সবার নাম আছে, শুধু আমি বাদ! কিন্তু আমি তো ওদের অনেকের চাইতে বেশি কাজ করেছি...

কথা শেষ না করে ফাহিম আহত দৃষ্টিতে সালাউদ্দিন ভাইয়ের দিকে চেয়ে রইল।

- ভেরি স্যরি ফাহিম, ভুল করে তোমার নাম বাদ পড়ে গেছে! কিন্তু তুমি তো ভাই স্পেশাল, তাই তোমার জন্য আমার বিশেষ প্ল্যান আছে... এই ট্রেনিং নিয়ে ভাবছো কেন? এটা তো শুধু অফিসের ট্রেনিং, আসল ট্রেনিং কোরিয়ায়, হা হা! সেটার জন্য তুমি মোটামুটি সিলেক্টেড হয়েই গেছ।

সালাউদ্দিন ভাই বললেন। বরাবরের মতোই মুখে আন্তরিক হাসি।

নিজেকে স্বান্তনা দিল ফাহিম, অফিস ট্রেনিংয়ে ওর নাম নাই তার কারণ হতেই পারে সালাউদ্দিন ভাই ভুলে গেছিলেন। সালাউদ্দিন ভাই যে ওকে স্পেশাল বললেন, আসলেই সে স্পেশাল। কারণ এই সফটওয়্যার কোম্পানিতে তাদের টিমের সকলেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, একমাত্র সেই গনিতের ছাত্র। অথচ নিজের আগ্রহ আর অধ্যবসায় দিয়ে সে কোডিংয়ে এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছে যে, তাদের টিমের প্রজেক্টের বেশিরভাগ কাজই সে করে!

একমাস পর দেখা গেল কোরিয়া ট্রেনিংয়ের জন্য দু'জন নির্বাচিত হয়েছে, তার মধ্যে ফাহিম নেই। ফাহিমের বন্ধু ইকবাল বলল,

- সালাউদ্দিন ভাইয়ের রেকমান্ডেশন অনুযায়ী আমাদের গ্রুপ থেকে কোরিয়ায় ট্রেনিংয়ের জন্য নির্বাচন করা হয়। বোঝা যাচ্ছে উনি তোকে রেকমান্ড করেননি।

- কিন্তু কেন!! আমি এত কষ্ট করলাম, প্রজেক্টের কাজ সবচেয়ে বেশি আমিই করেছি, পারফরম্যান্স ওয়াইজ তো আমারই হবার কথা...

ফাহিম বুঝতে পারছে না, টিম লিডার সালাউদ্দিন ভাইয়ের হাসিমুখের পেছনে কি ফাহিমের প্রতি প্রচন্ড বিদ্বেষ লুকিয়ে আছে কিনা!!! এমন আচরণের কারণটা ধরতে না পেরে ধীরে ধীরে সে মনমরা হয়ে যেতে লাগলো। নতুন আরেকটা প্রজেক্ট শুরু হয়েছে, কিন্তু ফাহিম কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে, এই চাকরিতেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে!!

পরের মাসে সবার বেতনের সাথে সদ্য সমাপ্ত প্রজেক্টের জন্য বোনাস যোগ হলো। প্রজেক্টের কাজে পারফরম্যান্স অনুযায়ী বোনাস নির্ধারিত হয়, বেতনের শতকরা দশ, বিশ অথবা ত্রিশ হারে।‌

দেখা গেল দুজন বোনাস পেয়েছে বেতনের শতকরা ত্রিশ ভাগ হারে, বেশিরভাগই শতকরা বিশ আর ফাহিম আর আরেকজন শতকরা দশ। এই আরেকজন অফিসে প্রতিদিন দেরি করে আসে, প্রজেক্টের কাজ তেমন কিছুই করেনি, অথচ সবচেয়ে বেশি কাজ করা ফাহিমকে এর সমান হিসেবে মূল্যায়ন করা হলো!

সেদিন লাঞ্চে ফাহিমের প্রিয় ইটালিয়ান খাবার ছিল, কিন্তু ফাহিম লাঞ্চে গেল না। বসে উথালপাথাল ভাবলো, যা তার প্রাপ্য তা কেন তাকে দেয়া হচ্ছে না... অনেক ভেবেও এ প্রশ্নের উত্তর পেল না! লাঞ্চ থেকে ফিরে সবাই ওকে জিজ্ঞেস করলো কেন লাঞ্চে যায়নি। সালাউদ্দিন ভাই চিন্তিত মুখে বললেন,

- তোমার কি শরীর খারাপ ফাহিম? লাঞ্চে যাওনি কেন?

ফাহিম উত্তর দিল না, তাকালোও না; কোন কাজ না করেই কম্পিউটারের সামনে বসে রইল ছুটির সময় হওয়া পর্যন্ত। পঁচিশ বছরের একটা যুবকের এমন অভিমানী হওয়া মানায় না, কিন্তু দুঃখ আর অভিমান একটা ভারী পাথরের মতো সারাদিন এমনভাবে ফাহিমের বুকে জমে থাকলো যে, ওটা সে সরাতেই পারলো না!

অফিস থেকে বের হবার সময় ইকবাল সঙ্গী হলো, পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,

- বসুন্ধরার ফুড কোর্টে যাই চল্। আজকে তো লাঞ্চ করিস নি!

একটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের টুকরায় সস লাগিয়ে ফাহিম আনমনে উপর প্লেটের উপর আঁকিবুকি কাটছিল। ইকবাল বার্গার চিবাতে চিবাতে বলল,

- খাওয়া বাদ দিয়ে কি ভাবছিস?

- ভাবছি আমার দোষটা কোথায়! কেন সালাউদ্দিন ভাই আমাকে পছন্দ করেন না!

- দোষ তোর না! এটা সালাউদ্দিন ভাইয়ের সমস্যা। আমি আজ সারাদিন এ নিয়ে ভাবছিলাম, হঠাৎ মনে পড়ল সালাউদ্দিন ভাই একদিন বলছিলেন, আমাদের গ্রুপে গণিতের একজন থাকায় ইউনিফর্মিটি নষ্ট হয়ে গেছে!

- গণিতের হলে সমস্যা কোথায়! আমি তো কঠিন কোডিং টেস্ট উৎরে তারপর এডভান্সড লেভেল প্রোগ্রামার হিসেবে এখানে চাকরি পেয়েছি। অনেক সিএসইর ছাত্রও এই কোডিং টেস্ট পাশ করতে পারেনি!!

- হয়তো সেটাই সমস্যা! হয়তো এজন্যই সালাউদ্দিন ভাই তোকে পছন্দ করেন না!

- আমার দোষটা কোথায়?

- দোষ কোথাও নেই। ব্যাপারটা হলো, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে যেমন বিশেষভাবে পছন্দ করতে পারে, তেমনি বিশেষভাবে অপছন্দও করতে পারে, এই পছন্দ- অপছন্দের পেছনে কোন যুক্তি কাজ করে না। যেমন ট্রাম্প, সে মনে করে তার মতো সাদা চামড়ার মানুষেরাই সেরা... যেমন হিটলার, সে মনে করে ইহুদিরা অতি নিকৃষ্ট। তেমনি সালাউদ্দিন ভাইও...

কথাটা শেষ না করেই চুপ করে গেল ইকবাল।

ছবি সূত্র: https://bn.crazypng.com/118.html
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যর্থ হলে উপদেষ্টাবৃন্দই তোপের মুখে পড়বেন সবার আগে

লিখেছেন এমএলজি, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:০০

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটা লক্ষ্যণীয় পার্থক্য হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি অফিস আদালতে দুর্নীতিবাজরা ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছিল; কিছুদিনের জন্য দুর্নীতি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে।

এদিকে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অথবা শরৎকাল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১০


রোদ হাসলে আকাশের নীল হাসে।
গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ দল ব্যস্ত হয়ে
দূর সীমাহীন দিগন্তে ছুটে।

লিলুয়া বাতাসে তোমার মুখে এসে পড়া চুল আর
ঢেউ খেলানো আঁচলের সাথে—
কাশবনে সব কাশফুল নেচে যায়।
নিভৃতে একজোড়া অপলক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪০

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

সেই ষাট সত্তর দশকের কথা বলছি- আমাদের শিক্ষা জীবনে এক ক্লাস পাস করে উপরের ক্লাসে রেজাল্ট রোল অনার অনুযায়ী অটো ভর্তি করে নেওয়া হতো, বাড়তি কোনো ফিস দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন্দির দর্শন : ০০২ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি পূজা মন্ডপ ও নাচঘর বা নাট মন্দির

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের জমিদার বাড়িগুলির মধ্যে খুবই সুপরিচিত এবং বেশ বড় একটি জমিদার বাড়ি। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে একটি লেখা আমি পোস্ট করেছিলাম সামুতে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে

লিখেছেন সামিয়া, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



একদিন সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে,
সময়ের সাথে হারিয়ে যাবে স্মৃতি।
মনে থাকবে না ঠিক ঠাক কি রকম ছিল
আমাদের আলাদা পথচলা,
হোঁচট খাওয়া।
মনে থাকবে না
কাছে পাওয়ার আকুতি।
যাতনার যে ভার বয়ে বেড়িয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×