অ্যামেরিকায় এভাঞ্জেলিস্ট খ্রিষ্টানদের প্রবল বিশ্বাস সমস্ত ইহুদিরা জেরুজালেমে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত যীশুর পুনরাবির্ভাব ঘটবে না… প্রায় একই ধরণের বিশ্বাস সেখানে অন্যান্য খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেও আছে… খ্রিষ্টানদের মধ্যে ইউরোপ অ্যামেরিকায় এখনো যারা খুব ধর্মান্ধ তাদেরও বিশ্বাস প্রায় একই পর্যায়ের… এজন্য তারা চায় সমস্ত ইহুদী যাতে তাদের আদি বাসভূমি জেরুজালেমে ফিরে যায়… ফিলিস্তিনে আরও ইহুদী বসতি নির্মাণ ও গ্রেটার ইজরায়েল প্রকল্পকে এজন্য তারা বলা চলে অন্ধের মতো সমর্থন করে… যদিও ফিলিস্তিনে জোর-জবরদস্তী করে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা করার পেছনে রাজনৈতিক এবং ভূকৌশলগত পরিকল্পনা পশ্চিমা দেশগুলোর রয়েছে কিন্তু সেগুলোর ভিড়ে তাদের এই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণটা উপেক্ষা করা যায়না… এটা ভুলে গেলে চলবে না যে বর্তমান অ্যামেরিকার মানুষদের আমরা যতোটা প্রগতিশীল বা চিন্তা-চেতনায় আধুনিক মনে করি বাস্তবে তারা কিন্তু অতো প্রগতিশীল বা আধুনিক নয়…… তাদের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ প্রচণ্ড রকমের ধর্মান্ধ… অনেকটা আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মতোই…এক আর্টিকেলে পড়েছিলাম উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রতেই ধর্মান্ধতা সবচেয়ে বেশী… অথচ তারাই আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এতো উন্নত… আমাদের মুসলিমদের মধ্যে যেমন ধর্মীয় কারণে ইহুদী বিদ্বেষ আছে তেমন আমেরিকায়ও গোঁড়া খ্রিষ্টানদের মধ্যে কিন্তু সেই একই কারণে বেশ ভালো রকমই ইহুদী বিদ্বেষ ওরফে এণ্টি-সেমিটিজম আছে, যদিও ইহুদী সম্প্রদায় সেখানে খুব প্রভাবশালী… তারপরও… এইসব গোঁড়া খ্রিষ্টানরা সব সময়ই চায় বিশ্বের সমস্ত ইহুদী জেরুজালেমে ফিরে যাক… ইজরায়েলের প্রতি আমেরিকার সমর্থন তাই কোনও অবস্থাতেই নড়চড় হবেনা, দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে গেলেও নয়… ইজরায়েল রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং নব্য জায়নবাদের গুরু থিওডর হার্জেল যা চেয়েছিল তাকে পশ্চিমারা যে বাস্তবায়িত করেছে তার অন্যতম বড় কারণ এইটা… আর তার সাথে আরব দেশগুলোর শাসকশ্রেণী ফিলিস্তিনের সাথে যেরকম বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে যেরকম অনৈক্য আর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের পদলেহন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে করে ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধান হবার সম্ভাবনা আর যাই হোক নিকট ভবিষ্যতে নেই… যাই হোক, যেটা বলার জন্য এটা লিখছি তা হল ধর্মান্ধতা মানুষের সভ্যতার জন্য যে কত বড় অভিশাপ সেটা পৃথিবীতে বারে বারেই প্রমাণিত হয়েছে এবং হচ্ছে… এর জন্য আজ পর্যন্ত মানুষে মানুষে বহু হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি হয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও হবে… সব তরফ থেকেই… আমি মোটেও ধর্ম বিরোধী নই, কিন্তু ধর্মান্ধতার খুব কঠিন বিরোধী… ধর্মান্ধতার পরিণাম এরকম হাজারো অন্যায়, সংঘাত আর রক্তপাতেই গড়ায় বলেই এর এতো বিরোধিতা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:১৩