somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাশার আল আসাদের পতন। ভূ রাজনীতির খেলায় হারতে হল রাশিয়াকে!!

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর পতন হয়েছে একের পর এক স্বৈর-শাসকের। গোটা আরব অঞ্চল জুড়ে অনেক স্বৈরশাসকের পতন ঘটলেও পতন ঘটানো যাচ্ছিলো না সিরিয়ার বাশার আল আসাদের। রুশ সমর্থন পেয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন সবকিছু। অবশেষে তারও পতন ঘটলো। তাতে যদিও দীর্ঘ এক দশকের ওপর গৃহযুদ্ধের শেষ হবে কিনা সন্দেহ। এখনো পর্যন্ত তথাকথিত আরব বসন্তের পর বলার মতো শান্তি আসেনি আরব দেশগুলোতে। বরং এসব দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে শুরু করে অস্থিরতা আর অস্থিতিশীলতা আরও বেড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সিরিয়াতে অব্যাহত যে থাকবে না তা বলা যাচ্ছেনা।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পটভূমি অবশ্য একটু অন্যরকম। এখানে এক বিশাল জিও-পলিটিক্যাল গেইম বা ভূ-রাজনীতির খেলা থেকেই যুদ্ধের শুরু। যার সাথে একদিক দিয়ে আবার সম্পর্ক আছে ইউক্রেন যুদ্ধেরও।
কেমন করে?
খোলাসা করি ব্যাপারটা।
প্রথমে বিশ্ব মানচিত্রের ওপর চোখ বুলিয়ে নিন। তারপর শুনুন।
ইউরোপ তার তেল গ্যাস আমদানির ব্যাপারে দীর্ঘদিন থেকেই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো বিশেষত এই জোটের পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো চেয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে তেল-গ্যাসের পাইপলাইন বানাতে। এটা করতে গিয়ে তারা সিরিয়ার সাথে চুক্তি করতে চেয়ে চেয়েছিল যাতে সিরিয়ার ওপর দিয়ে এই ইউরোপমুখী তেল গ্যাস পাইপ লাইনের একটা অংশ যেতে পারে । তাতে অন্যান্য দেশ সমর্থন দিলেও সমর্থন দেয়নি রুশপন্থী বাশার আল আসাদ। এদিকে সিরিয়ার ক্ষমতার মসনদে মূলত শিয়া সম্প্রদায় (আসাদ যাদের প্রতিনিধি) এবং এরা মূলত ইরানের সাথে সুসম্পর্ক রাখে। ইরান চায়নি আসাদ সরকার পশ্চিমাদের কথা মেনে নিক। আবার রাশিয়াও চায়নি এই তেল গ্যাস পাইপ লাইন হোক। কারণ তাতে করে রাশিয়ার ওপর ইউরোপের তেল গ্যাস নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে আসবে। আর তাছাড়া সিরিয়াতে রাশিয়ার নৌ-বহর আছে। যে কারণে আসাদ সরকার পশ্চিমাদের প্রস্তাবে কোনোভাবেই সাড়া দেয়নি।
ব্যাস, এতেই ক্ষেপে আগুন ন্যাটো জোট। তাদের ইন্টালিজেন্স এর সহায়তায় তৈরি হওয়া দুই গোষ্ঠী সিরিয় বিদ্রোহী গ্রুপ আর তাদের দোসর “আই এস” আচ্ছাসে ঠেসে ধরে বাশার আল আসাদকে। চরমে পৌঁছায় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। বাশারের পতন ঠ্যাকাতে রাশিয়া এগিয়ে আসে। রাশিয়ার সেবারের আক্রমনে আই এস আর বিদ্রোহীদের হঠিয়ে কোনোমতে টিকে যায় আসাদ সরকার। এর মাঝেই ঘটে আরেক বিপত্তি। সিরিয়াকে নানাভাবে সহায়তা করা আর আসাদকে চাঙ্গা রাখা ইরানের মাস্তারমাইন্ড কমান্ডার কাশেম সোলাইমানী নিহত হলে চাপ বেড়ে যায় আসাদের ওপর। যদিও পুতিনের সহায়তা অব্যাহত ছিল।
কিন্তু এর মাঝেই জবরদস্ত আরেক চাল চেলে বসে ন্যাটো। ইউক্রেনে তাদের পক্ষের লোক জেলেন্সকিকে ক্ষমতায় বসিয়ে রাশিয়াকে উস্কানি দিয়ে বাঁধিয়ে দেয় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য রাশিয়া থেকে যে তেল গ্যাস পাইপ লাইন ইউরোপে গেছে তার প্রায় পুরোটাই গেছে এই ইউক্রেন দিয়ে। ন্যাটো চাচ্ছিল ইউক্রেনে নিজেদের পক্ষের লোক ক্ষমতায় রেখে রাশিয়ার তেল গ্যাস পাইপ লাইনের ওপর তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে। রাশিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই সেটা মেনে নেয়নি। এটারই পরিণতিতে শুরু হয় রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ (যদিও আরও কিছু কারণ আছে, কিন্তু এটা হচ্ছে আসল)। অর্থাৎ, যে করেই হোক ইউক্রেন হয়ে আসা রাশিয়ার তেল গ্যাসের পাইপ লাইনের ওপর কর্তৃত্ব ন্যাটোর নিতেই হবে।
এই নিয়ে নিষ্ঠুর এক খেলা চলছে বিগত কয়েক বছর ধরে।
রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতেই ব্যস্ত। আর কতো সাহায্য করবে সিরিয়াকে!!
সুতরাং, যা হওয়ার তাই হয়েছে।
আসাদ আর টিকে থাকতে পারেনি।
নির্মম এই সাম্রাজ্যবাদী খেলায় হেরে গিয়ে উড়ে গেছেন মিত্র রাশিয়ার কাছেই।
ইতিমধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ৫ লক্ষেরও বেশী সিরীয়র।
সেবার ছিল ইসলামিক ষ্টেটস বা আই এস।
আর এবার এইচ টি এস।
নতুন গ্রুপের আগমন।
সিরিয়া তারপরও শান্ত হবে কি না তাতে প্রবল সন্দেহ।
কারণ, কলকাঠি তাদের হাতে নেই।
আছে ন্যাটোর হাতে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগ বর্তমানে বিজেপির বাংলাদেশি শাখা.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২৭


হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে এমন মন্তব্য করেছেন কলকাতার সাংবাদিক ও লন্ডন ভিত্তিক একটিভিস্ট অর্ক ভাদুড়ী। ফাইনালি কলিকাতার একজন দাদা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যে হারে কলিকাতার ফাটাকেস্ট শুভেন্দু ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা জনমত জরিপ....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩১

একটা জনমত জরিপ....

নিজ উদ্যোগে একটা জরিপ কাজে গত কয়েক দিন বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষদের সাথে কথা বলেছি। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান থাকলেও নিরপেক্ষ মতামত জানতে, বুঝতে নিজেকে শতভাগ নিরপেক্ষ রেখেছিলাম। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাষা (বাংলা) তুমি কার? (বাঙ্গালী কে তবে আর কাহার বা বাংলা ভাষা ??)

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭


'পতিত ও পতিতা' নিয়ে ব্লগার 'ভুয়া মফিজ' বেশ ক্যাচালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। খানদানী ভাষাবিদেরা তাকে ভাষা নিয়ে অনেক পাঠ দিয়েছিলেন। একথা মানতে দ্বিধা নেই যে, খানদানী ভাষাবিদেরা মনে করে শুদ্ধভাষা... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপন্যাস 'কৃষ্ণকান্তের উইল' পড়েছেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৬



রবীন্দ্রনাথ যখন বাচ্চা পোলাপান-
তখন বঙ্কিমচন্দ্র পুরোদমে লেখালেখি করে যাচ্ছিলেন। সেই সাথে করতেন চাকরি। রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের বই আগ্রহ নিয়ে পড়তেন এবং হয়তোবা মনে মনে ভাবতেন, আরে এরকম গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আপনি আমন্ত্রিত....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৯

প্রিয় সুহৃদ,

আচ্ছালামুয়ালাইকুম।
আমার গুম জীবন এবং গুম পরবর্তী সত্য ঘটনাবলী নিয়ে লেখা 'গুম এবং অতঃপর' এবং 'দ্যা আনটোল্ড স্টোরি' (২০২০-২০২১ সালে সিএনএন, আল-জাজিরা এবং বিবিসি চ্যানেলে আমার নাম/পরিচয় গোপন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×