
-
জি, এই পোস্ট আপনাদের মতো মাতব্বরদের জন্য, যারা কাশ্মীর ইস্যু নিয়া ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়া ফাটাইয়া ফেলিতেছেন। শুনুন এ বিদগ্ধ-জ্ঞানী-পণ্ডিত ব্যাক্তিগণ, দুইটা পারমানবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশের পক্ষে আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধে জড়াইয়া পড়া আজকের পৃথিবীতে এতো সহজ নহে। তা যতই কাশ্মীর নিয়া টানা হেঁচড়া বা হম্বিতম্বি বা সমরসজ্জা চলুক না কেন। ভারত পাকিস্তান উভয়ের রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য উভয় দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী মদিরায় আসক্ত করিয়া রাখা বিশেষ প্রয়োজন, যেমন প্রয়োজন উভয় দেশের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাইয়া রাখার জন্য একটি ইস্যু। এর জন্য কাশ্মীর ইস্যু বিশেষ “পপুলার”! অন্য কথায়, উভয় দেশের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হইতে মানুষের দৃষ্টি সরাইয়া রাখিবার জন্য কাশ্মীর লইয়া মাঝে মাঝে ঝামেলা পাকানো উভয় দেশের জন্যই বিশেষ প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদ এমন এক জিনিষ যাহাকে চাঙ্গা রাখিবার নিমিত্তে শত্রু শত্রু খেলা ভালো কাজে লাগে এবং এই জন্য জাতীয়তাবাদ নিয়তই নিজের নিজের শত্রু খুঁজিয়া বেড়ায়। ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই অসংখ্য জাতি-উপজাতি অধ্যুষিত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ সেখানে ক্রিয়াশীল। এইরকম দুইটা দেশের পক্ষে জোর করে নিজের ঐক্য টিকাইয়া রাখার নিমিত্তে একদিকে ভারতের মতো দেশের পক্ষে যেমন পাকিস্তান বা চীনের মতো “শত্রু” দরকার, কাশ্মীর সমস্যা দরকার, তেমনি পাকিস্তানের জন্যও একইরকম জোর করিয়া নিজের ঐক্য টিকাইয়া রাখার নিমিত্তে ভারতের মতো “শত্রু” দরকার।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশই আজ কিন্তু বিষম সঙ্কটে পতিত হইয়াছে। একদিকে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হইয়াছে, মাসাধিককাল ব্যাপিয়া তথায় নানা সঙ্কট, অশান্তি আর বিদ্রোহের আগুন জ্বলিতেছে। পাকিস্তানেও তাই। ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো আজ দীর্ঘ মাসাধিককাল ব্যাপিয়া বিদ্রোহ আর অশান্তিতে পূর্ণ। অশান্তি ছড়াইয়া পড়িয়াছে দক্ষিণেও, অশান্তি রহিয়াছে কাশ্মীরে। ওদিকে পাকিস্তানেও অর্থনীতি নিদারুণ সঙ্কটে পতিত হইয়াছে। অশান্তি আর সঙ্কটে মানুষের জীবন তথায় ওষ্ঠাগত। তাহাদের বেলুচিস্তান বিদ্রোহ করিয়া হাতছাড়া হইবার পথে। ভারত এবং পাকিস্তানের এমন ঘোরতর দুর্দিনে তাই এমন কিছু প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে যাহাতে তাহাদের যার যার দেশের ঐক্য জোর করিয়া টিকাইয়া রাখা যায়।
সম্প্রতি কাশ্মীরে যাহা হইয়াছে তাহা উভয় দেশের এই ঐক্য এইরূপে টিকাইয়া রাখিবার স্বার্থে ভালোভাবেই সহায়তা করিবে। যখনই তাহারা সঙ্কটে পতিত হয় তখনই তাহারা কাশ্মীর ইস্যু লইয়া একটুখানি নাড়াচাড়া দেয় নয়তো তথায় কোনও অনর্থ বাধিতে দেয়।
যাহাই হউক, এই খেলা যদি না বুঝেন তো মুড়ি খান গিয়া।
না বুঝিয়া লম্ফ-ঝম্প করিলে আপনারই এনার্জি লস হইবেক, আমার নহে।
কাশ্মীর সমস্যা অন্তত ভারত বা পাকিস্তানের মতো দেশ যতদিন পৃথিবীতে থাকিবে ততদিন মিটিবে না। মাঝখান দিয়া কাশ্মীরীদের স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর দিয়া ষ্টীমরোলার চলিবে এইটাই যা দুঃখ হইয়া থাকিবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


