
বাংলাদেশের যা পরিস্থিতি বিশেষত রাজনৈতিকভাবে তাতে কি এদেশের পরিস্থিতি কখনো ভবিষ্যতে ভালো হওয়া সম্ভব? এই ক্ষুদ্র পরিসরে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে দুটো দেশের উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, সম্ভব। যদি একটুও সদিচ্ছা থাকে আমাদের বিশেষ করে এদেশের শাসক শ্রেণীর। ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা নিয়ে বলা যেতে পারে। এই দুটো দেশের অবস্থা বিশেষত রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা সময় আমাদের দেশের চেয়েও বেশী খারাপ ছিল। ব্লগে আমার দুটো অনুবাদ নির্ভর লেখাও আছে এ নিয়ে। কেউ চাইলে আমার পুরনো লেখাগুলোর মধ্যে এগুলো দেখতে পারেন।
যাই হোক, কথা হল চরমতম খারাপ অবস্থা থেকেও ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা কিন্তু রিকভারি করেছে। একটা সময় দুটো দেশই একের পর এক নিষ্ঠুর ডিক্টেটররা শাসন করে গেছে দীর্ঘ সময় ধরে। আমাদের দেশের মতোই গুম, খুন, গণতন্ত্রকামী এবং সমাজতন্ত্রকামীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, আর লাগামছাড়া দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল এই দুই দেশেরই শাসকগোষ্ঠী। শতবর্ষ আগে আর্জেন্টিনা ছিল বিশ্বের শীর্ষ ১৫ টি দেশের মধ্যে অন্যতম ধনী ও সমৃদ্ধশালী দেশ। কিন্তু একের পর এক রাজনৈতিক ডামাডোল, ডিক্টেটরশিপ ,অর্থনৈতিক দুর্যোগ আর অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কূটকৌশলের কারণে ক্রমাগতভাবে তাদের অবনমন ঘটতে ঘটতে আজকে এক ফুটবল খেলা ছাড়া তার আর কোনও মূল্যই বলতে গেলে নেই। তবুও বিশেষ করে ৭০ -৮০ র দশকে যে চরম খারাপ অবস্থা ছিল, বিশেষ করে তাদের সেই কুখ্যাত "ডারটি ওয়ার" এর পিরিয়ড আর তার পর সেই ফকল্যান্ড যুদ্ধ, যেটায় আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার পর দেশব্যাপী এক ব্যাপক দাঙ্গায় মিলিটারি ডিক্টেটরের পতন ঘটে। সেটার পর থেকে একটু একটু করে রিকভারি কিন্তু তারা করেছে। যদিও অর্থনৈতিক দুর্যোগ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি।
ব্রাজিলও একটা সময় "এস্তাদো নভো" এর মতো আরেক কুখ্যাত পিরিয়ড পার করে এসেছে, যে পিরিয়ডে রাজনৈতিকভাবে আমাদের দেশের চেয়েও খারাপ অবস্থা ছিল, সংবিধান স্থগিত করা থেকে শুরু করে ডিক্টেটরদের করা লাগাতার গুম- খুন, গণতন্ত্রকামী আর সমাজতন্ত্রকামীদের ওপর ডিক্টেটরদের হিংস্র আক্রমণ ছিল যেদেশের নিত্যসঙ্গী। ব্রাজিলের কুখ্যাততম ডিক্টেটর গেতুলিও ভারগাসের কথা আজ হয়তো সবাই ভুলেই গেছে। ব্রাজিলের এই শয়তান দ্য গ্রেট কি করেছিলো জানেন? প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে রীতিমতো খুন করে সামরিক বাহিনীর সাথে আঁতাত করে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলো ব্রাজিলের। এসেই তিনি সংবিধান স্থগিত করেন, বিচার বিভাগ কেড়ে নেন নিজের হাতে, সন্ত্রাস আর দুর্নীতির এক মহা রাজত্ব কায়েম করেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যা করেন। তাকে নিয়ে একবার বিস্তারিত লিখব । যাই হোক, ভারগাসের রাজত্বের অবসানের কিছুকাল পর আবারো ডিক্টেটরের পাল্লায় পড়ে ব্রাজিল। ৭০ এর দশকের পর এ অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আস্তে শুরু করে তারা।
এখানে আমাদের দেশ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বিস্তারিত আলোচনায়ও আর না হয় গেলাম না। তবে এইটুকু বলা যেতে পারে যে যদি দেশের শাসকগোষ্ঠী চায় তাহলে আজকের এই খারাপ অবস্থা থেকেও রিকভারি সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


