somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ এর সেই সাইক্লোন গোর্কি।

১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিলো গত শতাব্দীর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় – গোর্কি। আন্তর্জাতিকভাবে যাকে “গ্রেট ভোলা সাইক্লোন” নামেও অভিহিত করা হয়। মারাত্মক প্রাণঘাতী এই ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে মারা পড়েছিল মতান্তরে ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ, মতান্তরে ১০ লক্ষ মানুষ। আহত যে আরও কতো লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছিলো তার কোনও হিসেব নেই। ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল প্রায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়ার বেগ অর্থাৎ গাস্টে ২২০ কিলোমিটারেরও বেশী উঠে গেছিলো। উপকূলে জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো ২০ থেকে ৩০ ফুটেরও বেশী উচ্চতায়। মারা পড়েছিল অগণিত গবাদিপশু। দেশের গোটা দক্ষিণাঞ্চল, চট্টগ্রাম – কক্সবাজার থেকে শুরু করে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, খুলনা পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো বৃহত্তর ভোলা এবং নোয়াখালী অঞ্চল। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা বিভিন্ন দ্বীপ, যেমন হাতিয়া, সন্দ্বীপ, চর জব্বার, চর আলেকজান্ডার, চর বাটা, চর জাঙ্গালিয়া ইত্যাদিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো।
গোর্কির ভয়াল জলোচ্ছ্বাস যে কতো মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সমুদ্রে তার কোনও হিসেব নেই। কতো মানুষ যে শেয়াল শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়েছিলো তারও কোনও হিসেব নেই। হিসেব নেই সমুদ্রে ভেসে যাওয়াদের মধ্যে কতজন যে হাঙ্গরের খাদ্যে পরিণত হয়েছিলো সে হিসেব।
ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ের একটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়- “ … প্রথমে বেশ গরম বাতাস সাগরের ওপর থেকে আসতে শুরু হল। কিছুক্ষণ পরে দূরে সাগরের ওপর একটা পাহাড়ের মতো কিছু দেখা গেলো। সেটা ছিল অনেক উঁচু বিশাল ঢেউ। ঢেউ আরও এগিয়ে এলে একটা সোঁ সোঁ শব্দ শোনা যেতে লাগলো। তখন করার তাঁদের কিছু ছিল না। বড় বিপদ মনে করে সকলে এক জায়গায় দাঁড়ালেন। বাচ্চারা তাঁদেরকে জড়িয়ে ধরল। কেউ হাত ধরল, কেউ পা ধরল, কেউ কোমর জড়িয়ে ধরল। তারপর সেই ঢেউ এসে আছড়ে পড়তে থাকলো। ঢেউ এসে যখন আছড়ে পড়লো তখন দাঁড়ানো যাচ্ছিলো না। তিনি ও তাঁর স্ত্রী গাছ ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই অবস্থার অদ্ভুত বর্ণনা তিনি দিচ্ছিলেন। বাচ্চারা তাঁদেরকে জড়িয়ে ধরছিল কিন্তু তাঁরা বাচ্চাদেরকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। কারণ গাছ থেকে হাত সরালেই বাচ্চারাসহ তাঁরা ভেসে যেতেন। তাঁদের কোনও বাচ্চা সেখানে বাঁচে না। অন্য একটি বাচ্চা বেঁচে গিয়ে একটি গাছে আটকে ছিল। গাছের ডালে আটকে পুরো এলাকায় কিছু কিছু লোক বেঁচে গিয়েছিলো। যারা এভাবে বেঁচে গিয়েছিলো তাদের অনেকের সারা গায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিলো।কারণ ঐ এলাকায় প্রচুর মান্দার গাছ ছিল যেগুলির গায়ে ছিল বড় বড় কাঁটা। গাছ আঁকড়ে ধরে থাকার সময় তাদের গায়ে সেই কাঁটা ফুটেছিল। আমাদের সাথে যে ওষুধপত্র ছিল সেগুলো আমরা তাদের প্রয়োজনমত দিচ্ছিলাম। মান্দার গাছের কাঁটা ফুটে যাদের শরীরে ঘা হয়েছিলো তাদেরকেও আমরা ওষুধ দিচ্ছিলাম” (আমার জীবনঃ ৩য় ও ৪র্থ খণ্ড, বদরউদ্দিন উমর)।


বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার পেছনে এ ঘূর্ণিঝড়টির রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার আগে জানমালের নিরাপত্তা এবং প্রস্তুতি নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চরম উদাসীনতা, গাফেলতি এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়য়েও ত্রাণ পাঠানো এবং বিতরণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার চরম উন্নাসিকতাই এতো বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর আসল কারণ। অর্থাৎ ইয়াহিয়া সরকার ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার বিন্দুমাত্র প্রস্তুতি রাখে নি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঐ সময়ে চীন সফর করছিলেন। সে সফর থেকে পাকিস্তান ফেরার পথে ঢাকা হয়ে গেলেও তিনি দুর্গত এলাকায় কোনও পরিদর্শনেও যান নি এবং ত্রাণও বিশেষ পাঠান নি। এটা সেকালে সাধারণ মানুষের ভেতর ভীষণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিলো। মওলানা ভাসানি সেসময় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে এক জনসভায় স্পষ্ট স্বরে বলেছিলেন – “ওরা কেউ আসে নি”। এই ক্যাপশন দেয়া মওলানা ভাসানির সাদা দাঁড়ি উড়ানো সেই ছবি দৈনিক ইত্তেফাকে আসার পর তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছিলো দেশব্যাপী। এর প্রকাশ পাওয়া গেছিলো পরের ডিসেম্বরের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে।
বাকীটা ইতিহাস।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×