এক নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের হিরোরা। এই দিন বাংলাদেশের মানুষকে দেখতে হচ্ছে! যে ট্রাইবুনালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা কারীদের সাজার রায় ঘোষণা করা হয়েছিল সে একই ট্রাইবুনালে সাজা ঘোষণা করা হবে মুক্তিযোদ্ধাদের ! এই লজ্জা বাঙালি রাখবে কোথায়? যাদের পরিবারে অন্তত একজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন তারা কেমন অনুভব করছেন ? যারা স্বাধীনতা বিরোধী তাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে অবশেষে। জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ডের একটি স্টাটাসে ৭১ পরবর্তী মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি পাওয়া উচিত বলে মনে করেন।
হাসানুল হক ইনু : মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিএলএফ ও মুজিব বাহিনীর একজন সক্রিয় যোদ্ধা ও প্রশিক্ষক ছিলেন যার নিকট প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং পেয়েছিল। বাম ধারার রাজনীতি করতেন ইনু। বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল জাসদের একজন নেতা ছিলেন হাসানুল হক ইনু। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গেলে তিনি এমপি হন! তার নামে অসংখ্য লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যার নির্দেশদাতা হিসাবে মামলা হয়েছে। অতি শীঘ্রই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তার বিচার শুরু হবে।
রাশেদ খান মেনন: মেননের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনেক সমৃদ্ধ! ৬২'র আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭১ সালের একজন সক্রিয় যোদ্ধা ছিলেন। স্বাধীন পূর্ব বাংলা চাওয়ায় তাকে কারাবাস বরণ করতে হয়। জুলাই আন্দোলনে অভিযুক্ত মামলার আসামী হিসাবে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
আমীর হোসেন আমু: আমীর হোসেন আমু একজন প্রভাবশালী ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বরিশাল, যশোর, পপটুয়াখালী এলাকায় একজন অন্যতম সংগঠক ছিলেন। জুলাই আন্দোলনে তিনিও অভিযুক্ত।
গোলাম দস্তগীর গাজী : গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম দস্তগীর গাজী বাংলাদেশ সরকারের একজন খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য বীর বিক্রম উপাধি পান।রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি! তার নামে এলাকায় লুটপাট, জমি দখল, চাঁদাবাজি ও গাজী টাওয়ারে ২০০ লোককে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই আন্দোলনে আসামী হিসাবে তিনিও অভিযুক্ত।
শাহাজাহান খান : সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহাজাহান খান পারিবারিক সূত্রে রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগ থেকে তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনীর হয়ে ভারতের দেরদুনে ট্রেনিং নিয়েছিলেন। তার নামে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে সড়ক আন্দোলনের সময় মারা যাওয়া দুইজন ছাত্রের বিরুদ্ধে তিনি কটুক্তি করেন। সবসময় তিনি পরিবহন শ্রমিক দের অন্যায় কাজকে সমর্থন করতেন। চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা। তার বিরুদ্ধে শাহাজাহান খানের মদদে মামলা, হামলার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই আন্দোলনে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আরো অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভবিষ্যতে কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। ভবিষ্যৎ প্রজম্ম তাদের অতীতের স্বর্ণালি ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল তারা সমাজে বলে বেড়াবেন পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের লাভ হয় নি;তারা সঠিক ছিলেন। যারা দেশে স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি তারা ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। অতীত গৌরব নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন স্বাধীনতা নিয়ে মেতে উঠবে তরুণ সমাজের বৃহৎ অংশ!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৬