"ভারত আমাদের শত্রু যে প্রজন্ম তা বুঝতে পারবে তারাই হবে শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম"- মওলানা ভাসানী। জুলাই অভ্যুত্থানের পিছনে শেখ হাসিনা রেজিমের দুঃশাসন ও বিগত ২/৩ টি নির্বাচনে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হয়। অনেকেই মনে করেন, শেখ হাসিনা দিল্লির সেবাদাসী;তাই হাসিনার উচিত ভারতে চিরস্থায়ী বাস করা ! ভারত বাংলাদেশের সাথে বিগত ১০/১৫ বছরে যে সব চুক্তি সম্পাদন করেছিল তার বেশিরভাগ দেশের চেয়ে নিদিষ্ট দলকে প্রাধান্য দেয়া হয়ে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যাই হউক অবশেষে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর! তা সত্ত্বেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা জাগিয়ে রাখতে চান। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভারত মানেই হিন্দু দেশ বলে মনে করেন। এছাড়া বিগত কয়েকবছর ধরে ভারতে হিন্দুবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। সব মিলিয়ে ভারত বাংলাদেশকে শুধু শোষণ করে এমন ন্যারেটিভ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী দলগুলো সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা সফল।
৫ই আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আলোচনায় আসে বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়নের! ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন ক্যারিকুলাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার নতুন ক্যারিকুলাম বাস্তবায়নের অনুপযোগী ঘোষণা করে তা বাতিল করে। আগামী বছর পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর দায়িত্ব কাদের দেয়া হয়েছে তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। দেখা যায় ২০০৯ সাল থেকে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর দায়িত্ব পেয়ে আসছে। ২০২৫ সালের জন্য প্রায় ১ কোটি বই ছাপানোর জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটিকে! কিন্তু বর্তমান সরকারের বিভিন্ন এনটিটি যাদের কট্টর ভারত বিরোধী বলে মনে করা হয় তাদের পক্ষ থেকে একটি জরীপ চালানো হয় যে, ভারতীয় ছাপাখানায় বই ছাপানোর বিরোধী কত শতাশ মানুষ? জরীপের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ ভারতে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর বিরোধী! তারপর এনসিটিবি সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের ছাপাখানায় বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। পূর্বে ভারত, সিংগাপুর সহ আরো কয়েকটি দেশের প্রিন্টিং প্রেসকে দরপত্রের জন্য আহবান করা হত দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ! বাংলাদেশের ছাপাখানা গুলো তখন টেন্ডার পাওয়ার জন্য কমদামে বই ছাপাতে রাজি হতো। সরকার এই বছর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা বন্ধ করে দিয়ে দেশীয় প্রেসে বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৫ সালের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর দায়িত্ব পায় বাংলাদেশের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান।
এদিকে বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলো সবাই মিলে সিন্ডিকেট করে পূর্বের তুলনায় বেশি অর্থ দাবী করে। গত বছর পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর জন্য সরকারের ব্যয় হয়েছিলো ১৪০০ কোটি টাকা,ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার পর তা গিয়ে ঠেকবে ২২০০ কোটি টাকার ও বেশি! এনসিটিবির একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা বলেন কালি ও কাগজের দাম এত বাড়েনি যে ৮০০ কোটি টাকা বেশি খরচ বাড়বে। অন্যদিকে বর্তমানে এনসিটিবিতে চাকুরি করেন এমন একজন কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন বাজারে প্রকৃত মূল্য যাচাই করে কাজ দেয়া হলেও প্রিন্টিং প্রেসের মালিকেরা বিভিন্ন অযুহাত তুলে বেশি টাকা নিচ্ছে। প্রিন্টিং প্রেসের মালিকদের প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, এনসিটিবি যে মূল্য ধরে দিয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। এনসিটিবি আগের বছরের বাজার মূল্য ধরে তাদের কাজের দায়িত্ব দিলেও উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে।
ভারতের ছাপাখানায় পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর চুক্তি বাতিল হওয়ায় শায়েখ আহমাদুল্লাহ হুজুর হতে সুইপার মতীন সবাই খুব খুশিতে ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু ৮০০ কোটি টাকা বেশি খরচ বেড়ে যাওয়ার পর ও কেউ কিছু বলছেন না যদিও তাদের পকেট থেকেই টাকাটা খরচ হচ্ছে। সকাল বিকাল ভারত বিরোধিতা করে মনে যে সুখ পাওয়া যায় সহবাসে সে সুখ নেই। মাওলানা ভাসানীর উক্তি দিয়ে শেষ করছি, " পিন্ডির গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত হয়েছি ভারতের দাসত্ব করতে নয়"।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১৫