ভয়েস অব আমেরিকা নিউজ মিডিয়া দেশ ও দেশের বাইরের সংবাদ প্রচার করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা বাংলাদেশের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জনমত জরীপের সিদ্ধান্ত নেয়। ভয়েস অব আমেরিকা তাদের স্যাম্পল হিসাবে ১০০০ মানুষের মতামত গ্রহণ করে জরীপ পরিচালনা করে।
প্রথম জরীপ : আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেয়া উচিত?
ফলাফল : ৫৭% মানুষ পক্ষে ভোট দিয়েছেন, ৩৬% মানুষ বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। ৭% মানুষের মধ্যে কনফিউশান রয়েছে।
দ্বিতীয় জরীপ : সংখ্যালঘুরা কি বর্তমান সরকারের আমলে নিরাপদ?
ফলাফল : ৬৪% পক্ষে ভোট দিয়েছেন, ২৭% বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। ৯ % মানুষের মধ্যে কনফিউশান রয়েছে।
প্রথমত ১০০০ স্যাম্পল কখনো ১৮ কোটি মানুষের মতামত তুলে ধরতে সক্ষম নয়। অনলাইনে এখন কারা বেশি সক্রিয় আগে সেইটা ভালো ভাবে বুঝতে হবে। কিছু সোশ্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা কে তা নিয়ে জরীপ করেছে। সে জরীপে দেখা যায়: আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ৫০ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও আমীর শফিকুর রহমান । আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, তারেক জিয়া ও বিএনপির জনপ্রিয়তা জামায়াতের তুলনায় কম! মাত্র ২১% মানুষ ভোট দিয়েছে বিএনপিকে! এই জরীপে অংশ নেয় প্রায় ৪৫০০০ মানুষ; এই জরীপ থেকে দেখা যায় ১৫ বছর আকাম কুকাম করেও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি, বরং বেড়েছে। আসল সত্য হইলো, আওয়ামী লীগের সাপোর্টার দের এখন কোন কাজ কাম নাই, করাপশন করে যে টাকা কামাইসে তা দিয়ে এখন বসে খাচ্ছে এমন নেতা ও সাপোর্টাররা এই জরীপে অংশ নিয়েছে! যারা সৎ ও কর্মহীন তারা এই জরীপে অংশ নেয়ার মতো সুখে নাই। শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের সাইবার সেল অনলাইনে খুব সক্রিয়। তারা বিএনপি কে ফ্যাসিবাদের দোসর প্রমাণে ব্যস্ত! অন্যদিকে বিএনপি অনলাইনে একটিভ নয়। তারা মাঠে জনসংযোগ কাজে বেশি সময় ব্যস্ত। রাজনীতিতে পক্ষ বিপক্ষ থাকবে বিএনপির কাছে এইটা নতুন কোন বিষয় নয়।
দ্বিতীয় জরীপে ১০০০ মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়েছিল। যেহেতু সংখ্যালঘুদের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দুধর্মের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের অংশগ্রহণ এই জরীপে বেশি জরুরি ছিলো। কিন্তু জরীপে যারা মনে করেন সংখ্যালঘুরা নিরাপদ তাদের মধ্যে ৯২% মুসলিম এবং ৮% হিন্দুসহ অন্য ধর্মের! যারা নিরাপদ বোধ করেন না অপশনে ভোট দিয়েছেন তাদের মধ্যে হিন্দুধর্মের লোকের সংখ্যা বেশি! বাকিরা সেকুলার ও আওয়ামী লীগ সাপোর্টার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই জরীপে অনেক ভুল রয়েছে। সংখ্যালঘুদের জরীপ শুধু তাদের মতামতের উপর পরিচালনা উচিত ছিলো। একজন মুসলিম কখনো হিন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন না। এইটা সম্ভব নয়! অন্যদিকে বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে বড়ো অভিযোগ রয়েছে এরা আওয়ামী লীগের সাপোর্টার! এরা তো অন্য সরকারের সময় নিজেদের অনিরাপদ মনে করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই র্যান্ডম স্যাম্পল নেয়া হয়েছে। হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য বর্তমান সরকার ও তাদের অংশীদারেরা শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে মন থেকেই হোক অথবা কারো চাপে পড়েই হোক মন্দির পাহারা দিয়েছে যাতে পতিত আওয়ামী লীগ হিন্দুদের মন্দির ভেঙে বর্তমান সরকারের উপর দায় না দিতে পারে। বর্তমান সরকার ডানপন্থী ও ইসলাম পন্থী সমর্থিত সরকার হিসাবে পরিচিত! তারা বেশ ভালোভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে যা প্রশংসীয়। কিন্তু গত সপ্তাহে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনের বহিস্কৃত নেতা চিন্ময় দাস কে গ্রেফতারের পর হিন্দু ও মুসলিম দের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমন সময় জরীপের ফলাফল বাস্তবতার সাথে কোনভাবেই মিলানো যাচ্ছে না।
আমাদের বুঝতে হবে খোদ আমেরিকার জরীপে কিছু সুইং স্টেটে কামালা হ্যারিসের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলেও বাস্তবতা পুরো উল্টো ছিলো ! কিছু মানুষ হয়তো এসব জরীপ দেখে মনে শান্তি পাইতে পারেন কিন্তু যারা বড়ো বড়ো think-tanks তারা গ্রাউন্ড রিয়ালিটির উপর ভিত্তি করে তাদের কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে থাকেন।