
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রচারণার লিফলেটে পড়েছিলাম , ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ নাকি সকল কর্মক্ষম ব্যক্তিদের কাজ দিবে;একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করবে। নির্বাচনে জেতার পরে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রেখেছিল ? কর্মক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল তবে সেটা নিজ দলের কর্মীদের! তবে আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছিল যে বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে গেলে শিক্ষার আধুনিকায়নের প্রয়োজন আছে। সে জন্য শেখ হাসিনা কিছু আওয়ামী বুদ্ধিজীবী দের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠাইলেন কোথায় শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হইতেছে তা দেখে আসার জন্য। সরকারি খরচে বুদ্ধিজীবীরা অস্ট্রেলিয়ার এক নতুন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানিয়া আসিলেন যার বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় সৃজনশীল পদ্ধতি; এই শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্কুলে গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকিলেও শ্রদ্ধেয় জাফর ষাড় এবং কায়কোবাদ ষাড় খুশি মনে দেশে ফেরত আসিয়া তাদের জেনারেল শেখ হাসিনাকে চিৎকার করিয়া কহিলেন, ইউরেকা ম্যাডাম! এইবার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ঠেকায় কেডা? জেনারেল হাসিনা এই কথা শুনিয়া মুচকি হাসি দিয়া কয়েছিলেন এইবার আমি দেশের মানুষের উন্নতি করিয়া ছাড়িবো! ছাত্রদের জগদীশ চন্দ্র বসু, অমর্ত্য সেন, বঙ্গবন্ধু বানাইয়া ছাড়িবো। তবে জেনারেল সাহেবা নিজের সোয়ামির নাম মুখে নিয়াছিলেন কিনা তাহা জাফর ষাড়ের মনে নাই। শুরু হলো দূর্বল বাংলাদেশি শিশুদের অস্ট্রেলিয়ান পদ্ধতিতে শিক্ষিত করে তুলিবার কাজ! শুরুতেই এই খটমটে পদ্ধতি লইয়া শিক্ষকেরা বিপাকে পড়িলেন। তাহাদের পুরাতন মস্তিষ্কে নতুন অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা পদ্ধতি কিছুতেই মন-মস্তিষ্কে বোধগম্য হইতেছিল না। উহাদের সাহায্য করিবার লাগিয়া আগাইয়া আসিলেন সহায়ক বহি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান! শিক্ষকেরা সহায়ক বহি তে অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা পদ্ধতির নমুনা প্রশ্ন পাইয়া আহ্লাদে আটখানা হইয়া বিবিদের কহিলেন, ওহে প্রিয় চলো ঘুরিয়া আসি, প্রশ্ন বানাইবার টেনশন নাহি আর! বাংলাদেশি দূর্বল কচিকাঁচারা পরীক্ষা হলে যাইয়া প্রশ্ন দেখিয়া চক্ষু চড়কগাছ হইয়া গিয়াছিলো। তাহারা দীর্ঘসময় ধরিয়া খাতায় কিছুই লিখিতে না পারিয়া ক্রদন করিতে করিতে হল থেকে বাহির হইয়া পিতামাতার নিকট এই মর্মে নালিশ করিয়াছিল যে, স্যারেরা কিছু না বুঝাইয়া টুকলি করিয়া প্রশ্ন ছাপাই দিয়াছেন। তাহারা সকলে পরীক্ষায় ফেইল মারিবে। এই কথা শুনিয়া অভিভাবকেরা মিছিল করিতে করিতে প্রধান শিক্ষকের রুমে যাইয়া হট্টগোল করিলে শিক্ষক মহাশয় সকল পিতামাতাদের আশ্বস্ত করিলেন, এই বারের মতো সকলকে পাশ করাইয়া দেওয়া হইবে। যাই হউক এইভাবে বাংলাদেশের দূর্বল কচিকাঁচাদের গিনিপিগ বানাইয়া অস্ট্রেলিয়ার সরকারের দেওয়া অনুদান শিক্ষকেরা হালাল করিলেন।
ইতিমধ্যে জেনারেল হাসিনার সোনার ছাওয়ালেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেরা কত বড়ো মরদ, কার টুনটুনি কত গভীরে যায় ইহার গবেষণা শুরু করিলো। সাধারণ ছাত্ররা সোনার ছেলেদের ভয়ে ক্যাম্পাসে কুঁকড়ে থাকিত সবসময়! জেনারেল হাসিনার শাসনামলে আরেকটি সাফল্যের পালক উহার পেখমে লাগিয়াছিল! নানা বিধ প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হইতে শুরু হইলো । শুরুর দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হইয়াছিল। ফাঁস করিয়া পাশ করা ছাত্রদের যেহেতু অভ্যাস হইয়া গিয়াছিল প্রশ্ন ফাঁস করে পাশ করা উহারা বুঝিয়া গিয়েছিল আরো উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাইতে হইলে প্রশ্নফাঁসের কোন বিকল্প নাই। এইভাবে প্রশ্নফাঁস করিয়া পাশ করিবার ফলে কতিপয় ব্যক্তি কচিকাঁচাদের 'প্রশ্ন ফাঁস' উপাধিতে ভূষিত করিলেন। ২০১৮ সালে জেনারেল হাসিনা উহার বুদ্ধিজীবী সৈনিক জাফর ষাড় কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, কিহে বুদ্ধিজীবী! কচিকাঁচাদের জ্ঞানী বানাইবার কাজ কতখানি আগাইলো? জাফর ষাড় মুখ কাচুমাচু করিয়া বলেছিলেন, "ম্যাডাম সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষা লাভ করিয়া কচিকাঁচাদের সৃজনশীলতা বাড়িয়া গিয়াছে। উহারা এখন সৃজনশীল উপায়ে প্রশ্ন ফাঁস করিতেছে। উহাদের এতই অগ্রগতি হইয়াছে যে, এমন কোন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা নাই যার প্রশ্ন ফাঁস করা বাকি আছে ! এই কথা শুনিয়া জেনারেল হাসিনা জাফর ষাড় কে বলিলেন,"ওহে স্যার আপনি তো নন ষাড়; দ্রুত করেন উপায় বার। নইলে আমি হইয়া যাইবো পগার পার "। জাফর ষাড় ইহা শুনিয়া আতঙ্কে কহিলেন, " ম্যাডাম! কিরূপ শোনায় কচিকাঁচারা যদি পড়ার টেবিলে না বসে ? কিরূপ হয় যদি উহাদের পরীক্ষা নামক কোন কুইনাইনের মুখোমুখি না হতে হয়" ? ইহা শুনিয়া শেখ হাসিনা কহিলেন, "মন্দ বলেন নি ষাড় ! আপনার মস্তিষ্ক হইতে যেহেতু নতুন শিক্ষা পদ্ধতি প্রসব করিতেছে আ্শা করি উহা উত্তম কিছুই হবে"।
নতুন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হইলো। ইহাতে পরীক্ষা হইবে কোনরূপ জ্ঞান অর্জন ছাড়া , পূর্বে থেকে না পড়িলেও প্রত্যহ ইশকুলে উপস্থিত থাকিলে পাশ করাইয়া দেওয়া হইবে এরূপ ব্যবস্থা থাকায় কচিকাঁচারা বহি খাতা বন্ধ করিয়া সকাল বিকাল খেলাধূলায় মত্ত হইয়া পড়িল। পরীক্ষার জন্য পূর্ব থেকে না পড়িলেও পাশ করাইয়া দেওয়া হইবে এমন কথা শুনিয়া অভিভাবকগণ আতঙ্কিত বোধ করিতে লাগিলেন। কচিকাঁচারা বই পড়া হইতে দূরে সরিয়া যাইতেসে। নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে কচিকাঁচাদের সঠিক মূল্যায়ন হইবে না এই অভিযোগ তুলিয়া অসংখ্য কচিকাঁচার অভিভাবকেরা কাডেট মাদরাসায় কচিকাঁচাদের ভর্তি করাইয়া দিলেন। ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা একই সাথে শিখিতে পারিবে এবং পরীক্ষাও নাকি হইবে ইহা শুনিয়া কচিকাঁচাদের গুরুজনেরা ক্ষানিকটা নিশ্চিত হইলেন। জাফর ষাড়ের কাছে এই খবর পৌছানো মাত্রই লুঙ্গি ও সেন্টু গেঞ্জি পরিধান করিয়া জেনারেল হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করিবার উদ্দেশ্যে গণভবনে যাইয়া অবাক হয়ে দেখিলেন জেনারেল হাসিনা বিমান করিয়া কোথাও যাইবার প্রস্তুতি গ্রহণ করিতেসেন। জাফর ষাড় জিজ্ঞাসা করিলেন, " ম্যাডাম! কোথায় প্রস্থান করিলেন" ? জাফর ষাড় কে দেখা মাত্রই জেনারেল হাসিনা তেলে বেগুনে জ্বলিয়া উঠিলেন এবং উচ্চ স্বরে জাফর ষাড় কে কহিলেন " আপনার নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি ডুবাইয়া দিয়াছে মোর নৌকা! নতুন আর কোন শিক্ষা পদ্ধতি দেশে চালু করিবার সাহস আমার নাই; তাই আমি সবকিছু ছেড়ে ভারত চলিয়া যাইতে চাই"।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



