somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান অবস্থা ও জনসাধারণের করণীয় !

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাধারণ চোখে শান্ত মনে হলেও ভিতরে ভিতরে নানারকম অশান্তির আগুন জ্বলছে । রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরণের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন কে কেন্দ্র করে ভোটের মাঠ দখলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। আবার একই সাথে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সম্মুখ শক্তি ছাত্রদের মধ্য থেকে নানা দাবী তোলা হচ্ছে। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে লেজে গোবরে অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে এমন দলগুলোর বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। নানা মুখী ভিতর এবং বাহিরের চাপের মুখে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের অবস্থা বর্তমানে সবচাইতে শোচনীয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে এই দলটি জনগণের মন বিষিয়ে তুলেছে। তবুও তাদের অন্ধ সমর্থকরা ধারণা করে থাকেন দেশের মানুষ শত অন্যায় অবিচারের পরও নির্লজ্জের মতো বলবে আগেই ভালো ছিলাম। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বলে বেড়াচ্ছেন লুটপাট করে উন্নতি করলেও আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করেছে। কিন্তু লুটপাট করে যে সত্যিকারের জনকল্যাণ হয় না বিগত ১০ বছরে তার হাজারো প্রমাণ রয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই । বিরোধী দলেও ভবিষ্যতে যেতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। এসব কিছু ভাবনা চিন্তা করে আওয়ামী লীগ তার বিখ্যাত ট্রামকার্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন কে ইস্যু কে রাজনীতিতে এগুতে চাচ্ছে । আওয়ামী লীগ দেশের সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা আজ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এদের দমাতে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় নিতে হবে। দেশ আবার পাকিস্তান হয়ে যাইতেসে। তাই সকল লুটপাটের কথা ভুলে গিয়ে সাধারণ জনগণের উচিত আওয়ামী লীগ কে সমর্থন দেয়া। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে আবার মুক্ত করবে। =p~

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল : বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বড়ো রাজনৈতিক দল। বিগত ১৬ বছর বিএনপি বিরোধী দলে থেকে সরকার পক্ষ থেকে প্রচুর নির্যাতন ও জুলুমের শিকার হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে তারেক রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিলো। কিন্তু বিএনপির সাথে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের প্রধান শক্তি ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন ইস্যুতে clash হচ্ছে। দল হিসাবে বিএনপির বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হলেও দলটির পলিসি মেকাররা সঠিক সময়ে সঠিক পলিসি গ্রহণ করতে
না পারার কারণে বিগত ১৬ বছর ক্ষমতায় যেতে পারেনি। বিদেশি কানেকশান বিদেশির তেমন স্ট্রং নয়। কিন্তু মধ্যপন্থী দল হিসাবে বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল দেশে রাজনীতি করা খুবই প্রয়োজন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিএনপির সংবিধান ও রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে শক্তিশালী অবস্থান বেশ প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু দলের বিভিন্ন কর্মীদের নিজের মধ্যে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজির অভিযোগ, তারেক রহমানের দেশে আসার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া সহ বিভিন্ন সমস্যা বিএনপিকে ফেইস করতে হচ্ছে যা বিব্রতকর। দ্রুত নির্বাচন ইস্যুতে ছাত্রদের সাথে বিএনপির ঐক্যমত না হওয়ায় একটি ছোট অংশ বিএনপির বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে একটি বায়বীয় শক্তি বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে। এখন আবার আওয়ামী লীগের ইনফ্লুয়েঞ্জারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে বিএনপির ভাগ্যে কিছু নেই, আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির এক হতে হবে তা না হলে বিএনপি মাইনাস হয়ে যাবে। বহু বার রাম-সাম-যদু-মদু বিএনপিকে বিগত ১৬ বছর ভাঙতে চেয়েছে, নির্বাচনে নিতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী : জামায়াত কে নিয়ে তেমন নতুন কিছু লেখার নেই। কারন জামায়াত গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রাজনীতি করে কিন্তু গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোন দল নয়। জুলাই অভ্যুত্থানে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন বড়ো ভূমিকা রাখে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগে যোগ দেয়া অসংখ্য কর্মী পরবর্তীতে শিবির করে বলে জানা যায়। শিবির অনেক আগে থেকেই আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স করে। ইহা তাদের স্ট্রাটেজি। জামায়াত বাংলাদেশে অতীতে কোনদিন ক্ষমতায় যেতে পারেনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া জামায়াতের সবচাইতে বড়ো অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। জামায়াত গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এর প্রমাণ পাওয়া যায় এরশাদের পিরিয়ডে। জামায়াতে ইসলামীর সবসময় সামরিক শাসনের প্রতি আলাদা দূর্বলতা রয়েছে। অনেকে বলে থাকেন বর্তমান সরকার জামাত বেকড সরকার যদিও পর্দার অন্তরালে আরো অনেক খেলোয়াড় রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী দেশের প্রচলিত সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামোতে বিশ্বাস করে না বিধায় যখন এসব পরিবর্তনের কথা সমাজের কিছু আতেল উচ্চারণ করে তখন জামায়াত চুপ থাকে অথবা সাপোর্ট দেয়। এর বাইরে জামায়াত নিজেদের সৎ হিসাবে জনসম্মুখে প্রচার করিতে চায়। উহা খারাপ কথা নয় কিন্তু যে দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে খুশি নয় উহা সৎ হইলে কি আর অসৎ হইলে কি যায় আসে ! দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে জামায়াত বিভিন্ন সমাবেশে যে ভিন্ন শাসন ব্যবস্থার কথা উচ্চারণ করে তার জন্য দলটির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হতো। আপনি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনীতি করবেন, ক্ষমতায় যেতে চাইবেন কিন্তু উহাকেই ছুড়ে ফেলে দিতে চাইবেন ইহা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়।

এছাড়া জাতীয় পার্টি, ইসলামিক আন্দোলন সহ বহু রাজনৈতিক দল রয়েছে যারা মূলত বড়ো দলগুলো থেকে হালুয়া রুটি পায়। তাই এরা সময়ে সময়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।

জনগণের করণীয় : জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে মাথায় রেখে জনগণের বোঝা উচিত দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জনবান্ধব নয়। প্রতিটি দলের রাজনৈতিক ইতিহাস কলঙ্কিত। এরা বাংলাদেশের জনগণের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থে অন্য দলের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। কেউ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের ঝান্ডাধারী ভাবে কিন্তু বর্তমানে তাদের কার্যক্রম মোটেই সাধারণ মানুষের পক্ষে নয় তা ভুলে যায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক মুক্তির সুফল জনগণ এখনো পায়নি। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী দল হিসাবে নিজেদের দাবী করলেও তাদের অতীত ট্রেক রেকর্ড ভালো নয়। অন্য একটি দল নিজেদের অতীত কলঙ্ক মুছতে অন্য দলের খারাপ হিস্ট্রি বের করে এনে নিজেদের কলঙ্ক ঢাকতে চায়। এরা কেউ জনতার পক্ষের শক্তি হিসাবে কাজ করে তার রেকর্ড নাই। জনতার এজেন্ডার চেয়ে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে উহারা বেশি ব্যস্ত। এমন প্রেক্ষিতে জনগণ রাজনৈতিক দল গুলোকে পরিবর্তন করতে পারবে না কিন্তু নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে। একটি সামাজিক বিপ্লব দেশে সংঘটিত হওয়া অতীব জরুরি। কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করে আপনাকে নিজস্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অনুধাবন করতে হবে না। নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাস ও উন্নত দেশ সমূহের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, সর্বোপরি সৎভাবে জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সমাজে প্রকৃত বিপ্লব ঘটার ক্ষেত্র তৈরি হবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৪০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×