somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনে বিদেশি শক্তির ভূমিকা !

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পিছনে কারা কাজ করেছিলেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনা হয়েছে। খোদ আওয়ামী লীগ জানে কাদের হস্তক্ষেপে তাদের এমন পতন ঘটলো। এই বিষয় নিয়ে লেখার কোন ইচ্ছা ছিলো না কারণ আমরা সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার পতনে বেশ খুশি ছিলাম।। কিন্তু গতকাল আমেরিকার একজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক জ্যাক সুলিভানের বাংলাদেশ কে নিয়ে করা মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

গতকাল জ্যাক সুলিভান বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতন নিয়ে কথা বলেছিলেন। তার মূল বক্তব্য ছিলো বাংলাদেশের শেখ রেজিমের পতনে আমেরিকার হাত নেই এবং শেখ পরিবারের বিশ্বস্ত বন্ধুদেশ ভারতও বিশ্বাস করে না যে আমেরিকা আওয়ামী লীগের পতনের পিছনে দায়ী । এই ধরণের বক্তব্য বাংলাদেশি হিসাবে আমাদের কিভাবে নেয়া উচিত ? আমরা যারা দেশে থাকি আমরা তো সবকিছুই দেখতে পারছি কি ঘটছে না ঘটছে ! আমরা বাংলাদেশিরা কি জ্যাক সুলিভানের কথা বিশ্বাস করবো? বিদেশি শক্তির কি কোন প্রভাব ছিলো না দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের প্রহসন মূলক নির্বাচন কে বৈধতা দেয়া আবার তাদের পতন ঘটানোর মতো ঘটনায় ?

বিএনপি ও জামাতের পাঁচ বছরের শাসন শেষে ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এখানেও অনেক কাহিনী হয়েছিলো। আওয়ামী লীগ তার প্রকৃত জনপ্রিয়তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়। বিএনপি -জামাত একবারে ধ্বসে যায়। এর পিছনে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি ও সেনাবাহিনীর হাত ছিলো বলে তা অনেকে ধারণা করেন। ক্ষমতায় আসার পর প্রথম পাঁচ বছর দেশ শাসনের সময় থেকেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংকের সাথে ঝামেলা শুরু হয়। অন্যদিকে ভারতের সুস্পষ্ট সমর্থন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের উপর ছিলো ক্ষমতায় বসার পর থেকেই। ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপে ও আমেরিকা-ইউরোপের বিএনপি-জামায়াতের উপর নাখোশ থাকার কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় ১৫১ সিটে জয়ী হওয়ার পরও টিকে যায়। নির্বাচনের আগে দিয়ে বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে প্রচুর হাঙ্গামা করে যা সামাল দেয়া অনেক কঠিন ছিলো। কিন্তু বিদেশি শক্তি বিশেষত আমেরিকা-ইউরোপ বিএনপিকে সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে চুপ করে রাখে। অন্যদিকে ভারত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জেতার সাথে সাথে নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে দেয়। সে যাত্রায় আওয়ামী লীগ নিরাপদে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করে যায়।

২০১৮ সালে আবার নির্বাচন নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। অন্যদিকে আমেরিকা-ইউরোপ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের চীন-রাশিয়ার সাথে দহরম মহরম ভালো চোখে দেখছিল না। ভারত বাংলাদেশে চীনের উপস্থিতি ভালো চোখে না দেখলেও পুরাতন মিত্র হওয়াতে আওয়ামী লীগকে সরাসরি কিছু বলেনি। তবে যখনই আওয়ামী লীগ রেড লাইন ক্রস করতে গিয়েছে তখন ভারত বাংলাদেশকে শাসিয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নিজেদের বিদেশি শক্তিগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এতে চীন ও ভারতের ইনফ্লুয়েন্স ছিলো। আমেরিকা বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে সকল অন্যায় কাজের বৈধতা পেতে নানা ধরণের দেশ বিরোধী চুক্তি করে দেশের উন্নয়নের নামে। চীনের সাপোর্ট পেতেও একই কাজ করেছিলো আওয়ামী লীগ। চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার মতো ভেটো পাওয়ার যুক্ত একটি দেশকে নিজেদের অনূকুলে রাখার জন্য রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ করতে আমন্ত্রণ জানায়। এইভাবে রাতের ভোটের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার আবারো ক্ষমতায় টিকে যায়। এক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলোর অদক্ষতা ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারার দায় তারা কোনভাবেই এড়াতে পারেনা। সে সময় চীন ও ভারত আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়ায় এবং নির্বাচনকে বৈধতা দেয়। তবে আমেরিকা-ইউরোপ শেখ হাসিনার রাতের ভোট নিয়ে খুশি ছিলো না। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্স নিয়ে যথেষ্ট নাখোশ ছিলো। শেখ হাসিনা সকল বিদেশি পক্ষকে নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিজের পক্ষে রাখার চেষ্টা ২০১৪ সাল থেকেই করে আসছিলেন । সেবারও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের গদি টিকে যায়।

২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসের নির্বাচনের আগে আমেরিকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাংলাদেশে আগমন দেখেই বুঝা যাচ্ছিল এবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ঘটনা ঘটবে না। তবে ভারত-রাশিয়া-চীন-ইরান বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছিলো বরাবরের মতো। মূলত বাংলাদেশে বৈশ্বিক রাজনীতির হাওয়া লেগেছিলো। আমেরিকা-ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অপশাসন, গুম, রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের পর থেকেই বেশ সোচ্চার হতে দেখা যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভেবেছিলো ভারত-চীন-রাশিয়া তো পাশেই আছে আমেরিকা-ব্রিটেনের যে কোন পদক্ষেপ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ঠেকিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের পায়ের নীচের জমিন কেড়ে নেয়ার কাজ শুরু করা হয়েছিলো। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হয়ে যায়। যেহেতু আমেরিকা আওয়ামী লীগ কে প্রহসনের নির্বাচন করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি সবাই ভেবেছিলো ২০২৪ সালেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে যাবে। তবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ভারত-চীন দুইটি পরস্পর বিরোধী শক্তিকে ব্যালেন্স করতে গিয়ে কিছু ভুল করে ফেলেছিলেন। এতে চীন আওয়ামী লীগের উপর নাখোশ ছিলো। রাশিয়া শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে সতর্ক করেছিলো যে জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর আমেরিকা আরব বসন্তের মতো কিছু ঘটাতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররা তেমন এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলো কিনা তা ভবিষ্যতে জানা যাবে। তবে ভারতের রাজনৈতিক থিংক ট্যাংকগুলোর চিন্তা ভাবনা ছিলো শেখ হাসিনা যদি ২/২.৫ বছর ক্ষমতায় টিকে যান তবে আর ভয় নেই। ভারত চেয়েছিলো আওয়ামী লীগের প্রধান যাতে শেখ হাসিনা না থাকেন। একেতো বয়স হয়েছে এবং নানা ধরণের ভুলভাল কথা বলার জন্য জনগণ শেখ হাসিনার উপর বিরক্ত ছিলো। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাশিয়ার আশঙ্কায় সত্য প্রমাণিত হয় । ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পনেরো বছরের শাসনের অবসান ঘটলো।

শেখ হাসিনার পতনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিলো সবচেয়ে বেশি। এক ধরণের সামরিক ক্যু হয়েছে বাংলাদেশে। আর রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার জন্য রাজপথ দখল করে নিয়েছিলো ছাত্র-জনতা। এসব কিছুর মধ্যে কোর্ডিনেশন করেছিলো একাধিক বিদেশি শক্তির গোয়েন্দা সংস্থা। এখন ভারত শুরু থেকেই সন্দেহ করে আসছে এর পিছনে সিআইএ ও আইএসআইয়ের হাত রয়েছে । রাশিয়া ও চীন নীরব ভূমিকায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই। রাশিয়া তার সন্দেহের কথা অনেক আগেই জানিয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে সবচাইতে বড়ো মিত্র বিশেষত ডেমোক্রেটিক দলের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা ড. ইউনূস এখন ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। হাসিনার পতনের পর ড. ইউনূসের দেশের শাসনভার গ্রহণ করা কি কেবলই একটি কাকতালীয় ঘটনা ? হুট করে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ক্ষমতা গ্রহণ করবেন এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলি তা মেনে নিবে ?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:০৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগ বর্তমানে বিজেপির বাংলাদেশি শাখা.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২৭


হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে এমন মন্তব্য করেছেন কলকাতার সাংবাদিক ও লন্ডন ভিত্তিক একটিভিস্ট অর্ক ভাদুড়ী। ফাইনালি কলিকাতার একজন দাদা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যে হারে কলিকাতার ফাটাকেস্ট শুভেন্দু ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা জনমত জরিপ....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩১

একটা জনমত জরিপ....

নিজ উদ্যোগে একটা জরিপ কাজে গত কয়েক দিন বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষদের সাথে কথা বলেছি। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান থাকলেও নিরপেক্ষ মতামত জানতে, বুঝতে নিজেকে শতভাগ নিরপেক্ষ রেখেছিলাম। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাষা (বাংলা) তুমি কার? (বাঙ্গালী কে তবে আর কাহার বা বাংলা ভাষা ??)

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭


'পতিত ও পতিতা' নিয়ে ব্লগার 'ভুয়া মফিজ' বেশ ক্যাচালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। খানদানী ভাষাবিদেরা তাকে ভাষা নিয়ে অনেক পাঠ দিয়েছিলেন। একথা মানতে দ্বিধা নেই যে, খানদানী ভাষাবিদেরা মনে করে শুদ্ধভাষা... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপন্যাস 'কৃষ্ণকান্তের উইল' পড়েছেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৬



রবীন্দ্রনাথ যখন বাচ্চা পোলাপান-
তখন বঙ্কিমচন্দ্র পুরোদমে লেখালেখি করে যাচ্ছিলেন। সেই সাথে করতেন চাকরি। রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের বই আগ্রহ নিয়ে পড়তেন এবং হয়তোবা মনে মনে ভাবতেন, আরে এরকম গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আপনি আমন্ত্রিত....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৯

প্রিয় সুহৃদ,

আচ্ছালামুয়ালাইকুম।
আমার গুম জীবন এবং গুম পরবর্তী সত্য ঘটনাবলী নিয়ে লেখা 'গুম এবং অতঃপর' এবং 'দ্যা আনটোল্ড স্টোরি' (২০২০-২০২১ সালে সিএনএন, আল-জাজিরা এবং বিবিসি চ্যানেলে আমার নাম/পরিচয় গোপন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×