somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত-আফগানিস্তান কূটনীতি, ক্রিকেট ও বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রসঙ্গে!

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কথায় আছে শত্রুর শত্রুকে বানাতে হয় বন্ধু- এই প্রবাদ ভারত ও আফগানিস্তানের সমসাময়িক কূটনীতিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে যখন তীব্র সংঘাত চলছে তখন দুবাই তে ভারত ও আফগানিস্তান পররাষ্ট্র সচিবদের মিটিং চলছে। মিটিং শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত আফগানিস্তানে সম্পর্ক উন্নয়নে আরো সহযোগিতা বাড়াতে চায়। দুইটি ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের দেশ একে অপরের সাথে কেন সম্পর্ক বাড়াতে চায়?

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলে তালেবানরা শরীয়াহ শাসন চালু করে আফগানিস্তানে। ভারত ২০২০ সালে আফগানিস্তান থেকে তাদের কূটনীতিক সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আফগানিস্তানের সাথে চীনের দ্রুত সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত তাদের ভুল বুঝতে পারে। ২০২২ সালের শেষ দিকে ভারত আবার আফগানিস্তানে কূটনীতিক পাঠায়। এর বিপরীতে আফগানিস্তান তাদের কূটনীতিক পাঠায় ভারতে। এর পর সীমিত আকারে ভারত আফগানিস্তানে তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে। ভারতে বিজেপি সমর্থিত সরকার আফগানিস্তানের তালেবান সরকার কে পছন্দ করতো না কোনকালেই। আফগানিস্তানে তালেবানরা ভারত বিদ্বেষী ছিলো। তাহলে এই দুইটি দেশ কেন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে? কারণ হলো আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তান সম্পর্ক দিন দিম খারাপ হচ্ছে। পাকিস্তান টিটিপি ও আফগান তালেবানদের জঙ্গী আখ্যা দিয়ে তাদের উপর হামলা করছে, অন্যদিকে আফগানিস্তান বলছে পাকিস্তান সাধারণ মানুষের উপর হামলা করছে। আফগানিস্তান ভাবছে পাকিস্তান সীমান্তের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানের অধিকাংশ ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালিত হয়। যদি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সম্পর্ক আরো অবনতি হয় তখন পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ করে দিলে আফগানিস্তান বিপদে পড়তে পারে। তাই আফগানিস্তান ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে আগ্রহী।

ভারতের আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতির সুযোগ নিতে চায়। অন্যদিকে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে ভারতের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। গত বছর ভারতের সমর্থিত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ভারতের জন্য এক ধরণের বড়ো ধাক্কা হিসাবে দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের ফুটপ্রিন্ট বাংলাদেশে আরো বৃদ্ধি পেলে ভারতের জন্য বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক বিগত পনেরো বছরের বছরের মতো অবস্থায় থাকবে না। তাই ভারত চায় আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো করে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে।

ভারতের অন্য একটি সমস্যা হলো চীন। চীন গত তিন বছরে আফগানিস্তানে উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আফগানিস্তানের পণ্য চীনা বাজারে রপ্তানির সুযোগ করে দিয়েছে। ভারতের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তার কখনো স্বস্তিদায়ক নয়। চীনের বেল্ট এন্ড ইনেশিয়েটিভ প্রজেক্ট ও চীন-পাকিস্তান করিডোরের বিরোধী ভারত। বাংলাদেশেও চীনের ইনভেস্টমেন্ট বৃদ্ধি ভারত বিগত বছর গুলোতে ভালো চোখে দেখছিলো না। মাতারবাড়ী প্রজেক্টে চীন কে বাদ দেওয়া ও তিস্তা প্রজেক্ট চীন কে করতে না দেওয়ার পিছনে বাংলাদেশের উপর ভারতের চাপ ছিলো। চীনের সাথে আফগানিস্তানের এমন দ্রুত সম্পর্ক বৃদ্ধি ভারতের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। ভারত চায় আফগানিস্তানে তাদের প্রভাব বজায় রাখতে। তাই আফগানিস্তান- পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতির সুযোগ ভারত কাজে লাগাচ্ছে।

পাকিস্তানে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি(ক্রিকেট) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ভারত পাকিস্তানে খেলতে যাওয়ার কথা। কিন্তু যতই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময় এগিয়ে আসছিলো ততই পাকিস্তানে জাতিগত সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছিল। ভারতের বিজেপি সরকার ভারতীয় ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে খেলতে যেতে দিতে আগে থেকেই নারাজ ছিলো। অথচ অন্যান্য সকল দেশ পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে রেগুলার পাকিস্তান ভ্রমণ করেছিল। কারো কোন সমস্যা হয় নাই। ভারত আইসিসিকে জানায় তারা জঙ্গী হামলার ভয়ে পাকিস্তানে খেলতে যাবে না। ভারতের সকল ম্যাচ দুবাইতে অনুষ্ঠিত হোক। আইসিসি বর্তমানে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষায় সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় পাকিস্তানকে এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দুবাইয়ের সাথে যৌথভাবে আয়োজন করতে হচ্ছে।

আফগানিস্তানে শরীয়াহ আইন চালু হওয়ার পর থেকে নারী ক্রিকেট দল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আইসিসির নিয়ম অনুসারে নারী ও পুরুষের সমান মানবাধিকার যে সব দেশ রক্ষায় ব্যর্থ তাদের আইসিসির সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। কিন্তু আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নিতে আইসিসিকে দেখা যাচ্ছে না। ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আফগানিস্তানের সাথে থাকা ম্যাচ বয়কটের হুমকি দিয়েছে আইসিসিকে। কিন্তু আইসিসি মুখে কুলুপ এটেছে। অন্যদিকে ভারত আইসিসির সবচেয়ে বড়ো মোড়ল হওয়া সত্ত্বেও আফগানিস্তানের এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইসিসিকে পদক্ষেপ নিতে তো বলছেই না বরং দুবাইতে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রিম মিশ্রি আফগানিস্তান কে ক্রিকেটে আরো সহায়তার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।

বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজ দেশের স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন দেশের শাসন ব্যবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে চিন্তিত নয়। বরং অন্য কোন দেশের সরকারকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শতভাগ স্বার্থ আদায়ের প্রতিটি সুযোগ তারা কাজে লাগায়। ভারতের সেনাবাহিনী কিছুদিন আগে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চেয়েছেন। মজার ব্যাপার হইলো বিগত ১৫ বছরে ভারতের এমন কোন চাওয়া ছিলো না। বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি এমন নির্বাচন ভারত বৈধতা দিয়েছে। কিন্তু ভারত এখন কেন বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়? বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই উত্তর নিশ্চিয়ই অজানা নয়। :-P
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগ বর্তমানে বিজেপির বাংলাদেশি শাখা.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২৭


হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে এমন মন্তব্য করেছেন কলকাতার সাংবাদিক ও লন্ডন ভিত্তিক একটিভিস্ট অর্ক ভাদুড়ী। ফাইনালি কলিকাতার একজন দাদা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যে হারে কলিকাতার ফাটাকেস্ট শুভেন্দু ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা জনমত জরিপ....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩১

একটা জনমত জরিপ....

নিজ উদ্যোগে একটা জরিপ কাজে গত কয়েক দিন বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষদের সাথে কথা বলেছি। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান থাকলেও নিরপেক্ষ মতামত জানতে, বুঝতে নিজেকে শতভাগ নিরপেক্ষ রেখেছিলাম। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাষা (বাংলা) তুমি কার? (বাঙ্গালী কে তবে আর কাহার বা বাংলা ভাষা ??)

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭


'পতিত ও পতিতা' নিয়ে ব্লগার 'ভুয়া মফিজ' বেশ ক্যাচালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। খানদানী ভাষাবিদেরা তাকে ভাষা নিয়ে অনেক পাঠ দিয়েছিলেন। একথা মানতে দ্বিধা নেই যে, খানদানী ভাষাবিদেরা মনে করে শুদ্ধভাষা... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপন্যাস 'কৃষ্ণকান্তের উইল' পড়েছেন?

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৬



রবীন্দ্রনাথ যখন বাচ্চা পোলাপান-
তখন বঙ্কিমচন্দ্র পুরোদমে লেখালেখি করে যাচ্ছিলেন। সেই সাথে করতেন চাকরি। রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের বই আগ্রহ নিয়ে পড়তেন এবং হয়তোবা মনে মনে ভাবতেন, আরে এরকম গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আপনি আমন্ত্রিত....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৯

প্রিয় সুহৃদ,

আচ্ছালামুয়ালাইকুম।
আমার গুম জীবন এবং গুম পরবর্তী সত্য ঘটনাবলী নিয়ে লেখা 'গুম এবং অতঃপর' এবং 'দ্যা আনটোল্ড স্টোরি' (২০২০-২০২১ সালে সিএনএন, আল-জাজিরা এবং বিবিসি চ্যানেলে আমার নাম/পরিচয় গোপন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×