somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাজায় গণহত্যা : মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকার নেপথ্যে !

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাজার প্রতিটি বিস্ফোরণে কেবল ধ্বংস হয় না —প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রশ্ন: মুসলিম বিশ্ব কোথায় ? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির আয়নায় এই প্রশ্নটি এক খণ্ড অন্ধকার, যা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যর্থতা নয়, মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ ছদ্মযুদ্ধের নগ্ন উদাহরণও বটে। গাজা একদিকে প্রতিরোধের প্রতীক, অন্যদিকে এক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক 'চেসবোর্ড'—যেখানে প্রতিটি চালের পেছনে রয়েছে গোপন সমঝোতা, নীরব সমর্থন, এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। এই চিত্রটি বোঝা জরুরি, যদি ফিলিস্তিন প্রশ্নে মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা ও দ্বিচারিতা অনুধাবন করতে হয়।

হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই বিতর্ক আজ গাজার প্রতিটি নাগরিকের গায়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বোমার আঘাতে মৃত্যু যেন ‘অবধারিত শাস্তি’ হয়ে উঠেছে—শুধু এ কারণে যে, তারা এক ‘ইরানপন্থী’ গোষ্ঠীর আওতায় বাস করছে। রাজনীতি এখানে এতো নিষ্ঠুর যে শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী—কারোর পরিচয় ব্যক্তি নয়, বরং রাজনৈতিক ‘অ্যালায়েন্স’। হামাস যে ইরানঘেঁষা, তাতে সন্দেহ নেই। ২০০৬ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই তারা মধ্যপ্রাচ্যের ‘শিয়া ব্লক’-এর একটি কার্যকর মুখ। এই অবস্থানে সৌদি আরবসহ অন্যান্য সুন্নি রাষ্ট্রের অস্বস্তি দীর্ঘদিনের। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে একটি গোটা জনগোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়ার বৈধতা কে দেয় ?

সৌদি আরব একদিকে ইসলামী বিশ্বের ‘খাদেমুল হারামাইন’ (দ্বয় পবিত্র মসজিদের রক্ষক), অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ‘স্ট্র্যাটেজিক মিডিয়েটর’ হতে চায়। ২০১৯ সালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে যে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করা হয়, তা কেবল অর্থনৈতিক রূপান্তর নয়, বরং ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারেরও রূপরেখা। ইরানকে কোণঠাসা করে সৌদি নেতৃত্ব সুন্নি বিশ্বের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চায়। এই প্রেক্ষাপটে গাজার ঘটনাবলি তাদের কাছে একটি ‘আনফরচুনেট পলিটিকাল ব্যাকড্রপ’ ছাড়া কিছু নয়। এ কারণে তারা বারবার মধ্যস্থতার কথা বললেও, প্রতিরোধের নৈতিকতা বা গাজার মানুষের আত্মত্যাগকে রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেয় না।

সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখনো শক্তিশালী। যদিও ব্রিকসে সৌদি আরবের পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদান কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করেছে, তবু তারা এখনও পেট্রোডলারের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরতা পশ্চিমা বিশ্বকে সন্তুষ্ট রাখার অদৃশ্য চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। ফলত, গাজার ইস্যুতে সৌদি বা উপসাগরীয় শক্তিগুলো প্রকাশ্যে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানে যেতে চায় না।

ইতিহাসে এমন মুহূর্ত বহুবার এসেছে—যখন ন্যায় ও রাজনীতি একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। যেমন : কারবালা ; গাজা সেই ধারারই এক চলমান অধ্যায়, যেখানে বাস্তবতা হলো—ধর্মীয় ঐক্য কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ, কার্যত প্রতিটি মৃত্যু হয়ে উঠছে ভূ-রাজনীতির অনুঘটক এবং, ঠিক এইজায়গায় ইসলামী মূল্যবোধ মুখ থুবড়ে পড়েছে।

“তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করো তাদের বিরুদ্ধে, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না।” (সুরা বাকারা, ২:১৯০)।এই আয়াত যেমন যুদ্ধের অনুমতি দেয়, তেমনি সীমালঙ্ঘনের বিপক্ষে কড়া সতর্কবার্তাও দেয়। গাজার শিশুরা কি সীমালঙ্ঘনকারী? ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া কিশোরীর মুখ কি রাজনীতির খলনায়ক ? না, তারা শুধুই অব্যক্ত প্রতিরোধ। আর মুসলিম বিশ্বের নীরবতা—সেই প্রতিরোধের বিপরীতমুখী এক আত্নাবিক্রেতা হিসাবে ইতিহাসে জায়গা করে নিবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×