somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ : দেশের উন্নয়নের জন্য আসন বাড়ানোর বিকল্প নেই

১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নারী অধিকার নিয়ে কথা উঠলেই কিছু ভদ্রলোকের ঘুম ভেঙে যায়। রাষ্ট্র নড়েচড়ে বসে—একটু যেন ‘স্মার্ট’ ভাব ধরে। সেই ভাবেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সুপারিশ করলো, সংসদের আসন সংখ্যা ৬০০ করা হোক। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন সাধারণ, একজন নারী—দুইজন জনপ্রতিনিধি। কৌশলে ‘সমতা’র মোড়কে এক গাল বুলিয়ে আরেক গালে চপেটাঘাত। প্রথম প্রশ্ন—সংসদে আসলে হয়টা কী ?

একটা আইন যখন সংসদে আসে, সেটার খসড়া, যাচাই, সংশোধন সব আগেই সম্পন্ন হয়ে যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। সংসদ সদস্যরা সেটা পড়ে দেখার সুযোগ পান না বলেই বহুবার নিজেরা বলেছেন। তখন তারা যা করেন—'হ্যাঁ' কইলে কও, না কইলে ক্যান্টিনে গিয়ে চা ফুঁকে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দাও। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, আরও ২৫০ জন এমপি এনে কি এই চা-পানের খরচ বাড়ানো হবে ?

এই প্রস্তাব নারীর ক্ষমতায়নের মোড়কে ক্ষমতার কারচুপি। সমতা কি সংখ্যার মাধ্যমে আসে ? সংখ্যা বাড়িয়ে যদি প্রভাব বাড়তো, তাহলে তো ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ এমপি নিয়েও জাতি আরো সুন্দর ভাবে বাচতে শিখতো ! অথচ সংসদে নারীর উপস্থিতি আছে বহুদিন ধরেই—কিন্তু আইন প্রণয়নে, দলের নীতিনির্ধারণে, বা রাষ্ট্রের বড় সিদ্ধান্তে তাঁদের কতজন কতটুকু ভূমিকা রাখেন ?

কমিশন বলেছে, জিপার পদ্ধতিতে সমান নারী-পুরুষ মনোনয়ন হবে। বাহ, শুনতে কি যে আধুনিক ! কিন্তু এই মনোনয়ন কে দেবে ? সেই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রহীন দলগুলো, যেখানে দলীয় প্রধান যা বলেন, সেটাই শেষ কথা। মনোনয়ন পাবে সেই নারী, যিনি মাঠে কাজ করেছেন? না কি যিনি নেতার পছন্দের পকেটে থাকেন ? এই বাস্তবতায় ‘জিপার পদ্ধতি’ আসলে হয়ে যায় ‘ পকেট পদ্ধতি ’। অর্থাৎ নারী হবেন, ঠিকই, কিন্তু তিনি দলনেতার ছায়ায় থাকা কেউ—নিজস্ব অবস্থানহীন, স্বরহীন।

নারীর ক্ষমতায়নের কথা উঠলেই অনেকে চান—আরও নারী এমপি হোক, আরও কোটা হোক, আরও আসন হোক। অথচ প্রশ্ন হওয়া উচিত—এই নারীরা কী সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন ? কী নিয়ন্ত্রণ করছেন রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ? সংসদে বা দলীয় রাজনীতিতে কতজন নারী স্বতন্ত্র মত পেশ করতে পারেন, কতজন নেতৃত্বের স্তরে পৌঁছান ? নারী অধিকার মানে যদি শুধু ‘চেয়ার পেতে দেওয়া’ হয়, তবে তা আদতে ‘চুপ করিয়ে রাখার উন্নত কৌশল।’

প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে যদি ১ জন করে এমপি হয়, তবুও রাজনীতির স্বচ্ছতা ফিরবে না—যদি দলগুলোর ভিতরে গণতন্ত্র না ফেরে, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী না হয়, রাজনীতিকে পেশিশক্তি আর পুঁজির দখল থেকে মুক্ত না করা যায়। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে যেসব পরামর্শ এসেছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলো বাস্তবসম্মত— স্থানীয় পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব, সামাজিক সুরক্ষা, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ—এসবই দীর্ঘমেয়াদে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারে। কিন্তু তার বদলে যদি ফোকাস হয় শুধু এমপি বাড়ানোয়—তাহলে বোঝা যাবে- রাষ্ট্র আসলে নারীর ‘অধিকার’ নয়, নারীকে ‘উপস্থাপন’ করতে চায়।

৬০০ আসনের সংসদ মানে কি ৬০০ জন চিন্তাশীল প্রতিনিধি ? না কি ৩০০ জন ক্যান্টিনে বসে মোবাইলে স্ক্রল করা, আর বাকি ৩০০ জন চায়ের কাপ ধরে আসর জমিয়ে তোলা ? গণতন্ত্রের নামে এই নাটক চলতেই পারে, কিন্তু দেশ যখন ঝুলে থাকে উন্নয়নের ‘প্রকল্প’ আর দুর্নীতির ‘পারসেন্টেজে’, তখন নারীর নাম করে রাষ্ট্র যদি আরেকটা চেয়ার বসায়—তা কেবল বাহাদুরি নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতার গোপন বিজ্ঞাপন।

পিক ফর এটেনশন অনলি :D
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×