ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়। নির্বাচন কমিশনের দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন দল—‘বাংলাদেশ সংসারবন্দি পার্টি’। নাম শুনেই মনটা কেমন যেন সংসারী হয়ে ওঠে। সংসার করতে করতে যারা হাঁপিয়ে উঠেছে, এবার তাদের রাজনৈতিক পরিত্রাণের পথও খুলে গেল বোধহয়।
এখানেই থেমে নেই ব্যাপারটা। রঙ-বেরঙের নামের মিছিল আরও লম্বা। ‘বাংলাদেশ শান্তির দল’—শান্তির অভাব থাকলে ঘুম না এলে দলের মিটিংয়ে যোগ দিন। ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’—এই দলে বোধহয় সুপারহিরোদের জায়গা হবে। ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’—নামের মধ্যে এমন এক হতাশার সুবাস, যে শুনেই মনে হয়, নেতারা চাকরির আবেদনপত্র হাতে নিয়ে হাঁটছেন।
‘জনতার কথা বলে’ নামে একটা দলও আছে, যেটা শুনলে মনে হয়, বাকিদের বোধহয় ইশারায় কথা বলতে হয় ! ‘জাতীয় ভূমিহীন পার্টি’ তো আরেক কাঠি সরেস—ভোটে জিতলে মনে হয় এমপি অফিস হবে ফুটপাতে। আরেকজন আবেদন করেছেন 'আওয়ামী লিগ' নামে। লিগে শুধু ফুটবল হয় না, ভোটও হয়—এটা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন বুঝি। শেষ পর্যন্ত নামটা তালিকায় আসেনি, ভাগ্যিস আসেনি ! নাহলে আসল আওয়ামী লীগ এবং নতুন আওয়ামী লিগের মধ্যে আমরা গোপালগঞ্জ ডার্বি ম্যাচ দেখতে পারতাম !
কিন্তু মজার জায়গাটা হলো, এই সব নামধারী দলগুলোর ভেতরে অনেকেই পলিটিক্যাল পার্টি আর যাত্রা পার্টিকে গুলিয়ে ফেলেছেন যাত্রাপালায় যেমন এক অধিকারী থাকেন, তেমনি রাজনীতিতেও একজন সর্বেসর্বা থাকেন। যাত্রায় যেমন কলাকৌশল চলে, এখানেও তেমনি নকলা-কৌশলী লোকজন অভিনয় করেন ভোটের নাটকে। মাঝে মাঝে কিছু পিকেটিং, কিছু কান্নাকাটি আর মাঝে মাঝে হুট করে পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি —পুরো ব্যাপারটাই যেন 'ডেমোক্রেটিক থিয়েটার'।
ডেসটিনির সেই বিখ্যাত রফিকুল আমীন সাহেব জেলখানায় বসে নতুন আলোকপাত করেছেন। জেলারের মুখে নাকি তিনি শুনেছেন, "আপনি তো রাজনীতিবিদ না, রাজনীতিবিদ হলে বের করে দিতাম। আনসারুল্লাহর সদস্য হলেও হয়তো ছাড় পেতেন।" রফিকুল সাহেব তখন বুঝলেন—রাজনীতি মানে স্রেফ একটা 'ঢাল'। ব্যস! পরদিনই দল খোলার কাজে লেগে পড়লেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু একটা দল খুলে তার নাম রাখতে পারলেই কি দল হয়ে যায়? ‘নাম সর্বস্ব’ দলে যদি ‘কাম’ না থাকে, তাহলে তো সেটা শুধুই রাজনৈতিক 'নামতা' পড়া!
ইসির দরজায় কড়া নাড়ছে যেসব দল, তাদের আবেদনপত্র পড়তে পড়তে কমিশনের চোখে জল এসে যেতে পারে—হাসির না কাঁদার, সেটা নির্ভর করে কোন পাতায় তারা পৌঁছায়। তবে দল নিবন্ধনের আগে একটুখানি জিজ্ঞাসা করা যেতেই পারে—"ভাই, আপনি যাত্রা করবেন, না রাজনীতি করবেন ?"
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪