কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে 'false flag ' অপারেশন মনে করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সনাতনীরা নরেন্দ্র মোদিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করার মহান নেতা হিসাবে দেখে। তারা বিজেপি সরকারের প্রতি যারপরনাই মুগ্ধ ! তাই কাশ্মীর হত্যাকান্ডে বিজেপি সরকারের বয়ান এবং আকশনের উপর পূর্ণ সমর্থন তারা ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশের মানুষ যে কি পরিমাণ আবেগ দিয়ে চিন্তা করে তারি বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে ব্লগ হচ্ছে দোকানে চায়ের কাপে ঝড় উঠা দেখে ! সাধারণ মানুষ হিসাব করছে কার কত পারমাণবিক আছে, সামরিক শক্তিতে কে কত নাম্বারে আছে ইত্যাদি। পাকিস্তান সিন্ধু নদের পানি ভারত না দিলে রক্ত বন্যা বইয়ে দিতে চায় আর ভারত চায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে পাকিস্তানের আন্দার ঘুস্কে মারতে ! এসব নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যেও আলোচনা হচ্ছে। আসল কথা হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ করতে কতটা আগ্রহী ? বাংলাদেশের কিছু করার আছে এতে ?
ভারত-পাকিস্তান দুইটাই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তাদের বড়ো স্কেলে যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা নেই। ভারত সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ বন্ধ করবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ তারা পাকিস্তানের সাথে চুক্তি স্থগিত করেছে বাতিল করেনি। অর্থাৎ আলোচনার জায়গা রেখেছে । ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের উপর বিরোধী দলগুলোর চাপ আছে। সর্বদলীয় বৈঠকে সমালোচনা হয়েছে কেন কাশ্মীর থেকে কোনো রাজনৈতিক দলকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। বিজেপি সরকার গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছে। ভারত হয়তো পাকিস্তানে একটা ছোটখাটো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে জনগণ কে শান্ত করবে। বিজেপি এবং নরেন্দ্রমোদির জনপ্রিয়তা বাড়বে। যারা পূর্বে নরেন্দ্র মোদির সাপোর্টার ছিলো না তারাও সাপোর্ট করা শুরু করবে। হিন্দুত্ববাদের জয়জয়কার হবে। চাপে পড়বে ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কাশ্মীরে পাহালগাওতে যারা মারা গিয়েছে তারা সবাই সিভিলিয়ান ছিলো। অন্যদিকে ২০১৯ সালে পালওয়ামাতে মারা গিয়েছিল ভারতীয় জওয়ান যাকে সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হিসাবে দেখা হয়েছিলো। তখন একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ব্যতীত আর তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। ভারত যে খুব গরজ করে হামলা করেছিলো এমনটি নয়। জাস্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা করবার জন্য এই হামলা করা হয়েছিলো। তারপর এর উপর ভিত্তি করে ভারতে URI নামে একটা ফিলিম হয়েছিলো যা বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার খেতাব পায়। এবারো এমন কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারত পাকিস্তানের সাথে কোনোভাবেই লার্জ স্কেলে যুদ্ধ করার মতো ঝুকি নেবে না। ব্যবসা- বাণিজ্য, বিনিয়োগের ক্ষতি করে পাকিস্তানের মতো একটা লুজার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজের জনগণ কে বিপদের মুখে ফেলবে না এমন পরিবর্তীত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে। তবে তারা ডিপ স্টেটের মাধ্যমে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে ।

পাকিস্তান কি যুদ্ধে জড়াবে ? পাকিস্তানের স্বার্থে আঘাত লাগে এমন কিছু ব্যতীত পাকিস্তানের যেচে পড়ে ভারতে হামলা করার কারণ নেই। ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধ করার পূর্বে পাকিস্তান তার নিজের জনগণের মুখোমুখি দাড়াতে হবে। রাজনৈতিক নেতারা যতই আস্ফালন করুক দেশের জনগণ যুদ্ধ চায় না। পাকিস্তানের জনগণ সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থার উপর নাখোশ। তাদের নাগরিক অধিকার হরণ করে রেখেছে সরকার ! বিশাল লোনের বোঝা আছে পাকিস্তানের উপর। প্রতিদিন বিভিন্ন স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে হামলায় বেসামরিক লোক মারা যাচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা পাঞ্জাবে শত শত তরুণদের গুম করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায়। পাকিস্তানের সরকার নিজের দেশের লোকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে জোর করে ক্ষমতায় আছে তারা নিশ্চয়ই আগ বাড়িয়ে ভারতের সাথে যুদ্ধ করবে না। ভারত যদি শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেয় কেবল তখনই যুদ্ধ করার মোটিভ পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের কি করণীয় আছে ? বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ভারতের কাশ্মীরে হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। যে কোনো সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে সরকারের অবস্থান তা পুনরায় ব্যক্ত করেছে। ভারত-পাকিস্তান অসন্তুষ্ট হয় এমন কোনো বক্তব্য সরকারের শীর্ষস্থানীয় কারো পক্ষ থেকে আসা উচিত হবে না। যেহেতু ভারতে যারা হামলা করেছে তারা 'নন-স্টেট আ্যাক্টর' গ্রুপ যাদের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে সমালোচনা আছে বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে এই 'নন-স্টেট আ্যাক্টর' গ্রুপের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান দেশের অভ্যন্তরে ধরে রাখতে পারলে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশের জনগণের আবেগ নিয়ে খেলা করছে সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু বুদ্ধিজীবী। তাদের বক্তব্য শুনে-পড়ে আমরা হিসাব কষছি ভারত আমাদের বিরুদ্ধে কি কি করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সমস্যা আর পাকিস্তান-ভারত সমস্যা এক বিষয় নয়। কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে অনেকে পাকিস্তানের সমস্যার সাথে বাংলাদেশের সমস্যা জুড়ে দিতে চাচ্ছেন। তারা মনে হয় ১৯৭১ সাল পূর্বের জামানায় বসবাস করেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:২৯