
আগামীর বাংলাদেশে আমরা কি করাপ্টেড অথবা বাবার উত্তরাধিকারী কাউকে রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে ক্ষমতায় দেখতে চাই ? অবশ্যই না ! বাংলাদেশের তরুণেরা চায় ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক হবে ইয়ং এবং ডায়নামিক চরিত্রের অধিকারী। সে ক্ষেত্রে অনেক তরুণের প্রথম পছন্দ এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলামকে। জুলাই অভ্যুত্থানে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার জন্য ও জন্মগতভাবে লিডারশীপ কোয়ালিটি থাকার কারণে কোটি তরুণের প্রথম পছন্দ নাহিদ ইসলাম। কিন্তু নাহিদ ইসলাম যেভাবে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে রাজনীতি করে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তা পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলে বিবেচিত।
বাংলাদেশ শাসন করা প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এভাবেই রাজনীতি করে এমপি মন্ত্রী হোন। তাই নাহিদ সহ যারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। পুরাতন বন্দোবস্তের সাথে জড়িত রাজনীতি থেকে তাদের দূরে সরে থাকা উচিত। তাদের অনুসরণ করা উচিত ব্যক্তিগত জীবনে ক্যারিয়ারে যারা সফল হওয়ার পর রাজনীতিতে সফল হয়েছেন এমন মানুষদের অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস হতে পারেন নতুন ভাবী রাষ্ট্রনায়কদের জন্য উত্তম আদর্শ।
ড.ইউনূস ব্যক্তিগত ভাবে দারুণ সফল একজন মানুষ। বাংলাদেশের চেয়ে বাইরের দেশে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। মূর্খ বাঙালি উনাকে সুদখোর বলে জেলাসী থেকে। তিনি সারাবিশ্বে সোস্যাল বিজনেসের ধারণার প্রবক্তা ! আশা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে তিনি থ্রী-জিরো তত্ত্বের জন্য আবারও নোবেল পাবেন। বাংলাদেশের আগামীর রাষ্ট্রনায়ককে অবশ্যই ক্যারিয়ারে এমন সফলতা অর্জন করতে হবে। এরপর তারা রাজনীতিতে প্রবেশ করলে চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ইন্টেরিম সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. ইউনূস। কিন্তু এত বড়ো দায়িত্ব নেয়ার পরও থেমে নেই উনার ব্যবসা সম্প্রসারণ কার্যক্রমের। তিনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও নিজের ব্যবসা সমান্তরালে চালিয়ে যাচ্ছেন যা বিস্ময়কর ! তাঁর ব্যবসার সম্প্রসারণ হিসাবে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ ব্যাংকের সহায়তায় তিনি বাংলাদেশে স্টারলিংককে ব্যবসা করতে সুযোগ দিচ্ছেন। একজন পাকা ব্যবসায়ীর পক্ষে কেবল এমন কাজ করা সম্ভব। একদিকে দেশের মানুষের উপকার হলো আবার নিজেরও উপকার হলো। উনার ভাষ্যমতে " স্টারলিংক হবে গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণফোনের একটি সম্প্রসারণ, যা গ্রামের নারী ও যুবকদের বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করার পথপ্রদর্শক হতে পারে। " কি অসাধারণ চিন্তাভাবনা স্যারের। এরকম নিজের কথা, দেশের কথা ভাবতে হবে ভবিষ্যতের তরুণ রাজনীতিবিদদের !
শুধু কি তাই ? দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ড.ইউনূস বাজারে আনছেন নগদের মতো 'সমাধান ডিজিটাল ওয়ালেট ' (পেমেন্ট সারভিস প্রোভাইডার psp) গ্রামীণ টেলিকমের আন্ডারে। অন্যান্য টেলিকম কোম্পানি একই সুবিধা চালু করার জন্য আবেদন করে রাখলেও ড.ইউনূসের সুখ্যাতি ও গ্রামীণ টেলিকমের গুডউইলের কথা চিন্তা করে শুধু মাত্র সমাধান ডিজিটাল ওয়ালেটকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন জনগণের উপকার হবে একই সাথে ব্যবসা সম্প্রসারণ হবে গ্রামীণ টেলিকমের আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে।
বাংলাদেশের অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকজন প্রায়শই বিদেশ যেতে দালালের খপ্পরে পড়েন। এভাবে রাশিয়ার যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। তারা আদম বেপারীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। আদম ব্যাপারীদের দৌরাত্ন বন্ধ করতে ড.ইউনূস 'গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস ' নামে জনশক্তি রপ্তানীর জন্য এজেন্সীর অনুমোদন নিয়েছেন। যদি তিনি আজ সরকার প্রধান না হতেন এই এজেন্সীর অনুমোদন পেতেন কিনা সন্দেহ ! কারণ ইন্টেরিম সরকারের সময়ে কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান জনশক্তি পাঠানোর জন্য অনুমোদন পেয়েছে তা হলো গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস। এই প্রতিষ্ঠানের কারণে আর কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে কাউকে নিঃস্ব হতে হবে না।
বাংলাদেশের শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নগামী হয়ে পড়ছে। তাই বিশ্বের সকল আধুনিক ক্যারিকুলামের সমন্বয়ে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়। এর বোর্ড অব ট্রাস্টিতে রয়েছেন ড. ইউনূসের ভাই ড. ইবরাহীম যিনি একজন পদার্থবিজ্ঞানী। সহজেই অনুমেয় এই প্রতিষ্ঠানের মান কেমন হতে পারে ! ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব র্যাংকিয়ে এই ইউনিভার্সিটি টপে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছুই নাই । ড. ইউনূস দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কতটা চিন্তা করেন তা সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে। কোনোভাবেই শুধু ক্ষমতা কে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ হিসাবে ইহাকে দেখলে ঠিক হবে না। এসব ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্য জনসাধারণের কল্যাণ!
ভবিষ্যৎ তরুণ রাষ্ট্রনায়করা চাইলে ড.ইউনূসের মতো সরকার প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের ব্যবসা বাণিজ্য সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের উপর আরোপিত কর বাতিল করতে পারেন। স্বৈরাচারী হাসিনার সময়ে ড.ইউনূসের উপর ৬৬৬ কোটি টাকার কর পরিশোধের রায় আসে। কিন্তু ড.ইউনূস দেশের ক্ষমতায় বসার পরপর এই রায় হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেয়া হয়। আদালত বুঝতে পেরেছে তারা ভুল করেছে। এত বড়ো সম্মানিত ব্যক্তি কোনোভাবেই এত টাকা কর দিতে পারেন না। আর এই মামলা ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ড.ইউনূসের তিলে তিলে রক্ত ও ঘামে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে শয়তান শেখ হাসিনা সরকারি হস্তক্ষেপ বাড়ানোর জন্য ২৫ শতাংশ মালিকানা সরকারের হাতে নিয়ে ফেলেন। কিন্তু ক্ষমতায় বসে ড.ইউনূস সরকারি মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনেন। শুধু ব্যবসা সম্প্রসারণ নয় নিজের ব্যবসার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখার শিক্ষাও আমরা ড. ইউনূসের কাছ থেকে পেতে পারি।
আগামীতে যেসব তরুণ নিজেদের রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে দেখতে চায় তাদের উচিত ড. ইউনূসের ফুটপ্রিন্ট ফলো করা। সারাজীবন রাজনীতি না করেও তিনি বাংলাদেশের অনেক বড়ো রাজনীতিবিদদের চেয়ে রাজনীতি বেশি বুঝেন। উনার ব্যবসায়িক জ্ঞানের সাথে কারো তুলনা চলে না। আর এসব কিছু সম্ভব হয়েছে কেবল সামাজিক ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে। দেশ ও জনগণের জন্য ভালো কিছু করলে তার কয়েকগুণ রিটার্ন পাওয়া যায়। তাই রাজনীতি করার আগে প্রয়োজন বড়ো চাকুরি বা ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হওয়া। তবেই বদলে যাবে বাংলাদেশ, স্থায়িত্ব পাবে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



