somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রদের কারা মাইনাস করতে চায় ?

০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম 'কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা' শিরোনামে ফেইসবুক পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, ইন্টেরিম সরকারের ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। তাই ইচ্ছা করলেই ছাত্র-জনতার সকল দাবী পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্রপ্রতিনিধি মাত্র দুইজন। এই দুইজনের পক্ষে বাকি অন্যান্য উপদেষ্টাদের সাথে বাহাসে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও মাহফুজ ও আসিফ তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে সবদিক ব্যালেন্স রেখে কাজ করার চেষ্টা করছে। মাহফুজ অভিযোগ করেছেন, পুরাতন এস্টাবলিশমেন্ট এখনো বাংলাদেশে সক্রিয় ও তারা ছাত্রদের মাইনাস করতে চায়। ছাত্ররা বিভিন্ন দল, উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ায় মাহফুজ আলম হতাশ। নতুন রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতারা বিভিন্ন করাপশন ও বিতর্কিত কাজ করায় তাদের জনসমর্থন কমে গেছে। সকলের উদ্দেশ্যে তিনি ঐক্য ধরে রাখার আহবান জানান।

মাহফুজ আলম ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নিয়ে যা লিখেছেন তা পুরোপুরি সত্য। ইন্টেরিম সরকারে অন্তত তিনপক্ষ জড়িত আছে। এনসিপি-জামায়াত, বিএনপি ও ড. ইউনূসের পক্ষ। তার মধ্যে শেষ পক্ষের প্রভাব অন্য দুই পক্ষের তুলনায় বেশি । এজন্যই মূলত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না। শেষ পক্ষ অন্যান্য পক্ষের মধ্যে লিয়াজো হিসাবেও কাজ করে। মাহফুজ আলম এনসিপির আহবায়ক নাহিদের উপর বিরক্ত। তা না হলে সে কখনোই উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্রদের প্রভাব কমে যাচ্ছে এমন কথা বলতো না। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির নেতাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম সবার চেয়ে পাওয়ারফুল ! বাকিদের ইম্পেক্ট উপদেষ্টা পরিষদে ততোটা নেই। নাহিদ চলে যাওয়ার পর বাকি দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রচুর চাপ ফেইস করছে তা মাহফুজ আলমের লেখা থেকে আমরা বুঝতে পারি।

মাহফুজ আলম বলছেন ডেডিকেটেড ছাত্র নেতারা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত হয়ে পড়ছেন। এক্ষেত্রে তিনি উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্রনেতা নাকি বাইরের ছাত্রনেতাদের বুঝিয়েছেন তা প্রশ্নের দাবী রাখে। মাত্র দুই/তিনজন ছাত্র উপদেষ্টা ক্ষমতায় আছে কিন্তু তাদের ইনফ্লুয়েন্স খাটিয়ে প্রশাসনের সর্বজায়গায় যেভাবে ছাত্ররা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে এমন ঘটনা অতীতেও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যদি অন্তত ৫০ ভাগ ছাত্রদের থেকে উপদেষ্টা হতো তাহলে আরো বড়ো ধরণের দূর্ঘটনা গঠতে পারতো । কারণ ক্ষমতা ও লোভ পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন কাজ।

মাহফুজ আলম দাবী করেছেন পুরাতন এসটাব্লিশমেন্ট আবার সেই দুই দলের রাজনৈতিক বৃত্তে ফিরে যাওয়ার পায়তারা করছে। আমলা-সেনাবাহিনী কম্প্রমাইজ্ড ! তারা চায় ছাত্রদের মাইনাস করতে । এই টাইপ কথাবার্তায় কিছু সমস্যা আছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য ইন্টেরিম সরকার আমলাদের বেশি ঘাটাঘাটি করছে না। অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আমলের সচিবদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার।মাহফুজ আলম কি এসবের কিছুই জানেন না ? নাকি জেনেও না জানার ভাণ করছেন ! সেনাবাহিনী ফুল প্রটেকশন দিয়ে ছাত্রনেতাদের জীবন রক্ষার কাজে সর্বদা জাগ্রত। তবুও আমাদের মাহফুজ আলমের চোখে সেনাবাহিনী-আমলারা কম্প্রমাইজ্ড !

ছাত্রদের কি পুরাতন এস্টাবলিশমেন্ট মাইনাস করতে চায় নাকি অন্য কোনো শক্তির ফাঁদে ইতিমধ্যে পা দিয়েছে তারা ? ছাত্রদের রাজনৈতিক দল যারা সাপোর্ট করছে তারা চায় নির্বাচন পিছিয়ে যাক। তাদের মনে আশা এতে বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা কমবে এবং ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের উপর মানুষের বিশ্বাস বাড়বে। এই থিওরীর সমস্যা হচ্ছে ছাত্রদের ব্যবহার করে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের কাবু করিয়েছে ইন্টেরিম সরকার। এই দুই খাটাশ পক্ষের সংস্পর্শে এসে বেকার ছাত্ররা লোভে পড়ে গেছে। আবার নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলে পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলোর মতো প্রভাব খাটিয়ে তারা ব্যবসা বাণিজ্য বাগিয়ে নিচ্ছে। যত সময় গড়াবে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ভারী হতে থাকবে। অর্থাৎ স্বৈরাচারের দোসর দের পদ থেকে নামাতে গিয়ে নিজেদের চারিত্রিক সততা হারিয়ে ফেলছে ছাত্ররা যা উদ্বেগজনক।

একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে বিগত ৫৪ বছর রাজনীতি করে সৎ মানুষের দল হিসাবে দাবী করা জামায়াত এখনো ৫/৭ পারসেন্টের বেশি ভোট পায় নি। আর ছাত্রদের রাজনৈতিক দল একেবারে নতুন হিসাবে ডাক দিয়াছে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ! এখন তারাই যদি অনিয়মের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এনসিপির উপর। এমটাও হতে পারে এভাবে তাদের বদনামের ভাগীদার করে সমাজের চোখে তাদের গুরুত্বহীন করে তোলার কাজ শুরু করা হয়েছে। দিন যত যাবে ছাত্রদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে ।

এবার আসি ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে। তারা আসলে কাকে ফলো করছে ? তারা কি ডানপন্থী না বামপন্থী মতাদর্শের ? যদি তারা ইসলামিক দলগুলোর মতো বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কারণ বাজারে এত এত ইসলামিক ভাবধারার দল নতুন দলে কেন মানুষ যোগ দিবে ? বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে মধ্যপন্থার বিকল্প নেই। তাহলে মোটামুটি সবার কাছেই কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অনেক দল রাজনীতি করলেও ছোট ছোট আঞ্চলিক দল বাদে বড়ো দল থাকে দুই/তিনটি ! এনসিপি যদি সেই দুই/তিনটি দলের মধ্যে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় তবে অনেক উঁচু পর্যায়ের ব্রেইনকে তাদের দলে আনতে হবে। শুধুমাত্র শহরকেন্দ্রিক রাজনীতি না করে গ্রামবাংলার পথে-প্রান্তরে তাদের ছড়িয়ে পড়তে হবে। তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা ও মতাদর্শ মানুষের কাছে বোধগম্য হতে হবে। তাহলে নতুন-পুরাতন কোনো এস্টাবলিশমেন্টের পক্ষে তাদের মাইনাস করা সম্ভব হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৩৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×