somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে এই চুক্তি ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের জন্য স্বস্তির খবর বয়ে এনেছে। কিন্তু ঠিক সেই রাতেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের এক অধ্যায় রচিত হয়, যা দুই দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে আবারও যুদ্ধের বিভীষিকা নিয়ে এলো।

২০১৪ সাল থেকে ভারত শাসন করছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার, যাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় পাকিস্তানবিরোধী rhetoric একটি কেন্দ্রীয় স্থান দখল করে আছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর বালাকোটে ভারতের "সার্জিক্যাল স্ট্রাইক" এবং এরপরের রাজনৈতিক লাভজনক প্রচারণা দেখিয়ে দিয়েছে—যুদ্ধ বা সংঘাতকে কীভাবে নির্বাচনী ফায়দা লুটতে ব্যবহার করা যায়। এবারও ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ধারণা করা হচ্ছিল যে ভারত কোনো না কোনোভাবে জবাব দেবে। ৬ মে-র সেই "জবাব" এলো পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিমান হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে। ভারত দাবি করছে, তারা "সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি" ধ্বংস করেছে; পাকিস্তান পাল্টা দাবি করছে, তারা ভারতের রাফালসহ পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। কিন্তু এই পরস্পরবিরোধী দাবির মধ্যেই লুকিয়ে আছে যুদ্ধের আসল চরিত্র—একটি অদৃশ্য তথ্যযুদ্ধ, যেখানে সত্যের চেয়ে প্রোপাগান্ডাই বেশি শক্তিশালী।

ভারতীয় মিডিয়ার হেডলাইনগুলো পড়লে মনে হবে, পাকিস্তান ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি মিডিয়া ভারতের সামরিক ব্যর্থতার কাহিনি জোরেশোরে প্রচার করছে। কিন্তু এই সংঘাতের প্রকৃত মূল্য দিচ্ছে সাধারণ মানুষ—যারা সীমান্তের কাছাকাছি বসবাস করে এবং যাদের জীবন প্রতিটি গোলাগুলির সঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শিয়ালকোট, মুজাফফরাবাদ বা ভিম্বেরের বাসিন্দারা রাতের অন্ধকারে আকস্মিক হামলার আতঙ্কে জেগে থাকেন, অথচ দিল্লি বা ইসলামাবাদের ক্ষমতাধররা নিরাপদ দূরত্ব থেকে এই সংঘাতকে রাজনৈতিক পুঁজিতে পরিণত করেন।

মজার ব্যাপার হলো, যুদ্ধের পরদিনই কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএলের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের আমেজে। পাকিস্তানেও পিএসএলের খেলা চলতে থাকে নির্ধারিত সময়ে। ক্রিকেটাররা রান করছেন, দর্শকরা উল্লাস করছেন—কিন্তু কেউই যেন মনে রাখছেন না যে সীমান্তের ওপারে মানুষ আতঙ্কে কাঁপছে। এটাই আধুনিক যুগের যুদ্ধের নিষ্ঠুর পরিহাস—যেখানে রক্তপাত এবং বিনোদন পাশাপাশি চলতে থাকে, আর শাসকগোষ্ঠী জনগণের আবেগকে পরিচালনা করে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে।

ইতিহাসের বইয়ে যুদ্ধের ফলাফল স্পষ্ট হতো—এক পক্ষ জিতত, অন্যপক্ষ হারত। কিন্তু আজকের যুদ্ধের ফলাফল অস্পষ্ট। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই নিজেদের "বিজয়ী" দাবি করছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সংঘাতে কোনো দেশই জিতবে না। হারবে শুধু দুই দেশের সাধারণ মানুষ, যাদের রক্তে শাসকদের রাজনৈতিক অঙ্ক মেটে। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় যেমন বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তেমনি এই সংঘাতের প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ইতিমধ্যেই এর নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করেছে।

২২ এপ্রিলে নিহত পর্যটকদের পরিবার কি পাকিস্তানের ৩১ জনের মৃত্যুতে শান্তি পাবে? যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের কি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর কখনই মিলবে না, কারণ যুদ্ধের আসল লক্ষ্য হলো জনগণকে আবেগতাড়িত করে রাখা। বিজেপি হোক কিংবা পাকিস্তানের সরকার—উভয়ই এই সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভোটব্যাংক শক্তিশালী করবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, যুদ্ধ শুধু মৃত্যু আর ধ্বংসই বয়ে আনে। জনগণের দায়িত্ব হলো এই রাজনৈতিক খেলাকে চিনতে শেখা এবং শান্তির পক্ষে সোচ্চার হওয়া। কারণ, যুদ্ধে শাসকেরা জিতলেও হার সাধারণ মানুষের।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:১৩
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×