
'ফাইট্যা যায় বুকটা ফাইট্যা যায়' খ্যাত সংগীত শিল্পী গতকাল রাতে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। শিল্পী মমতাজ ফোক সংগীতের জন্য গ্রামে গঞ্জে বেশ নাম করেছিলেন। শিল্পী মমতাজ কে সবাই চিনে মূলত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি প্রোগ্রাম থেকে। হানিফ সংকেত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতিভা দর্শকের সামনে তুলে আনতেন। এসব প্রতিভার মধ্যে শিল্লী মমতাজ ও পেশায় রিকশাচালক শিল্পী আকবর সবচাইতে বেশি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আকবর নিজের প্রতিভাকে সেভাবে যত্ন না করায় হারিয়ে গেলেন। অন্যদিকে মমতাজ সময়ের সাথে সাথে নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করলেন। ১/১১ এর সরকারের সময় যখন চালের দাম জনসাধারণের হাতের বাইরে চলে যায় তখন জনগণ কে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার জন্য সরকারিভাবে বিজ্ঞাপন চালু করা হয়েছিলো। শিল্পী মমতাজ সে বিজ্ঞাপনে গান গেয়েছিলেন। এছাড়া বন্ধু চুলা, বায়োগ্যাস এসব জনগণের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের নির্মিত বিজ্ঞাপনে মমতাজ গান গাইতেন। এভাবে সময়ের সাথে সাথে মমতাজ ব্যক্তিগত সফলতার শীর্ষ আহরণ করতে শুরু করলেন।
শিল্পী মমতাজ আরো বেশি লাইম লাইটে আসেন যখন বাংলাদেশে গীতিকাব্য ধরণের বাংলা ছবি নির্মাণ হওয়া শুরু হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছবি আমার দেখা আছে। খাইরুন লো, জমিলা সুন্দরী ও বাংলার বউ টাইপ ছবি গুলোতে প্লে-ব্যাক সিংগার হিসাবে বেশ নাম করেছিলেন মমতাজ। তার বিখ্যাত গানের মধ্যে : বুকটা ফাইট্যা যায়, খাইরুন লো, পোলাতো নয় যেন আগুনের গোলা বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রথম পছন্দের গান ছিলো। সব শ্রেনীর মানুষের নিজ নিজ টেস্ট থাকে গানের। যে সময় আমরা এফএম রেডিওতে হাবিব ওয়াহিদ, স্টোরিক ব্লেস, বালাম, তপু ও তাহসানের গান শুনতাম সে সময় শ্রমিক শ্রেণীরা একই এফএমে মমতাজের গান শুনতো। কিন্তু ধীরে ধীরে মমতাজ সব শ্রেনীর মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মমতাজ সম্ভবত নিরক্ষর ছিলেন বা মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। তিনি লাইট হাউজ নামে নাইট কলেজ থেকে ইন্টার পাশ করেছেন পরিচিত হওয়ার পর। শিল্পী মমতাজ বেশ কয়েকবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তার এক স্বামী বাউল ছিলো যার নামে আবার ঔরশ হয়। সবশেষ তার দুইজন কন্যা সন্তান আছে বলে জানা যায়। শিল্পী মমতাজ মধ্যবিত্ত জেন-জির কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী খালেদ হাসান মিলুর ছেলে বাংলাদেশের এক নম্বর সিংগার প্রীতম হাসানের সাথে কলাবোরেশনে গান গিয়ে। তাছাড়া কোক স্টুডিও বাংলায় গান গেয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অভিনেতা, সংগীত শিল্পী বিগত শেখ হাসিনার আমলে অধিক অংশগ্রহণ করে। তারা স্বেচ্ছায় তাদের মুখ কালো করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে আসাদুজ্জামান নুর(বাকের ভাই), তারানা হালিম, রিয়াজ, ফেরদৌস, শমী কায়সার, তারিন ও মমতাজ সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কিত অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে অনেক অভিনেতা ও সংগীত শিল্পী যুক্ত ছিলেন।শিল্পী মমতাজের কপাল একসময় খুলে যায়। খুব সম্ভবত সংরক্ষিত নারী আসন থেকে তিনি এমপি হোন। এমপি হওয়ার পর পার্লামেন্টে যখন শেখ হাসিনা ক্লান্ত অনুভব করতেন তখন গান শুনিয়ে চাঙা করার দায়িত্ব ছিলো শিল্পী মমতাজের। এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে তোষণ করে দলে বেশ ভালো অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন শিল্পী মমতাজ।
বাংলাদেশের রাজনীতি (গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়) প্রথম গুণগত মান খারাপ হয় বেগম জিয়ার প্রথম শাসনামলে। বড়ো বড়ো ব্যবসায়ী, রিটায়ার্ড সামরিক অফিসারদের ইলেকশনের জন্য নোমিনেশন দেয়া হয়। টাকা ও পেশী শক্তির সাথে সৎ মানুষ পেরে উঠে না । এরপর প্রথমবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলে আমলারা রাজনীতিতে প্রবেশ করে। এতে সিচুয়েশন আরো খারাপ হয়। '৯৬ সালে জনতার মঞ্চ তৈরি করে আমলা ম খা আলমগীর। এই লোক পরে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রানা প্লাজা বিএনপি-জামায়াতের ধাক্কা দেয়ার কারণে ধ্বংস হয়েছে এই তত্ত্বের আবিস্কারক ম খা আলমগীর। বিএনপির দ্বিতীয় মেয়াদে স্বাধীনতা বিরোধী লোকজন গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে বাংলাদেশের সংসদে যান। জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন কেমন অনুভব করেছিলেন সেটা আল্লাহ মালুম। তাদের অনুসারীরা সেই জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের কথা বলছে এখন। সবশেষ সাংসদ হিসাবে কতিপয় অভিনেতা ও সংগীত শিল্পীকে সংসদে পাঠিয়ে মহান সংসদ ও ঝানু রাজনীতিবিদদের হাসি তামাশার পাত্র বানানো হয়েছে। এসব ভাঁড়দের কারণে মানুষ এখন রাজনীতিবিদ দের দুই টাকার নেতা মনে করে। কোনো রাজনীতিবিদের নিজস্ব ট্যালেন্ট থাকতে পারে। কিন্তু অভিনয় ও সংগীত কে ট্যালেন্ট হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে সংসদে পাঠানো হয়েছে শুধুমাত্র সস্তা জনপ্রিয়তা দেখে।
শিল্পী মমতাজ জুলাই অভ্যুত্থানের এতদিন পরে কেন গ্রেফতার হলেন ? কিভাবে এতদিন আত্নগোপনে ছিলেন তিনি ? সব কিছুই গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের ট্রিক্স ! শিল্পী মমতাজ এমন সময়ে গ্রেফতার হলেন যখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, জাতীয় সংগীত ও ৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে সমাজে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে। এনসিপি-শিবিরের মধ্যে বায়বীয় যুদ্ধ চলছে ৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে। এসব বিতর্কে যখন পুরো দেশ দুইভাগে বিভক্ত তখন জাতিকে একত্রে বিনোদন দিতে শিল্পী মমতাজ কে গ্রেফতার নাটক নির্মিত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






