
বাংলাদেশে গত বছর ৫ই আগস্ট একটা বড়ো ধরণের অভ্যুত্থান হয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার খুনে প্রশাসনের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র জনতা অভ্যুত্থানে যোগ দেয়। যে কোনো ধরণের বড়ো অভ্যুত্থানে পলিটিক্যাল পার্টি ইনভলভ থাকতেই পারে। ছাত্রদের আন্দোলনে সম্মতি জ্ঞাপন করে তাদের সাথে রাজপথে থাকলে দোষের কিছু নেই। পলিটিক্যাল ব্যানারে না আসলেই হলো ! এভাবে বাংলাদেশের অনেক বিতর্কিত দল সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে প্রবেশ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে ছাত্র আন্দোলনকে লিড দেয়। বাংলাদেশে যারা আইন্ডেন্টিটি পলিটিক্স করে তাদের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে । তারা নির্দলীয় ব্যানারে ও সাধারণ ছাত্রদের সাথে মিশে আন্দোলনের গতিকে বেগবান করেছে। তারা সাধারণ ছাত্রদের সাথে শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীত গেয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অনেক স্লোগান দিয়েছে, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে । সাধারণ ছাত্রদের সাথে তাদের কোনো বিরোধ হতে দেখা যায় নাই। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর ক্রমশ আইডেন্টিটি পলিটিক্স করা রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় সংগীত ও পতাকা নিয়ে চুলকানি শুরু হয়েছে। তারা একাত্তর প্রশ্নে বিতর্কিত পজিশনে দাড়াচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর ইন্টেরিম সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ফেইসবুক পোস্টে যারা একাত্তর সালে পাক হানাদার দোসর তাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছে। কোনো নিদিষ্ট দল কে উদ্দেশ্য করে সে এই কথা লিখেনি। কিন্তু জ্বালা পোড়া শুরু হয়ে যায় আইডেন্টিটি পলিটিক্স করা একটি দলের । তারা মাহফুজের নামে গোরুর নাম রেখে জিয়াফতের উদ্দেশ্যে জবাই দেয় ! মাহফুজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে। এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবী নিয়ে যখন গণজমায়েত হয় তখন তাদের একটি ছোট দল গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। সেখানে তারা "গোলাম আযমের বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাই নাই স্লোগান দেয় "। এরপর একটি ছোট গ্রুপ জাতীয় সংগীত গাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবীতে এনসিপি ছাড়াও গণতন্ত্রমনা ও খেলাফত পন্থী আইডেন্টিটি পলিটিক্স করা দলের লোক ছিলো। এতে যখন জাতীয় সংগীত গাইতে না দেয়ার ভিডিও ভাইরাল হয় স্বভাবতই যাদের উপর দোষ পড়ার তাদের উপরেই পড়েছে।
আয়নাঘর থেকে মুক্ত হয়ে গোলাম আযমের পুত্র আযমী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও পতাকা পরিবর্তনের দাবী জানান। জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উনার কাছে স্বৈরাচারের প্রতীক বলে মনে হয়। তাই স্বৈরাচার পতনের সাথে সাথে পতাকা পরিবর্তন করার দাবী তুলেন। পিছনে যুক্তি হিসাবে দেখানো হয় জাতীয় সংগীত গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ যিনি মুসলিমদের দেখতে পারেন না। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাননি। জাতীয় সংগীতে বাংলাদেশের নাম কোথাও নেই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পরপরই আবার একই দাবীতে সোচ্চার হয় আযমীর মতাদর্শের লোকজন। এর প্রতিবাদে অনেক জায়গায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অবদান জাতি সবসময় মনে রাখবে। কিন্তু ১৯৭১ সালের পরে আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে বিশেষত বিগত ১৬ বছর দেশ পরিচালনার সময় যে সীমাহীন অপকর্ম করেছে জাতি সেটা ভুলবে না। আওয়ামী লীগ নিজেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে যে সব কারণে সেগুলোর অমর্যাদা করতে শুরু করে। সমাজে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। যখন তাদের পতন হলো এখন খুব একাত্তর সাল কে তাদের মনে পড়ছে। সবাইকে বিগত সময়ের অপকর্ম ভুলে ১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগের উপর ফোকাস করতে বলছে । অর্থাৎ একাত্তরকে তারা কেবল এখন তাদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে। কাজ হয়ে গেলে সেই আগের অপকর্মের যুগে তারা ফেরত যাবে।
আইডেন্টিটি পলিটিক্স করা দলগুলোর আকষ্মিক পরিবর্তন আম-জনতা খুব ভালো ভাবে নিচ্ছে না। কারণ জুলাই অভ্যুত্থান কোনো '৭১ সাল কে ভুলিয়ে দিতে হয় নি বরং একাত্তর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ গড়ায় ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছিলো। ছাত্র-জনতা জানতো না যে কেউ একদিন নানা অজুহাতে জাতীয় সংগীত ও পতাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে । শেখ হাসিনার পতন ছাড়া ছাত্র-জনতার রাজপথে নামার অন্য কোনো মোটিভ ছিলো না।
পূর্বপুরুষের পাপের বোঝা বয়ে সামনে এগুতে চায় যারা তাদের জন্য একবালতি সমবেদনা। যারা তাদের পূর্বপুরুষদের খারাপ কাজকে ভালো কাজ হিসাবে প্রমাণ করতে চাইছেন তাদের কে জাতি সময় মতো লাল কার্ড দেখাবে । তাদের কাছে ৭১ লেখা সামনে আসলে প্রচুর ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কারণ তারা বাংলাদেশ কে যে ধরণের রিপাবলিক হিসাবে দেখতে চায় সাল ১৯৭১ সে পথে সবচাইতে বড়ো বাধা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


