

শিল্পী বলতে কেবল কন্ঠশিল্পী ও অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে ব্লগে আলোচনা হবে। শিল্প সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো কাজের সাথে জড়িতদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ঘটনা জানা নেই। ব্লগে ভারত ও বাংলাদেশের দুইজন শিল্পীকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি যাতে অল্প লেখায় বিষয়টা শেষ করা যায়।
শিল্পীরা রাজনীতি করলে কি সমস্যা ? কোনো সমস্যা নেই ! রাজনীতি তারা করতেই পারে। বাংলাদেশে পেশাজীবী সংগঠন গুলোর মধ্যে কড়া রাজনীতি চলে। রাজনীতিকে পেশাজীবীরা তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম হিসাবে কাজে লাগান। কিন্তু অনেক শিল্লী আছেন যারা প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতি করে সংসদে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে নেন। এর জন্য তাকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হয়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এক্ষেত্রে এক্সট্রা সুযোগ পেতে দেখা যায় কারণ তার যৌন আবেদন আলাদা ভাবে একটা বড়ো গুণ হিসাবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কন্ঠশিল্পীর তুলনায় অভিনয় শিল্পীদের সাংসদ হওয়ার রেকর্ড ভালো। রাজনৈতিক দলগুলো শিল্পীদের জনপ্রিয়তা কে কাজে লাগাতে চায় নিজ রাজনীতির স্বার্থে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষের চিন্তাভাবনা ও জীবনযাত্রা প্রভাবিত হয় সোশ্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জা দের মাধ্যমে। শিল্পীদের চেয়ে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্স বেশি করতে পারেন এমন দুইজন ব্যক্তি কেবল চোখে পড়েছে বাংলাদেশে। বিগত ১৫/১৬ বছর দেশ শাসন করা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এই বিষয়টি খুব চমৎকার ভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলো। সেজন্য তারা রিয়াজ, ফেরদৌস, মমতাজ, তারানা হালিম, আসাদুজ্জামান নূর(বাকের ভাই), কবরী, ফারুক, জায়েদ খান, নিপুণ, তারিনের মতো শিল্লীদের দলে ভিড়িয়েছে। একেতো তারা জনপ্রিয় মুখ অন্যদিকে শিল্পী হিসাবে সমাজকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা অন্য যে কারো তুলনায় বেশি ! যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে ভবিষ্যতে এমন কয়েকজন ছিলো : নুসরাত ফারিয়া, আরেফীন শুভ, দীঘি, চঞ্চল চৌধুরী ইত্যাদি।
আওয়ামী লীগের এই প্রকল্প বেশ সফল হয়েছিলো। শিল্পীদের মধ্যে যারা অল্প সময়ে বুঝতে পেরেছিলো " খেটে নয় আসলে চেটে বড়ো হওয়া যায় " তারা এমন বাম্পার অফার লুফে নিয়েছিলো। একটা সিটের আশায় তারা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ কে প্রশংসা করে আসমানে তুলে ফেলত। এতে কেউ কেউ সফলও হয়েছিলো তন্মধ্যে ফেরদৌস, কবরী, মমতাজ তারানা হালিম ও আসাদুজ্জামান নূর উল্লেখযোগ্য। নায়ক ফেরদৌস শেখ হাসিনার আমি-ডামী নির্বাচনী প্রকল্পের এমপি ছিলো। উহা ভারতীয় সার্টিফায়েড এমপি ! পশ্চিম বাংলার ইলেকশনে মমতার পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছিলো নায়ক ফেরদৌস ! উহা দেখে হয়তো শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছিলেন উহা কত বড়ো চাটুকার হইতে পারেন!
শেখ হাসিনার শেষ টার্মে " মুজিব : একজন রূপকার " নামে সরকারি খরচে ছবি বানানো হয়েছিলো। সে ছবিতে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নায়িকা নুসরাত ফারিয়া। নায়িকা মহোদয়া বুঝে গিয়েছিলেন যে চাটায় উন্নতি সেজন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে তিনি বলেছিলেন " প্রতিটি নারীর মধ্যে একজন শেখ হাসিনা বাস করেন "। খুবই অবাক হয়েছিলাম সেদিন শেখ হাসিনার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া কে দেখে। অবশ্য ফারিয়া কে এরজন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিলো। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মন খারাপ হলে নুসরাত ফারিয়া তাদের সঙ্গ দিতেন। নায়িকা ফারিয়ার অনেক গুলো স্ক্যান্ডাল ছিলো। আওয়ামী লীগ নেতা আনারের হত্যাকান্ডে উহার সম্পৃক্ততা আছে বলে ডিবি সন্দেহ করেছিলো। কলকাতায় উহারা মিলিত হইতেন। এরকম একজন নায়িকা কিভাবে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেন তাই মাথায় ধরছিলো না। আরো ক্লিন ইমেজের কাউকে আশা করেছিলাম শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। কিন্তু নেতারা মনে হয় কেবল ফারিয়া কে ম্যানেজ করতে পেরেছিলেন।
শেষ করছি ভারতের একটি ছবির কথা উল্লেখ করে। ভারতে গতবছর "Emergency " নামে ইন্দিরা গান্ধীর উপর একটা ফিলিম হয়েছিলো। এই ফিলিমে অভিনয় করেছেন নায়িকা কঙ্গনা রানওয়াত ! অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কঙ্গনা রানওয়াত বিজেপির এমপি এবং উহার একমাত্র দক্ষতা বলিউড ইন্ডাস্ট্রির খান সাহেবদের সমালোচনা করা। উহা একজন বিবাহ নায়কের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন। কঙ্গনার বড়ো গুণ হচ্ছে সে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি পছন্দ করে। অজিত দোভাল, অমিত শাহ ও নরেন্দ্রমোদি উহার চোখে আদর্শ পুরুষ যাদের অভাবে তিনি এখনো সিঙ্গেল ! কঙ্গনা রানওয়াত মাত্র ১৬ বছর বয়সে বলিউডে আসেন। অসংখ্য বিবাহিত প্রডিউসার ও নায়কদের সাথে লিভ টুগেদার করেছেন। ড্রাগ এডিক্ট ছিলেন। কিন্তু এখন বিজেপির এমপি হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। একটা কট্টোর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল কেন কঙ্গনার মতো মানুষ কে টিকিট দিলেন? কারণ কঙ্গনা খুব বোল্ড কথা বলতে পারেন। উহা বিজেপির জন্য খুবই দরকার! সে যাই হোক এমন চরিত্রের একজন মানুষ যখন ইন্দিরা গান্ধীর মতো ভারতের একজন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পায় উহা ভারতীয় দের জন্য লজ্জাস্কর !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


