
আমার জীবনে যে তিনটি শিক্ষা আমাকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে, সেগুলো আমি পেয়েছি আমার বাবার কাছ থেকে। তিনটি রাতের তিনটি ন্যুডলসের থালা আর তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা জীবনের অমূল্য সত্যগুলো আজও আমি ভুলিনি - শি জিনপিং, চীনের প্রেসিডেন্ট।
সে এক নির্ভেজাল সন্ধ্যা। শৈশবে বাড়ি ফিরে দেখি, বাবা অপেক্ষা করছেন খাবার টেবিলে। টেবিলে রাখা দুটি বাটি—উষ্ণ ন্যুডলসে ভরা। একটিতে সবার চোখে পড়ার মতো একটি সেদ্ধ ডিম শোভা পাচ্ছে ওপরে, আরেকটি নিঃসঙ্গ ন্যুডলস, ডিমহীন। বাবা বললেন, “যেকোনো একটি বেছে নাও।” আমি চোখের দেখায় লোভনীয় মনে হওয়া, ডিমসহ বাটিটাই তুলে নিলাম। তখনকার দিনে চীনে ডিম ছিল যেন সোনার ডিম—উৎসব ছাড়া সাধারণ পরিবারের তা পাওয়াই দুর্লভ। খেতে শুরু করার পর দেখি, বাবার বাটির ন্যুডলসের নিচে লুকিয়ে রয়েছে দুটো সেদ্ধ ডিম।
আমার শিশুমনে বিষাদের ঢেউ বয়ে গেল। কেন যে এমন তাড়াহুড়ো করে বেছে নিলাম! বাবা যেন সব বুঝে ফেললেন। খাওয়ার পর মৃদু হেসে তিনি বললেন, "মনে রেখো, চোখ যা দেখে, সব সময় তা-ই সত্য নয়। মানুষ বা পরিস্থিতিকে শুধু চোখে দেখে বিচার করলে অনেক সময় ভুল করবে। ঠকে যাবে। জীবন অনেক গভীর, তার সত্য বোঝা সহজ নয়।"
পরদিন আবারও সেই টেবিল, সেই দুই বাটি ন্যুডলস। আগের দিনের মতোই, একটিতে ডিম দৃশ্যমান, আরেকটি নিঃসাড়, ডিমহীন। এবার আমি অভিজ্ঞতার আলোকে বেছে নিলাম সেই বাটি, যেটিতে বাইরে থেকে কিছু নেই। ভেবেছিলাম, হয়তো এর নিচেই লুকিয়ে আছে ডিম—যেমনটা আগেরদিন হয়েছিল। কিন্তু না, এবার সত্যিই কোনো ডিম নেই !
বাবা এবারও তাকিয়ে হাসলেন। কিন্তু সে হাসির ভেতর ছিল এক গভীর বার্তা। তিনি বললেন: “অভিজ্ঞতা সব সময় সঠিক পথ দেখায় না। জীবন নিজের নিয়মে চলে। সব সময় ফলাফল আমাদের অনুমান মতো হয় না। অনেক সময় মরীচিকার পেছনে ছুটতে হয়, ভ্রম হয়, ব্যথা হয়। কিন্তু এটিই জীবন। তুমি অভিজ্ঞতা থেকে শিখবে, তবে মনে রেখো—জীবনই শেষ কথা বলে।”
তৃতীয় দিন, আবার একই চিত্রনাট্য। একই দুই বাটি। আমি এবার থেমে গেলাম। বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম : “আজ তুমি আগে নাও, বাবা। তুমি এই সংসারের কর্ণধার, এই খাবারটাও তোমারই ঘামের ফল। তোমার প্রাপ্য আগে।”বাবা কিছু না বলে নিজের জন্য একটি বাটি তুলে নিলেন। আমি নিই আরেকটি। খেতে বসে দেখি—আমার বাটির নিচে দুটো ডিম । এবার আর বিষাদ নয়, চোখে জল আসে—কৃতজ্ঞতার, শ্রদ্ধার। খাওয়ার পর বাবা আমার হাত চেপে ধরে বললেন : “জীবনের সবচেয়ে বড় ধর্ম হলো কৃতজ্ঞতা। যে দিতে জানে, তাকেই জীবন বহুগুণে ফিরিয়ে দেয়। কৃতজ্ঞ হও, দায়িত্বশীল হও। তুমি যদি জীবনে অন্যকে মূল্য দাও, অন্যকে স্মরণ রাখো, জীবনও তোমার কথা মনে রাখবে।”
চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আজ যে উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছেন, সেই পথের প্রাথমিক তিনটি সিঁড়ি ছিল এই তিন রাতের ছোট ছোট ঘটনার মধ্যেই। বাবার দেওয়া এই তিনটি শিক্ষা তিনি আজও মনে গেঁথে রেখেছেন:
১. দৃষ্টিতে ধোঁকা থাকতে পারে—চোখ যা দেখে, সব সময় সত্য নয়।
২. অভিজ্ঞতাও ভুল করতে পারে—শেষ সত্য বলে জীবন নিজেই।
৩. যা দাও, তা-ই ফিরে আসবে—কৃতজ্ঞতা আর মানবিকতা জীবনকে সমৃদ্ধ করে।
এই তিনটি শিক্ষা শুধু এক রাষ্ট্রপ্রধান নয়, যেকোনো মানুষকে গড়ে তুলতে পারে ভিত থেকে। শি জিনপিংয়ের জীবনের গল্প আমাদেরও শেখায়—কখনো শুধু দেখে নয়, কখনো শুধু পেছনের অভিজ্ঞতায় নয়—জীবন বুঝে নিতে হয় হৃদয় দিয়ে, আর সম্পর্কগুলো রচনা করতে হয় কৃতজ্ঞতা দিয়ে।
সংগ্রহীত
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



