
দৈনিক সমকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বরাতে আমরা জানতে পারি —প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই—নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক গভীর অস্বস্তির ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলছেন, এসব জায়গায় এখনো বিএনপি ঘেঁষা প্রভাব রয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বশীল পদগুলোতে নিয়োগ, বদলি ও পুনর্বিন্যাস তো এই সরকারই করেছে। সেই কর্তৃত্বের দায়ভার এখন হালকা করে দেখলে তা কেবল রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নয়, নৈতিক দায়বোধ থেকেও পলায়ন বলে প্রতীয়মান হয়।
যে সময় নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য একটি কমিশন কাজ করছিল, সেই সময়ই সংস্কারের সুপারিশপত্র হাতে পাওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠিত হলো পুরনো ছাঁচেই। কেন এমন তড়িঘড়ি? সংশ্লিষ্ট মহলগুলো পরামর্শ দিয়েছিল—আগে সংস্কারের রূপরেখা আসুক, তারপর তার ভিত্তিতে কমিশন গঠন হোক। সেই প্রজ্ঞাবান আহ্বানে কর্ণপাত না করে, এক প্রকার রাজনৈতিক সুবিধাবাদের অনুশীলনে, বিএনপি-জামাত ও তাদের ঘনিষ্ঠ মহলের সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়। আজ সেই কমিশনের ওপর ভরসার অভাবের দায় কাকে দেওয়া যাবে?
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে ‘নিরপেক্ষতা’র যে দাবি এখন করা হচ্ছে, তার ভিত্তি কোথায়? প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যে ধরণের নিয়োগ, পদোন্নতি বা বদলি হয়েছে, তা কি কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়েছে? নাকি তা হয়েছে রাজনৈতিক চাপ ও পক্ষপাতমূলক সুপারিশের ভিত্তিতে? এখন সেই কাঠামো থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা, যেন নিজের রোপণ করা বৃক্ষে অন্য কারও ফল চাওয়া। গঠন যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তবে ফলাফলও তো পূর্বনির্ধারিত।
ইউনূস সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ়তা দেখাতো, আজ এই অভিযোগের অবকাশ থাকতো না। কিন্তু সরকার বরং একপ্রকার স্থবিরতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় নিমগ্ন ছিল। এটাও প্রশ্নসাপেক্ষ—নির্বাচনের পথে হাঁটার ইচ্ছা সত্যিই ছিল কিনা, নাকি দীর্ঘমেয়াদে ‘কার্যকর’ থাকার চিন্তাই ছিল প্রাধান্যপ্রাপ্ত। এখন এসে যদি বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না—তবে এতদিন যে প্রস্তুতির নাটক চলেছে, তা কিসের জন্য?
যে রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু ইউনূস সরকার সেই পথ এড়িয়ে গিয়ে যাদের ওপর ভরসা করেছেন, আজ তাদের আচরণেই তিনি বিচলিত। সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ থেকেও তার সদ্ব্যবহার হয়নি। এই দ্বিধাগ্রস্ত নীতিনির্ধারণ এবং শ্লথ প্রশাসনিক প্রয়াস দেশজুড়ে অনিশ্চয়তার আবহ তৈরি করেছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন শুধু ফল নয়, পদ্ধতিরও প্রশ্ন। সেই পদ্ধতি যদি অবিশ্বাস্য হয়, তাহলে ফলাফলই বা কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য হবে? ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের উচিত এখন দায়িত্ব এড়ানো নয়, বরং এই প্রতিকূল পরিস্থিতির দায় স্বীকার করে সাহসিকতার সাথে করণীয় নির্ধারণ করা। অন্যথায় এই সরকারও ইতিহাসের খাতায় পরিণত হবে আরেকটি উদ্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরীক্ষার নামান্তর হিসেবে।
প্রধান উপদেষ্টার আসলে চিন্তার জায়গা টা কোথায় ? মানুষজন স্বপ্রনোদিত হয়ে ভোট দিতে যাবে না ? বিগত দশ বছর ধরে সাধারণ মানুষ তার ভোটাধিকার হতে বঞ্চিত। সবাই নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে রয়েছে । এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ড. ইউনূসের কি নিয়ে এত ভাবনায় পড়ে গেলেন ? বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না সেই ভয় ?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



