
ইন্টেরিম সরকার এবং এনসিপি ব্লক প্রায়শই অভিযোগ তুলে বিএনপি নাকি দেশের সংস্কার চায় না। বিএনপি কেবল নির্বাচন চায় ! বিএনপি আওয়ামী লীগের বিচার চায় না। বিএনপি কেবল নির্বাচন চায়। রাজনীতির ন্যুনতম বেসিক জ্ঞান থাকলে কেবল সংস্কার ইস্যুতে বিএনপিকে একতরফা দোষারোপ করা হতো না। নির্বাচনী সংস্কার করলে বা সংবিধান সংস্কার করলে দেশের আমূল পরিবর্তন হবে এমন ধারণা কোনো পোড়খাওয়া রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি ভাববেন না। দেশের ভিতরে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে বিএনপি কাউকে বাধা দিয়েছে? সরকার সবচেয়ে বেশি বাধার মুখে পড়ছে বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায় ও সরকারি চাকুরিজীবীদের। যখনই সরকার প্রতিষ্ঠান গুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য কোনো খসড়া অনুমোদন করে তখনই হাই ব্লাড প্রেসার উঠে যায় সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর !
এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সবাই কর্মবিরতিতে ! কেন এনবিআর কে দুইভাগ করা হইলো তাদের প্রমোশন, সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে তাই লাগা আন্দোলন ! ইন্টেরিম সরকার শুরু থেকেই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে গুড রিলেশন রেখে কাজ করে যেতে চাচ্ছে। এনবিআই দুইভাগ করা কি সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ ছিলো ? না ! উহা আইএমএফের পরবর্তী কিস্তিগুলো পাওয়ার একটা শর্ত ছিলো। বাজেটে সহায়তার জন্য আইএমএফের লোন খুব দরকার ! সরকার কম চেষ্টা করেনি যাতে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত না করে আইএমএফের লোন টা পাওয়া যায়। এই প্রেস্ক্রিপশন অনুসারে কাজ করে এখন ইন্টেরিম সরকার নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে। এই ক্রমাগত আন্দোলনে অর্থ উপদেষ্টা নিরুপায় হয়ে বলেছেন অধ্যদেশ জারী হওয়ার আগ পর্যন্ত এনবিআর আগের মতো চলবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা !
সচিবালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা "কালো আইন " বাতিলের জন্য বিক্ষোভ শুরু করেছেন। সরকার অধ্যদেশ জারী করেছে আত্নপক্ষ সমর্থন ছাড়াই সরকারি চাকুরি থেকে অব্যহতি দেয়া যাইবে । সচিবালয়ে আগামীকাল থেকে তালা মেরে আন্দোলন আরো জোরদার করার কথা চলছে। প্রেসক্লাবের সামনে চলছে মেডিকেল হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের আন্দোলন। তারা ছয়দফা দাবী নিয়ে মাঠে নেমেছে। মেট্রোস্টেশনের উপরে উঠে তারা খেলছে, খাওয়া দাওয়া করছে আবার আন্দোলন করছে। মেট্রোরেলের যাত্রীদের ভোগান্তি করছে তারা। এসব দাবী দাওয়া অধিকাংশ অযৌক্তিক ! এদের দাবী মেনে নিলে আরেকপক্ষ নতুন করে দাবী নিয়ে মাঠে নামবে।
আগামীকাল থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাদের কয়েকদফা দাবী আছে যা ইন্টেরিম সরকারের পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব ! প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কতকগুলো দাবী দাওয়া শুনলে অন্যান্য চাকুরীজীবীদের মাথা গরম হয়ে যাবে। ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় আসার পর তেরো গ্রেড থেকে উন্নতি করে বারো গ্রেডে তাদের বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এখন দৈনন্দিন জীবনের ব্যয় আর আয়ের মধ্যে অনেক ফারাক। সেই ২০১৪/২০১৫ সালে শেষ পে স্কেল হয়েছিলো আর খবর নাই। প্রায় দশবছর হয়ে গেছে একই বেতন এবং গ্রেড রয়ে গেছে। প্রাইমারিতে যারা চাকুরি করেন তাদের বেতন পার্শবর্তী যে কোনো দেশের তুলনায় কম। কিন্তু এই সরকার প্রাইমারীর শিক্ষকদের গ্রেড এক ধাপ উন্নতি করেছে।
সরকারের এতে ব্যয় বেড়ে যাবে ! সরকার এই রিস্ক টা নিয়েছে যাতে শিক্ষকদের মুখে হাসি ফুটে ! কিন্তু শিক্ষকদের আরো চাই । তারা প্রথমে দশম গ্রেড দাবী করেছিলো। কিন্তু অন্যান্য সরকারি চাকুরীজীবী যারা দশম গ্রেডে আছেন তাদের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। শুধু মাত্র এমসিকিউ-ভাইভা তে পাশ করে প্রাইমারীতে শিক্ষক হওয়ার নজীর আর কোথাও নাই। অন্যদিকে দশন গ্রেডে জব পেতে আপনাকে প্রিলি-লিখিত-ভাইভায় পাশ করতে হয়। এরপর এগারো গ্রেডের জন্য প্রাইমারী শিক্ষকেরা আস্তে আস্তে একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করে। তাদের আরেকটা অদ্ভুত দাবী হলো শুক্রবারের পাশাপাশি শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হবে ! বাংলাদেশের সরকারি চাকুরীজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্ধ পান প্রাথমিকের লোকজন। ইদের সময় টানা চল্লিশ দিনের মতো ছুটি কাটান তারা। তারপরও উনাদের সপ্তাহে দুইদিন ছুটি চাই। এজন্য দরকার পড়লে বিদ্যালয় বন্ধ রাখা লাগবে।
বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায় কিন্তু নিজের ডাস্টবিন কেউ সংস্কার করতে চায় না। একটা নিরীহ সরকার পেয়ে যে যেভাবে পারছে খেলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের উপর থেকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারাবে ইন্টেরিম সরকার। সবচেয়ে কঠোর দিলের হাসিনা সরকার পারেনি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে। যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দিকে যাওয়ার জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন তা সম্পন্ন করে প্রস্থান করাই উত্তম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






