somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সরকার কেন বেশিদূর এগোতে পারবে না ?

২৫ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইন্টেরিম সরকার এবং এনসিপি ব্লক প্রায়শই অভিযোগ তুলে বিএনপি নাকি দেশের সংস্কার চায় না। বিএনপি কেবল নির্বাচন চায় ! বিএনপি আওয়ামী লীগের বিচার চায় না। বিএনপি কেবল নির্বাচন চায়। রাজনীতির ন্যুনতম বেসিক জ্ঞান থাকলে কেবল সংস্কার ইস্যুতে বিএনপিকে একতরফা দোষারোপ করা হতো না। নির্বাচনী সংস্কার করলে বা সংবিধান সংস্কার করলে দেশের আমূল পরিবর্তন হবে এমন ধারণা কোনো পোড়খাওয়া রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি ভাববেন না। দেশের ভিতরে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে বিএনপি কাউকে বাধা দিয়েছে? সরকার সবচেয়ে বেশি বাধার মুখে পড়ছে বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায় ও সরকারি চাকুরিজীবীদের। যখনই সরকার প্রতিষ্ঠান গুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য কোনো খসড়া অনুমোদন করে তখনই হাই ব্লাড প্রেসার উঠে যায় সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর !

এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সবাই কর্মবিরতিতে ! কেন এনবিআর কে দুইভাগ করা হইলো তাদের প্রমোশন, সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে তাই লাগা আন্দোলন ! ইন্টেরিম সরকার শুরু থেকেই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে গুড রিলেশন রেখে কাজ করে যেতে চাচ্ছে। এনবিআই দুইভাগ করা কি সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ ছিলো ? না ! উহা আইএমএফের পরবর্তী কিস্তিগুলো পাওয়ার একটা শর্ত ছিলো। বাজেটে সহায়তার জন্য আইএমএফের লোন খুব দরকার ! সরকার কম চেষ্টা করেনি যাতে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত না করে আইএমএফের লোন টা পাওয়া যায়। এই প্রেস্ক্রিপশন অনুসারে কাজ করে এখন ইন্টেরিম সরকার নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে। এই ক্রমাগত আন্দোলনে অর্থ উপদেষ্টা নিরুপায় হয়ে বলেছেন অধ্যদেশ জারী হওয়ার আগ পর্যন্ত এনবিআর আগের মতো চলবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা !

সচিবালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা "কালো আইন " বাতিলের জন্য বিক্ষোভ শুরু করেছেন। সরকার অধ্যদেশ জারী করেছে আত্নপক্ষ সমর্থন ছাড়াই সরকারি চাকুরি থেকে অব্যহতি দেয়া যাইবে । সচিবালয়ে আগামীকাল থেকে তালা মেরে আন্দোলন আরো জোরদার করার কথা চলছে। প্রেসক্লাবের সামনে চলছে মেডিকেল হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের আন্দোলন। তারা ছয়দফা দাবী নিয়ে মাঠে নেমেছে। মেট্রোস্টেশনের উপরে উঠে তারা খেলছে, খাওয়া দাওয়া করছে আবার আন্দোলন করছে। মেট্রোরেলের যাত্রীদের ভোগান্তি করছে তারা। এসব দাবী দাওয়া অধিকাংশ অযৌক্তিক ! এদের দাবী মেনে নিলে আরেকপক্ষ নতুন করে দাবী নিয়ে মাঠে নামবে।

আগামীকাল থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাদের কয়েকদফা দাবী আছে যা ইন্টেরিম সরকারের পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব ! প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কতকগুলো দাবী দাওয়া শুনলে অন্যান্য চাকুরীজীবীদের মাথা গরম হয়ে যাবে। ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় আসার পর তেরো গ্রেড থেকে উন্নতি করে বারো গ্রেডে তাদের বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এখন দৈনন্দিন জীবনের ব্যয় আর আয়ের মধ্যে অনেক ফারাক। সেই ২০১৪/২০১৫ সালে শেষ পে স্কেল হয়েছিলো আর খবর নাই। প্রায় দশবছর হয়ে গেছে একই বেতন এবং গ্রেড রয়ে গেছে। প্রাইমারিতে যারা চাকুরি করেন তাদের বেতন পার্শবর্তী যে কোনো দেশের তুলনায় কম। কিন্তু এই সরকার প্রাইমারীর শিক্ষকদের গ্রেড এক ধাপ উন্নতি করেছে।

সরকারের এতে ব্যয় বেড়ে যাবে ! সরকার এই রিস্ক টা নিয়েছে যাতে শিক্ষকদের মুখে হাসি ফুটে ! কিন্তু শিক্ষকদের আরো চাই । তারা প্রথমে দশম গ্রেড দাবী করেছিলো। কিন্তু অন্যান্য সরকারি চাকুরীজীবী যারা দশম গ্রেডে আছেন তাদের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। শুধু মাত্র এমসিকিউ-ভাইভা তে পাশ করে প্রাইমারীতে শিক্ষক হওয়ার নজীর আর কোথাও নাই। অন্যদিকে দশন গ্রেডে জব পেতে আপনাকে প্রিলি-লিখিত-ভাইভায় পাশ করতে হয়। এরপর এগারো গ্রেডের জন্য প্রাইমারী শিক্ষকেরা আস্তে আস্তে একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করে। তাদের আরেকটা অদ্ভুত দাবী হলো শুক্রবারের পাশাপাশি শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হবে ! বাংলাদেশের সরকারি চাকুরীজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্ধ পান প্রাথমিকের লোকজন। ইদের সময় টানা চল্লিশ দিনের মতো ছুটি কাটান তারা। তারপরও উনাদের সপ্তাহে দুইদিন ছুটি চাই। এজন্য দরকার পড়লে বিদ্যালয় বন্ধ রাখা লাগবে।

বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায় কিন্তু নিজের ডাস্টবিন কেউ সংস্কার করতে চায় না। একটা নিরীহ সরকার পেয়ে যে যেভাবে পারছে খেলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের উপর থেকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারাবে ইন্টেরিম সরকার। সবচেয়ে কঠোর দিলের হাসিনা সরকার পারেনি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে। যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দিকে যাওয়ার জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন তা সম্পন্ন করে প্রস্থান করাই উত্তম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০০
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×