জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম চ্যুতি ঘটিয়েছেন ড. ইউনূস নিজের হাতে। বিশ্ববাসীর কাছে জুলাই অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে মাহফুজ আলম কে পরিচয় করিয়ে দেয়া ছিলো জুলাই স্পিরিটের মুখে চপেটাঘাত। ড.ইউনূসের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করে। তিনি নিজেই এনসিপির প্রতিষ্ঠাতা এই সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। ইন্টেরিম সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে ছাত্রদের নিয়োগ ছিলো আরো বড়ো ভুল ডিসিশন। ফোর্স হিসাবে ব্যবসায়ী এবং আমলাদের শায়েস্তা করতে পাঠানোর কারণে ছাত্রদের চরিত্র নষ্ট হরে শুরু করে। যে কাজ আইনশৃংখলা বাহিনী করার কথা সেই কাজ ছাত্রদের দিয়ে করানো হয়েছে। ছাত্ররা এই বিশাল সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত হয়ে নিজেরাই সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। তারা তদবীর বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এভাবে ছাত্রদের সুন্দর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে ।
ইন্টেরিম সরকার বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে ছোটন গ্যাং এর প্রেস্ক্রিপশনে। এই সরকারের পাওয়ার সেন্টার এককেন্দ্রিক নয়। ইন্টেরিমের একটা অংশ জামায়াত-ছোটন গ্যাং-আম্লিক দ্বারা প্রভাবিত। এরা চায় ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে জামায়াতে ইসলামী- নায়েবে আমীর ।। এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় জামায়াত কি পরিমাণ সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে ইন্টেরিম সরকারের সময়ে। শিক্ষাঙ্গন থেকে ব্যাংক সব কিছু আজ তাদের দখলে। যে নাবিল গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকেত এগারো হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে সেই নাবিল গ্রুপ জামায়াতের সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথি। এই সরকার যে জামাতীদের সরকার তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাজাকারের নতুন সংজ্ঞা প্রণয়নের মাধ্যমে। তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধপরাধের সাথে জড়িত ছিলো। এই তৎকালীন শব্দটি পূর্বের সংস্করণে ছিলো না। ইহার মাধ্যমে বর্তমান জামায়াত কে দায়মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । ১৯৭২ - ১৯৭৫ সালে আম্লিকের কার্যক্রম নিয়ে যদি এখনো সমালোচনা হয় এবং তার দায়ভার যদি বর্তমান আম্লিক কে নিতে হয় জামায়াতের জন্য একই কথা প্রযোজ্য।
ছাত্র(শিশু) উপদেষ্টাদের বিতর্কিত কর্মকান্ডের দায় ইন্টেরিম সরকার এবং প্রধান উপদেষ্টাকে নিতে হবে- বিএনপি নেতা কায়কোবাদ। ছাত্র উপদেষ্টা বিশেষ করে আসিফ মাহমুদের ধৃষ্টতার মাত্রা অনেক আগেই রেড লাইন ক্রস করেছে। উহা যেখানেই হাত দিয়েছে সেখানেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেনাপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টার বিরোধের আগুনে উহা ঘি ঢেলেছে। সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে উহার চাপাবাজি ও গুজব ছড়ানোর কার্যক্রম ছাত্র-জনতাকে আম্লিক শাসন আমলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হয়ে বহুরূপী হিজবুতি কাম আম্লিক নেতা এজাজ কে উহা সুপারিশ করেছে ঢাকা উত্তর জেলার প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়ার জন্য। ছাত্রদের দল এনসিপিও চাপাবাজি ও গুজব ছড়ানোতে পিছিয়ে নেই। তারা ইয়ং জেনারেশন কে মোটিভেট করছে বট একাউন্ট খুলে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা চালাতে। আর তাদের এই কাজে ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছে একজন ব্রাহ্মণ্ পীর। এনসিপির দাবী দাওয়া যেন শেষ হয় না। দেশে একটা করে নতুন ঘটনা ঘটে এনসিপির খাতায় নতুন দাবী যুক্ত হয়। অথচ তাদের নিবন্ধন নেই কিন্তু প্রটোকল পাচ্ছে সরকারি দলের মতোই।
ইন্টেরিম সরকার কে আম্লিক ও তাদের সাপোর্টাররা দেখতে পারে না। বাকি আছে বিএনপি। কিন্তু ইন্টেরিম সরকারের পাওয়ার সেন্টারের কতিপয় অংশ বিএনপির সাথে পাঙ্গা নিতে চায়। এদের সাথে যোগ দিয়ে আনঅফিসিয়াল ভাবে জামায়াতে ইসলামী। সেনাবাহিনীর সাথেও পাঙ্গা নিতে চায় এই গ্রুপ। কিন্তু তারা ভুলে গেছে সেনাবাহিনী ও বিএনপি ইন্টেরিম সরকারের টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনী ও বিএনপিকে ক্ষেপিয়ে দীর্ঘদিন অনির্বাচিত ভাবে ক্ষমতা ভোগ করে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইন্টেরিম সরকারের নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা মূলত ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার একটা কৌশল। প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে বিদেশে গিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন উহা শেখ হাসিনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা যেমন বলতেন কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন একই প্রতিধ্বনি এখন ইন্টেরিমের বক্তব্যে পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টেরিমের একটি অংশ কনসেন্ট ম্যানুফাকচারিং করে তা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করছে। এভাবে বড়ো বড়ো শক্তিকে নিজেদের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছে সরকার ।
ইন্টেরিম জামায়াত-এনসিপির প্রেমে এতই হাবুডুবু খাচ্ছে যে তাদের কাছে মনে হচ্ছে উহারাই তাদের আধার ঘরের আলো। ইন্টেরিমের এমন পক্ষপাতিত্ব স্বভাবতই বিএনপিকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। তারা ধীরে ধীরে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। মূলত বিএনপির চাপে পড়ে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণায় বাধ্য হয়েছে সরকার। কিন্তু বিএনপির নেতা তারেক রহমানের সাম্প্রতিক সময়ের কঠোর বক্তব্য নিয়ে সরকারের মধ্যে অস্বস্তি কাটছে না। হালকা চাপেই সরকারের যদি এমন অবস্থা হয় চাপ বাড়লে নির্বাচন ডিসেম্বর আসতে সময় লাগবে না। তবে বিএনপি ডিসেম্বর না হলেও ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি নির্বাচন দিলে মেনে নিবে। কিন্তু ইন্টেরিম কে অবশ্যই জাতির সামনে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন বেশি সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেয়া সম্ভব নয় ? রাজনৈতিক দলগুলো দাবী করছে বাকি যে সময় আছে তার মধ্যে যাবতীয় সংস্কার সম্ভব। কিন্তু সরকার জামায়াত-এনসিপি বাদে কারো কথা গুরুত্ব দেয় বলে মনে হয় না। আবার ব্যাখ্যাও দিতে পারে না। কয়েকদিন আগে সিপিডিও বলেছে প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে হলে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই।
লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে ড.ইউনূসের কি নিয়ে বৈঠক হতে পারে ? নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে ইহা নিশ্চিত। বিএনপি ফেব্রুয়ারীর মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পক্ষে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করতে পারে। ড. ইউনূস চাইলে এই সুযোগে বিএনপির সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারেন সরকারের। প্রধান উপদেষ্টা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ব্রেক করে বিগত দশমাসে যেসব নতুন ব্যবসা বাণিজ্য খুলেছেন উহার সুরক্ষা চাইতে পারেন ক্ষমতার সবচাইতে কাছাকাছি থাকা দলের ভবিষৎ প্রধানের কাছ থেকে। সংস্কারের কিছু অমীমাংসিত অংশ নিয়ে কথা হতে পারে। বন্দর ও করিডোর নিয়ে বিএনপি যাতে বিরোধিতা না করে তার জন্য প্রফেসর স্যার আলাপ আলোচনা করতে পারেন। আরেকটা সম্ভাবনা আছে তা হলো এনসিপি-জামায়াত কে বিরোধী দল হিসাবে সংসদে প্রবেশ করানোর জন্য কিছু আসন ছাড় দেয়ার ব্যাপারে। দেশের রাজনীতিতে উহা ওপেন সিক্রেট কিন্তু বিএনপি নাকি রাজি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে তারেক রহমানের সাথে সরাসরি কথা বলে যদি কিছুটা নমনীয় করা যায় মন্দ হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:১৬