মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা দাবী করেছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সময়ের হামলার পিছনে ইরানের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটতে পারে। অর্থাৎ ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ক্ষমতায় যাওয়া খোমিনী গং দের পতন ত্বরান্বিত করতেই ইসরায়েল(আসলে আমেরিকার) আয়োজন।
ইরানের বর্তমান রেজিম বড্ড চাপের মুখে পড়ে যায় যখন সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ বিপ্লবের মুখে(আমেরিকা-ইসরায়েলের যৌথ প্রযোজনায়) রাশিয়ায় প্লেন করে পালিয়ে যায়। ইরান ও হিজবুল্লাহ শিয়া মতের অনুসারী ও আসাদের গুড এলাই হওয়ার কারণে এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব ধরে রাখার জন্য বাশার আল আসাদ কে সিরিয়াতে সর্বশক্তি দিয়ে ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছিলো। দীর্ঘদিন ধরে এই কাজে তারা সফল হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিচুয়েশন চেঞ্জ হতে শুরু করে। সিআইএ'র ট্রেনিং প্রাপ্ত বিপ্লবী নেতা আল- শারাআ ও তার বাহিনী দেশের ভিতর থেকেই তুরস্ক,ইসরায়েল ও আমেরিকার সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর সহায়তায় বাশার আল আসাদ কে পরাজিত করে।
ইরানের উপর পশ্চিমাদের চাপ ছিলো যাতে পারমাণবিক অস্ত্র বানানো থেকে তারা সরে আসে। এইজন্য বারবার তারা ইরানের ভিতরে ডিপ স্টেটের সহায়তায় পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। ইরান এসব ক্ষেত্রে তেমন প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিতে পারে নাই। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের জন্য বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিজ দেশে বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে ক্রমাগত সুযোগ সংকুচিত হতে থাকে। ফলে নিজ দেশের ভিতর জনগণ ইরানের প্রেজেন্ট রেজিমের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। মুসলিম(ওভারঅল) দেশ গুলোর মধ্যে ইরানের বিবাহ-বিচ্ছেদ সবচাইতে বেশি। এর পিছনে দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ার কারণটাই প্রধান হিসাবে গবেষণায় উঠে এসেছে। পাশাপাশি ইরানের বর্তমান রেজিমের বিরুদ্ধে মানবাধিকার-নারী অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। নোবেল বিজয়ী মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদী ত্রিশ বছরের সাজা নিয়ে খোদ ইরানে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। তাই বলা যায় জনগণের মোটামুটি একটা বড়ো অংশ খোমেনী রেজিমকে আগের মতো সাপোর্ট করে না। খোমেনী সরকার ইরানের জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার ও পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি বেশি মনোযোগী হতে দেখা গিয়েছে ।
অনেকদিন থেকেই গুঞ্জন ছিলো পশ্চিমারা ইরানের পলাতক কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থাকে আমেরিকা প্রস্তুত করছে ইরানের খোমেনী রেজিমের পতন ঘটলে সেখানে গিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য দায়িত্ব নিতে। এর মধ্যে সাবেক ইরানি শাহ(রেজা পাহলভি)'র পুত্র রেজা পাহলভী অন্যতম। সিআইএর তত্ত্বাবধানে উহাকে ভবিষ্যতে ইরানের হাল ধরার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া ইরানের প্রথম অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী(মেহদি বাজারগান), ইরানের সাবেক সেনাবাহিনীর ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের সদস্য ও PMOI/MEK(Mujahedin-e-Khalq) সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীদের ভবিষ্যতের জন্য রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা কবে ইরানের খোমেনী রেজিমের পতন ঘটে ! সেটা আজ কাল বা আরো দশবছর পরে হলেও হবে। আরেকটা বিকল্প হতে পারে খোমেনী গং দের কে আরো উদার ও দূর্বল করে ফেলা হতে পারে। ক্ষমতায় আকড়ে থাকতে খোমেনী গং হয়তো পশ্চিমাদের পছন্দ অনুযায়ী সন্তুষ্টিমূলক চুক্তি করতে পারে। তবে পশ্চিমাদের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তারা রেজিম চেঞ্জের প্রতি বেশি আগ্রহী!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৫ রাত ২:২৭