জুলাই মাস। এই মাসটি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের মাস। আর আজ পহেলা জুলাই—এই দিনে হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছে প্রভাস আমিনের ছবি। লোকটা এখন কোথায়? কেউ বলেন ভারতে, কেউ বলেন সুইস ব্যাংকের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। তবে একথা নিশ্চিত, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে যারা ‘তেল দেওয়া-নেওয়া’-র কায়দা-কানুনে সিদ্ধহস্ত, প্রভাস আমিন ছিলেন তাদেরই একজন।
শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সগুলো ছিল এক অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার। এখানে বাংলার নারীরা লাইফ হ্যাক শিখতেন, আর সাংবাদিকরা শেখ হাসিনাকে তেল দিতেন। কিন্তু প্রভাস আমিন? তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। একঝাঁক তৈলাক্ত সাংবাদিকের ভিড়ে তিনি হঠাৎ করেই ‘গান্ডু মার্কা’ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। সেটা ছিল ৫৬% কোটা পুনর্বহালের উত্তাল সময়। প্রভাস সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, “চাকরি পাওয়ার যোগ্য কারা—মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতি, নাকি রাজাকারের ?”
শেখ হাসিনা উত্তরে বললেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা যদি চাকরি না পায়, তাহলে কি রাজাকারের পাবে?” কথাটা শুনে প্রভাস আমিনের মতো ‘বিচক্ষণ’ সাংবাদিকের মুখে হাসি ফুটে উঠল। কারণ, তিনি জানতেন, এই উত্তরের মধ্যে লুকিয়ে আছে আওয়ামী লীগের ‘কোটার রাজনীতি’—যেখানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চেয়ে ‘ভুয়া সনদধারী’দের সংখ্যাই বেশি।
কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল টেম্পোরারি—২০১৮ সালের নির্বাচনী সিনেমার একটি দৃশ্য মাত্র। ২০২৪-এ ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগ বুঝে গেল, প্রশাসনে ‘জী হুজুর’ বলবে এমন লোক দরকার। আর এখানেই এসে গেল তথ্য প্রতিমন্ত্রী কুমড়ো পটাশ (ওরফে আরাফাত) এর গোয়েন্দা রিপোর্ট। তিনি শেখ হাসিনাকে বোঝালেন, “মেধাবীরা বিপদজনক, এরা জী হুজুর নাও বলতে পারে!” ফলে কোটা পুনর্বহাল হলো, আর শিক্ষার্থীদের উপর পড়ল মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি—এসবের মধ্যেই কোটা সংস্কারের নামে চলল শুধু ‘লুটেরা ব্যবস্থা’কে পাকাপোক্ত করা।
প্রভাস আমিন আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করছেন। কেউ বলছেন তিনি ভারতে, কেউ বলছেন ‘মব লিঞ্চিং’ এর ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। আসল কথা হলো, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করতে গেলে দু’টি জিনিস লাগে: তেল দেওয়ার দক্ষতা ও ‘গান্ডু মার্কা’ প্রশ্ন করে পালানোর স্পিড। প্রভাস আমিন দ্বিতীয়টিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কিন্তু সমস্যা হলো, স্বৈরাচারের আমলে ‘তেলবাজি’ না করলে যে চাকরি যায়, আর ‘গান্ডু মার্কা’ প্রশ্ন করলে যে পলায়ন করতে হয়—এটাই বাংলাদেশের সাংবাদিকতার করুণ দশা।
আজ পহেলা জুলাই। এই দিনে আমরা শুধু প্রভাস আমিনকে স্মরণ করছি না, স্মরণ করছি সেই ব্যবস্থার পতনকে —যেখানে মেরিটে চাকুরি চাইলেই ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ট্যাগ লাগে, আর তেল দিলেই সাংবাদিকের ক্যারিয়ার নিরাপদ। প্রভাস আমিন যদি সত্যিই ভারতে পালিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা বলব: “ভাগ্যবান আপনি ! কারণ, বাংলাদেশে থেকে গেলে হয়তো আজ আপনাকে ‘মবের আদর’ পেতে হতো।”
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭